অথবা, আমলাতন্ত্র কী?
অথবা, আমলাতন্ত্রের কাকে বলে?
ভূমিকাঃ আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিসেস ধারণা একটি সর্বজনীন ধারণা। বিশ্বের প্রায় সকল সরকার ব্যবস্থাই কোনাে না কোনাে রকম আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এটি সর্বস্থানে এবং সর্বকালেই বহুল আলােচিত বিষয়। সুতরাং আমলাতন্ত্রের ধারণা একটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা এবং যা ব্যাপক আলােচনার দাবিদার। পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তনশীল। কোনাে কিছু স্থির নয়। বিজ্ঞানের এই সূত্রের সত্যতা সমাজবিজ্ঞানের বিকাশেও বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
শাব্দিক অর্থে আমলাতন্ত্রঃ ইংরেজী Bureaucracy শব্দটি ফরাসী শব্দ Bureau এবং গ্রিক শব্দ Kratia থেকে উদ্ভূত। Burau শব্দের অর্থ দপ্তর এবং Kratia শব্দের অর্থ শাসন। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত অর্থে আমলাতন্ত্র হলাে দপ্তরনির্ভর সরকার।
আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞাঃ আমলাতন্ত্রের কোনাে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া কঠিন। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দষ্টিকোণ থেকে আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে আমলাতন্ত্রের কয়েকটি মতামত তুলে ধরা হলােঃ
Max weber সর্বপ্রথম তার লেখনীর মাধ্যমে আমলাতন্ত্রকে আধুনিককালের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হন। তিনি আমলাতন্ত্রের কোনাে নির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করেননি। তিনি মূলত তিনটি বৈশিষ্ট্যের সংগে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
প্রথমত, আমলাতান্ত্রিক সংস্থা বা সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে প্রয়ােজনীয় নিয়মিত কার্যাবলিকে অফিসের দৈনন্দিন কর্তব্যরূপে নির্দিষ্ট করে রচনা করা।
দ্বিতীয়ত, উক্ত দায়িত্ব প্রতিপালনের জন্য প্রয়ােজনীয় নির্দেশ প্রদানের কর্তৃত্ব স্থায়ীভাবে বণ্টন করা এবং বেষ্টিত ক্ষমতা এক-একজন কর্মচারির ওপর ন্যস্ত করা।
তৃতীয়ত, নিয়মিত এবং অব্যবহিতভাবে এ সমস্ত দায়িত্ব পালন এবং সংশ্লিষ্ট অধিকার কার্যকর করার নিমিত্তে পদ্ধতি ও বিধি প্রণয়ন এবং কর্মের যােগ্য ব্যক্তিদের নিয়ােগ করা। ওয়েবারের মতে, এই তিনটি উপাদান সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ব গড়ে তােলে।
অধ্যাপক ফিকনার এবং প্রেসমাসের ভাষায়-আমলাতন্ত্র হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং তাদের কার্যাবলীকে এমন একটি পদ্ধতিতে সংগঠিত করা যা সুসংগঠিত সুসংহতভাবে গােষ্ঠীশ্রমের উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়।
সুতরাং আমলাতন্ত্র বলতে কর্মকর্তাগণের এক বৃহদায়তন সংগঠকেই বুঝায় যারা জটিল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সুব্যবস্থিতভাবেই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উন্নয়নশীল দেশগুলাের সামগ্রিক উন্নয়নে আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ধারায় মানুষের কাজের পরিধিও বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে সরকারের কাজের পরিধিও ব্যাপক আকার ধারণ করে জটিল হয়ে ওঠছে। তাই আধুনিক রাষ্ট্র আমলাতন্ত্র ছাড়া কল্পনা করা যায় না।
Leave a comment