শিল্প স্থাপনের প্রাথমিক পর্বে নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে কার্পাস বস্ত্র-বয়ন শিল্প উন্নতি লাভ করে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই অঞ্চলে কার্পাস-বয়ন শিল্পের গুণগতমান ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। পরবর্তীকালে, 1920 খ্রিস্টাব্দের পর নিউ ইংল্যান্ডের পুরােনাে গৌরব প্রায় সম্পূর্ণরূপে হ্রাস পায়। এই অঞ্চলে শিল্পের এই ক্রমাবনতির কারণগুলি হল নিম্নরূপ一

[1] নগরায়ণের প্রসার : এই অঞ্চলে ক্রমাগত নগরায়ণের ফলে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় জমির অভাব দেখা দেয় এবং যেসব জমিগুলি অবশিষ্ট থাকে সেই জমিগুলির মূল্য এত বৃদ্ধি পেয়ে যায় যে শিল্প গঠন অত্যাধিক ব্যয় বহুল হয়ে পড়ে।

[2] প্রাচীন যন্ত্রপাতি : এই অঞ্চলের মিলগুলিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির কোনাে আধুনিকীকরণ না হওয়ার দরুন পুরাতন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে উৎপাদিত দ্রব্যাদির পরিমাণ ও গুণগত মান ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে।

[3] শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি : শ্রমিকের মজুরি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বস্ত্রের উৎপাদন ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, যা নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের প্রতিকূলে কাজ করে।

[4] অন্যান্য শিল্পের উন্নতি : কার্পাস বয়ন শিল্পের পরিবর্তে নিউ ইংল্যান্ডে ধাতব শিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, রাসায়নিক শিল্প এবং মুদ্রণ শিল্প বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করে।

1920 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বস্ত্রশিল্প দ্রুত উন্নতি লাভ করে এবং পরবর্তীকালে এই অঞ্চলটি শ্রেষ্ঠ বস্ত্র বয়ন শিল্পাঞ্চল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই অঞ্চলের শিল্পের উন্নতির প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ

[1] উৎকৃষ্ট মানের তুলো উৎপাদন : দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে উৎপাদিত তুলাের গুণগত মান খুব ভালাে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এখানে বস্ত্র বয়ন শিল্প উন্নতি লাভ করেছে।

[2] আর্দ্র জলবায়ু : আটলান্টিক উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থানের জন্য এখানে সর্বদা উয় ও আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে, এই ধরনের জলবায়ুতে সুতাে ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং সুতি বস্ত্রের চাহিদাও বেশি হয়।

[3] কাঁচামালের পর্যাপ্ত জোগান : দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে প্রচুর পরিমাণে তুলাে উৎপাদন হওয়ার ফলে এইসব অঞ্চলে কার্পাস-বয়ন শিল্পের জন্য কাঁচামালের অভাব হয় না।

[4] চাহিদা : দক্ষিণের রাজ্যগুলির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এই অঞ্চলে সুতিবস্ত্রের বিপুল চাহিদা বা বাজার সৃষ্টি করেছে, যা দক্ষিণাঞ্চলের কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির একটি অন্যতম হাতিয়ার।

[5] শ্রমিক : ঘন বসতির কারণে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে শ্রমিকের প্রাচুর্য রয়েছে। শিল্পায়নের আদি পর্বে এখানকার কলগুলিতে নিযুক্ত নিগ্রো শ্রমিকদের মজুরির হার ছিল কম, তেমনই শ্রমিকদের কাজের সময়ও ছিল বেশি।

[6] শক্তি সম্পদের প্রাচুর্য : দক্ষিণ অ্যাপেলেশিয়ানের কয়লা এবং উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত খনিজ তেল শিল্পকেন্দ্রগুলিতে শক্তির চাহিদা পূরণ করে। এ ছাড়া এখানে অসংখ্য ছােটো ছােটো খরস্রোতা নদী থেকে উৎপন্ন সুলভ জলবিদ্যুৎ শিল্প স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করে।

[7] স্বল্পকর : নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের একটি প্রধান সুবিধা ছিল স্বল্পকর। এখানে করের হার ছিল খুবই কম এবং অনেক ক্ষেত্রে এই শিল্পে আকর্ষণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানগুলিকে বেশ কয়েক বছর করের বােঝা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

[8] আধুনিক যন্ত্রপাতি : অত্যাধুনিক সজ্জিত যন্ত্রপাতির ব্যবহার দক্ষিণাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতিকল্পে প্রধান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।