আবদুল্লাহ উপন্যাস
উত্তর: কাজী ইমদাদুল হকের (১৮৮২-১৯২৬) আবদুল্লাহ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট উপন্যাস। সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের সাথেই এর একমাত্র তুলনা চলে। কাজী ইমদাদুল হক ‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাসের ৪১টি পরিচ্ছেদের মধ্যে ৩০টি পরিচ্ছেদ রচনার পর জীবনের পরপারে পাড়ি দেন। তার খসড়া অনুযায়ী বাকি ১১টি পরিচ্ছেদ রচনার কাজ সমাপ্ত করেন ‘আমাদের দুঃখ’ নামক গ্রন্থের রচয়িতা আনোয়ারুল কাদির। গ্রন্থপাঠ থেকে স্পষ্টই অনুভব করা যায় যে, এর দুটি অংশ দুই লেখকের লেখা। ৩১ থেকে ৪১ পর্যন্ত পরিচ্ছেদ যে আনোয়ারুল কাদিরের রচনা তা স্পষ্ট হয়ে যায়; এই অংশের ১-৩০ পরিচ্ছেদ পর্যন্ত বিস্তৃত অংশটির সাথে দুই লেখকের দু’রকম দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়ের মাধ্যম। ইমদাদুল হক মূলত সমাজ চিত্রকর এবং আনোয়ারুল কাদির মনস্তাত্ত্বিক। সেজন্য দেখা যায় শেষের পরিচ্ছেদগুলোতে ইমদাদুল হকের আদর্শ প্রচারক মানুষগুলোর মধ্যে প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস পেয়েছেন। উপন্যাসটিতে সে যুগের বাংলার মুসলিম সমাজজীবনের এক বিশ্বস্ত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। এ উপন্যাসে সমাজের নানা সংস্কার ও ত্রুটিবিচ্যুতিকে লেখক সংস্কারপন্থি ও সংস্কারকামীদের দ্বন্দ্বের বিষয়ে পরিণত করেছেন। সেখানে পরস্পরের মধ্যে আদর্শের সংঘাত পরিলক্ষিত হয়। নবীনের সাথে প্রবীণের দ্বন্দ্ব, প্রাচীনের সাথে নতুনের দ্বন্দ্ব, যা মানবসমাজের চিরন্তন দ্বন্দ্ব বলে অভিহিত হওয়ার যোগ্য। ইমদাদুল হক তার উপন্যাসে এর সার্থক প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
আবদুল্লাহ, আবদুল কাদের ও হালিমা এরা নবীন দলের মুখপাত্র এবং আবদুল্লাহ এ দলের মূর্তিমান নায়ক। আবদুল্লাহর শ্বশুর সৈয়দ সাহেব প্রাচীনপন্থি আচারসর্বস্ব দলের শক্তিশালী প্রতিনিধি। লেখক সৈয়দ সাহেব ও তার কন্যা সালেহা প্রমুখের প্রাচীনপন্থি ও আচার সর্বস্বতাকে বিদ্রূপ করেননি, অথচ তিনি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়ে তৎকালীন যুগ-কাল ও পরিবেশের চিত্র সার্থকভাবে অঙ্কিত করেছেন। হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়টিও অত্যন্ত উদারতা ও সাম্প্রদায়িক সহনশীলতার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অঙ্কন করেছেন। এসব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, কাজী ইমদাদুল হকের ‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে থাকবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment