‘আমার মন’ প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর অন্তর্ভুক্ত। সমগ্র পুস্তকখানির রচনাভঙ্গিতে যে বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায় তা এই রচনাটিতে বিদ্যমান।

‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর রচনাগুলি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধরনের রচনা। এদের ঠিক সাধারণ প্রবন্ধের পর্যায়েও ফেলা যায় না, আবার গল্পের শ্রেণিভুক্তও করা চলে না। এগুলি উভয় শ্রেণির মাঝামাঝি স্থান অধিকার করে আছে। তবে এইগুলিতে প্রবন্ধধৰ্ম্মই প্রধান। প্রবন্ধকার জানবার ও ভাববার কথা গুছিয়ে বলেন, এ রচনাগুলিতেও তা করা হয়েছে। কেবল বক্তব্য বিষয়কে সরস করবার জন্য কিছু গল্পের রস মিশ্রিত করা হয়েছে। পুরোপুরি গল্পরূপে এ রচনাগুলি গণ্য হতে পারে না কেননা গল্পের প্রয়োজনীয় ঘটনার গতি ও চরিত্রের বিকাশ এখানে নেই। বস্তুত ঘটনাও এতে বিশেষ কিছু নেই। আফিংখোর ব্রাহ্মণরূপে-কল্পিত কমলাকান্ত রসিকতায় সঙ্গে দেশ, সমাজ, রাজনীতি অর্থনীতি, মানবচরিত্র প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করে গিয়েছেন। তাঁর চিন্তা ও মতামতই রচনার উপজীব্য বিষয়। পাঠকের মনে কৌতুহল জাগ্রত করবার জন্য কৌতুররসমিশ্রিত গল্পের সাহায্যে প্রবন্ধের নীরসতা দূর করবার চেষ্টা করা হয়েছে।

আফিংখোর কমলাকান্তের মনে হয়তো ইংরেজ লেখক ডি. কুইন্সির “কনফেশন অফ অ্যান ইংলিশ ওপিয়ান-ইটর”-এর কথা বঙ্কিমচন্দ্রের মনে এসে থাকতে পারে। “স্পেকটেটর” পত্রিকার স্যার রোজার কভারলিকে অবলম্বন করে যে জাতীয় রচনা প্রকাশিত হত, ‘দপ্তর’ অনেকটা সেই জাতীয় রচনা। কিন্তু ‘দপ্তরে’র প্রবন্ধাবলিভাবে ও রচনাভঙ্গিতে সম্পূর্ণ মৌলিক ও নূতন।

‘দপ্তর’-এ বলা হয়েছে যে কমলাকান্তের লেখাগুলি পেয়ে ভীষ্মদেব খাশনবীশ উহা প্রকাশ করেন। এটিও কল্পিত। কমলাকান্তের উক্তিসমূহ আপাতদৃষ্টিতে খামখেয়ালি ধরনের এবং হাস্যপরিহাসপূর্ণ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ওই হাসির অন্তরালে অনেক গভীর চিন্তা নিহিত আছে।