রচনা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের প্রত্যেক পরীক্ষাতে রচনা
লিখতে হয়। তেমনি একটি বিষয় আমার প্রিয় শখ রচনা পরীক্ষায় লিখতে আসে। আমি আমার
কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আমার প্রিয় শখ রচনা বিস্তারিতভাবে লিখার
চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় আমার প্রিয় শখ রচনা লিখবে আমার আর্টিকেল
তাদের জন্য।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমি তোমাদের জন্য আমার প্রিয় শখ
রচনা  বিস্তারিত ভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি তোমরা যদি
পরীক্ষায় এই  আমার প্রিয় শখ রচনা লেখ তাহলে তোমরা বেশ ভালো নম্বর
পাবে। নিচে আমার প্রিয় শখ রচনা বিস্তারিতভাবে লেখা হলো-

পোস্ট সূচি পত্রঃ আমার প্রিয় শখ রচনা 

ভূমিকা

শখ বলতে বোঝায় মানুষের কোন প্রিয় কাজকে যা মানুষ প্রয়োজনে নয় ভালোবেসে করে।
এই কাজ আমাদের নিত্যদিনের কাজকর্মের মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম নয়। শখ শব্দের
আভিধানিক অর্থ হল কোন কাজের প্রতি আগ্রহ বা ঝোঁক। একজন মানুষ অবসর সময় আনন্দ
লাভের জন্য যেসব কাজ করে থাকে তাকে বলা হয় শখ। আর মানুষ আনন্দ লাভের জন্য তার
ব্যক্তিগত পেশার কাজ নয়, বিশেষ ধরনের কাজ করে থাকে।

আর এই বিশেষ ধরনের কাজকে বলা হয় শখ বা শখের কাজ। প্রত্যেকটা মানুষের শখের বিষয়
থাকে ভিন্ন ভিন্ন। যেমন কেউ বাগান করতে ভালোবাসে, কেউ বই পড়তে ভালোবাসে, কারো শখ
সেলাই করা তেমনি আমার প্রিয় শখ হল বই পড়া। আমি একজন ছাত্র তাই আমি আমার পাঠ্য
বইয়ের পাশাপাশি আমার শখের বই সংগ্রহ করতে এবং পড়তে ভালোবাসি।

বিভিন্ন শখের ধরন

আমাদের এই পৃথিবীতে অনেক ধরনের লোক রয়েছে। তবে সবার অভ্যাস এবং রুচি একরকম নয়।
ব্যক্তি ভেদে পছন্দ এবং শখও আলাদা হয়। কারো শখ বাগান করা, কেউ ডাক টিকিট সংগ্রহ
করে, কেউ ছবি আঁকে, কেউ ঘুড়ি উড়াই, কেউ পত্র মিতালী করে, তেমনি আমার প্রিয় শখ
হলো বই পড়া। অবসর সময়ে কাজ করাই হলো শখের কাজ।

কেন আমার প্রিয় শখ

বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা আমার খুব ছোটবেলা থেকেই ছিল। ছোটবেলায় আমি যখন স্কুলে
পড়তাম তখন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে নিস্তব্ধ দুপুরে পাঠ্য বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে
থাকতাম কারণ তখন আমি ছাত্র আয় করতে শিখিনি। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে আমি
ভালোবাসি। একবার জন্মদিন উপলক্ষে বাবা আমাকে কিছু বই উপহার দেন আর এই বই পড়ার পর
থেকে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। আমি পৃথিবীর অজানাকে জানতে ভালোবাসি।

আরো পড়ুনঃ  কর্ণফুলী টানেল – বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা

বই পড়লে মানুষ কল্পনার জগতে এত দূরে যেতে পারে যে, বাস্তবে হয়তো সে কখনোই
সেখানে পৌছতে পারে না। আর বই পড়ার মাধ্যমে কল্পনার জগতে পৌঁছতে আমি অনেক আনন্দ
লাভ করি। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে বই পড়ার মাধ্যমে চিনতে পারি।
বই পড়ার মাধ্যমে আমি যেমন পুরো  পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারি, ঠিক তেমনি
বিভিন্ন জায়গার মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারি। আর এসব কারণেই বই পড়া আমার
প্রিয় শখ।

শখের প্রয়োজনীয়তা

কোন মানুষই একঘেয়েমি কোন কাজ করতে পারেনা তাই প্রতিটি মানুষের জীবনে আনন্দ উপভোগ
করা বা অবসর যাপন করা প্রয়োজন। আর মানুষ সবচেয়ে বেশি আনন্দ উপভোগ করে শখের
কাজের মাধ্যমে। শখ মানুষকে দেয় আলাদা আলাদা উৎসাহ ও উদ্দীপনা। আর এই কর্মব্যস্ত
জীবনে মানুষ আনন্দ উৎসাহের জন্যই সব করে থাকে। শখের কাজ করতে গিয়ে মানুষ
আবিষ্কার করেছে নতুন নতুন বিষয়। আবার নতুন বিষয় আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ কখনো
কখনো অমর হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়।

কি ধরনের বই ভালো লাগে

সাধারণত আমি সব ধরনের বই পড়ে থাকি। তবে সেই বইয়ের লেখনি যদি সুন্দর এবং
শ্রুতিমধুর না হয় তাহলে সেই বই পড়তে আমার ভালো লাগেনা। যদি লেখনি ভাল হয় তাহলে
যে কোন বই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তবে সব ধরনের বইয়ের মধ্যে আমি ভ্রমণ কাহিনী এবং
ঐতিহাসিক বই পড়তে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। ঐতিহাসিক কাহিনী আমায় নিয়ে যায়
অতীতকালের স্বপ্নের দেশের রাজার কুমার ডালিম কুমারের কাছে।

আর এই ধরনের বই পড়লে যেমন ইতিহাস সম্বন্ধে জানা যায় তেমনি অতীতের রাজ্যে ও
বিচরণ করা যায়। তবে আমার বিশেষভাবে প্রিয় হল শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা
ঐতিহাসিক কাহিনী। ভ্রমণ কাহিনী মূলক বই পড়লে পৌঁছে যাওয়া যায় পৃথিবীর নানান
দুর্গম প্রান্তে। ভ্রমণ কাহিনী পৌঁছে দেয় বিভিন্ন রোমাঞ্চকর মুহূর্তে। এ ছাড়াও
আমি যে ধরনের বই পছন্দ করি তা হলো – বিজ্ঞান বিষয়ক গল্প, গোয়েন্দা গল্পসহ আরো
মজার বই। এছাড়া ও ফেলুদা উপন্যাস, সত্যজিৎ রায়ের লেখা প্রফেসর শঙ্কর আমার খুব
প্রিয়।

আমার প্রিয় একটি বই

আমার প্রিয় শখ হল বই পড়া। আর আমি যতই বই পড়ি না কেন সব থেকে আমার প্রিয় বই হল
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা অ্যাডভেঞ্চার মূলক ভ্রমন উপন্যাস চাঁদের পাহাড়।
এই বইটি আমার এত প্রিয় যে আমি এই বইটি অগণিত বার পড়েছি। এই বইটি যতবার পড়ি
আমার মনে হয় নতুন করে যেন পড়ছি। এই বইটি আমি যতবারই পড়ি না কেন কল্পনার
মাধ্যমে আমি পৌঁছে যেতে পারি আফ্রিকার বন জঙ্গল, ঝর্ণাধারা এমনকি গুহার ভেতরে।

আমার বন্ধুরা ও এই বই পড়েছে তাদেরও অনেক ভালো লেগেছে। এই বইয়ে আমার প্রিয়
চরিত্র হলো শংকর এবং আলভারেজ। আমাদের সব সময় প্রেরণা যোগায় আলভারেজের আদম্য
সাহস এবং প্রখর বুদ্ধি।

বই উত্তম বন্ধু

এই পৃথিবীতে যত বন্ধুই থাকুক না কেন সবচেয়ে উত্তম বন্ধু হলো বই। বই পড়লে এক
দিকে যেমন মানসিকতার উন্নতি হয়, তেমনি লেখনের ধারার ও উন্নতি হয়। বিভিন্ন ধরনের
বই পড়ার জন্য আমি আমার পরীক্ষার খাতায় গুছিয়ে উত্তর লিখতে পারি যার কারণে আমার
পরীক্ষার মান ভালো হয়। আর পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বাবা-মা সহ শিক্ষক সবাই
আমাকে খুব স্নেহ করে। আমি বুঝতে পেরেছি বই পড়ার কারণে আমার পড়াশোনার উন্নতি
হয়েছে।

আমার শখের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আমার প্রিয় শখ হলো বই পড়া। আর এই শখ নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। ছোটবেলা
থেকে আমি যতগুলো বই পড়েছি আমি সবগুলো বই জমিয়ে রেখেছি। আমার জমানো বইগুলো আমি
এতটাই ভালবাসি যে, আমার জমানো বইয়ে আলমারি ভর্তি হয়ে গেলেও এই বইগুলো আমার
চোখের সামনে থেকে সরাতে ইচ্ছে করে না। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আমি বড় হয়ে
একটি গ্রন্থাগার তৈরি করতে চাই।

আরো পড়ুনঃ  নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানুন

সেই গ্রন্থাগারে থাকবে শুধু আমার জমানো বই। একটি ঘরে আমি গ্রন্থাগার বানাবো আর
সেই ঘরে থাকবে একটি টেবিল এবং একটি চেয়ার যাতে করে আমার অবসর সময় বই পড়ে
কাটাতে পারি। আমার শখ হল আমি আমার লাইব্রেরী কে এমন ভাবে সাজাবো যেন আমি বই পড়ে
আমার স্বপ্নের রাজ্যে পৌঁছে যেতে পারি।

বই পড়ার উপকারিতা

আমার প্রিয় শখ বই পড়া আর এই বই পড়া শখ থেকে আমি কি পরিমান উপকার পেয়েছি তা
বলে শেষ করা যায় না। আমি শুধু বই পড়ি তা নয়, বই পড়ার পাশাপাশি আমি খেলাধুলা ও
করি। আর এই খেলাধুলার অনুপ্রেরণা পেয়েছি বই পড়ার মাধ্যমে। বই আমাকে নতুন নতুন
কত কিছুর সন্ধান দিয়েছে তা আমি বলে শেষ করতে পারবো না। বই পড়ার মাধ্যমে আমি
বিভিন্ন দেশ ও জাতি সম্বন্ধে জানতে পেরেছি।

যে কোন বিষয়ে আমি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি। আগে আমি আলোচনা সভায় তেমন কোন
কিছু উপস্থাপন করতে পারতাম না, এখন আমার কাছে সেসব বিষয় অনেক সহজ হয়েছে।
মা-বাবা ভাই-বোন সহ আত্মীয় স্বজনদের সাথেও আমি সহজ ভাবে মিশতে পারি।

শখের বিবরণ

আমার সেলফে আমি প্রথমে আমার পাঠ্য বই রাখি। তারপরে সেলফ গুলোতে আমি আমার শখের বই
গুলো সাজিয়ে রাখি। আমার প্রিয় শখ হলো বই পড়া আর এই কথা জানতে পেরে আমার
আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব আমাকে বই উপহার দেয়। যার কারণে দিনে দিনে আমার
বইয়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

উপসংহার

বই পড়া যদিও আমার জীবনে প্রিয় শখ এর পরেও বই আমার জীবনের একটি অবিছেদ্দ অংশ।
পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি আমি অন্যান্য বই পড়তে অনেক ভালোবাসি। তবে আমাদের মনে
রাখতে হবে, যে কোন বিষয় নিয়ে মাতামাতি করা উচিত নয় সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।
তবে আমরা আমাদের জীবনের উন্নতি করতে পারব এবং সফলতা অর্জন করতে পারব।