কবির না-পারা বিষয়: কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় তার স্বদেশপ্রেম এবং সমাজচেতনার স্বাক্ষর রেখেছেন। কবির মনে হয়েছে, অস্থির সময়ের সামাজিক অস্থিরতায় বিপন্ন মানুষের দুঃখে দেশমাতা কাঁদছেন। চোখের সামনে কবি দেখেন তার ভাইয়ের মৃতদেহ এবং জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ। শাসকের এই অন্যায়-অত্যাচার বর্বরতার হাত থেকে মুক্তি পেতে কবি কি বিধাতার সুবিচারের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন? এটাই তিনি পারেন না, কারণ, আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন নিয়তিনির্ভরতা প্রকাশ পায়, তেমনই প্রকাশিত হয় আত্মশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবও। মানুষের অধিকার যখন বিপন্ন হয় তখন বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ আর থাকে না। এমনকি রাষ্ট্রশক্তি যখন নিজের নিরঙ্কুশতাকে প্রকাশ করতে তার নখ-দাঁত বিস্তার করে তখন ঈশ্বরের কাছে ন্যয়বিচার চেয়ে বসে থাকা আসলে অনাবশ্যক সময়-ব্যয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

কবির এ কথা বলার কারণ : আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাওয়া একদিকে যেমন ঈশ্বরনির্ভরতার প্রকাশ ঘটায়, তেমনই অন্যদিকে তা আত্মশক্তির অভাব ও অসহায়তাকেও নির্দেশ করে। মানুষের অধিকার যখন বিপন্ন হয়, বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ যখন আর থাকে না, এমনকি রাষ্ট্রশক্তি নিজেকে নিরঙ্কুশ করতে যখন তার নখ-দাঁত বিস্তার করে—তখন ঈশ্বরের কাছে ন্যায়বিচার চেয়ে বসে থাকা আসলে অনাবশ্যক সময় নষ্ট। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ এবং সহানুভূতিশীল কবি তাই চেয়েছেন অত্যাচারীর আনুগত্য বর্জন করতে। এক-একটি অবাঞ্ছিত সামাজিক ঘটনা বা মানবিক লাঞনা কবির মধ্যে তাই তীব্র ক্রোধের জন্ম দেয়। তার কাছে এই ক্রোধই হয়ে ওঠে সমাজের প্রতি ভালােবাসা, দায়বদ্ধতা আর মূল্যবােধের প্রকাশ। প্রতিবাদী কবিতায় কবি জাগিয়ে তুলতে চান নিজের বিবেককে। আধ্যাত্মিকতা বা বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নয়, কবি চান তার কবিতাকে প্রতিবাদের অস্ত্র করে তুলতে।