[1] প্রথম পর্যায় (১৮০০-১৮৭০ খ্রি.)
-
ওলন্দাজদের উপনিবেশ: ওলন্দাজ বণিক শক্তি বহু আগেই উত্তমাশা অন্তরীপ (কেপ কলােনি ও কেপ অব গুড হােপ) দখল করেছিল। পরে ওলন্দাজরা কেপ কলােনি ইংরেজদের বিক্রি করে দিলে তা ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে লিমপােপাে নদী পর্যন্ত সুবিস্তৃত অঞ্চলে ওলন্দাজদের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। এই অঞ্চলের মধ্যে ওলন্দাজদের নতুন উপনিবেশগুলি। ছিল—নাটাল, অরেঞ্জ নদী উপত্যকা অঞ্ল এবং ট্রান্সভাল।
-
পাের্তুগিজদের উপনিবেশ: ব্যাবসাবাণিজ্য অপেক্ষা লুঠতরাজের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই পাের্তুগিজরা আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তােলে। এই পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনটি পাের্তুগিজ উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল—গিয়ানা উপকূল, শােফালা এবং অ্যাঙ্গোলা।
[2] দ্বিতীয় পর্যায় (১৮৭০-১৯১৪ খ্রি.)
-
বেলজিয়ামের উপনিবেশ: ইতিপূর্বে বেলজিয়ামরাজ দ্বিতীয় লিওপােল্ড-এর উদ্যোগে গঠিত আন্তর্জাতিক আফ্রিকা সংঘ আফ্রিকায় অভিযান শুরু করে। আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলের আবিষ্কর্তা স্ট্যানলিকে সামনে রেখে বেলজিয়ামের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে কঙ্গোয় গঠিত হয় কঙ্গো ফ্রি স্টেট’। কঙ্গোর এই অঞ্চলে বেলজিয়ামরাজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় (১৮৮৪ খ্রি.)।
-
ফ্রান্সের উপনিবেশ: এই পর্বে ফ্রান্স একে একে টিউনিস, চাঁদ (কঙ্গো নদীর দক্ষিণ উপকূলবর্তী অঞ্চল), সেনেগাল, দাহােমির, গিনি, মরক্কো (উত্তর আফ্রিকা), মাদাগাস্কার দ্বীপ, সােমালিল্যান্ডের একাংশ, সমগ্র সাহারা এবং কঙ্গো নদী ও আইভরি কোস্টের মধ্যবর্তী অঞ্চল দখল করে নেয়।
-
পাের্তুগালের উপনিবেশ: পাের্তুগালও আফ্রিকায় উপনিবেশ দখলের প্রতিযােগিতায় নামে। প্রথমেই পাের্তুগাল কঙ্গোর দক্ষিণ উপকূলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তারা আফ্রিকার পশ্চিম এবং পূর্ব উপকূলে যথাক্রমে অ্যাঙ্গেলা ও মােজাম্বিক নামে দুই অঞ্চলের দখল নেয়। অ্যাঙ্গোলার নাম হয় পাের্তুগিজ পশ্চিম আফ্রিকা, মােজাম্বিকের নাম হয় পর্তুগিজ পূর্ব আফ্রিকা।
-
ইংল্যান্ডের উপনিবেশ: আফ্রিকার উত্তরে কায়রাে থেকে দক্ষিণে উত্তমাশা অন্তরীপ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত স্থানই ইংল্যান্ড দখল করে নেয়। ওলন্দাজদের কাছ থেকে কেপ কলােনি কেড়ে নিয়ে তারা উত্তর দিকের নাটাল, অরেঞ্জ এবং ট্রান্সভাল অঞ্চলগুলির দখল নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অঞ্চলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে ব্রিটিশরা ইউনিয়ন অব সাউথ আফ্রিকা গঠন করে (১৯১০ খ্রি.)। পরবর্তী সময়ে উত্তর মিশর, সুদান, উগান্ডা, বেচুয়ানাল্যান্ড, রােডেশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলের ওপর ইংল্যান্ড নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব আফ্রিকা ছাড়াও জাম্বিয়া, সিয়েরা লিয়ন, গােল্ড কোস্ট, নাইজিরিয়া ও সােমালিল্যান্ডের একাংশও ইংল্যান্ডের অধিকারে আসে। আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদের পর জিব্রাল্টার, এডেন, সকোট্রা, জাঞ্জিবার এবং কেপটাউন ইত্যাদি অঞ্চলে ব্রিটিশরা নৌঘাঁটি নির্মাণ করে। পরবর্তীকালে সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকা অধিকার করে ইংল্যান্ড সেখানে শ্বেতাঙ্গ শাসনের প্রবর্তন ঘটায়।
-
জার্মানির উপনিবেশ: বিসমার্কের আমলে জার্মানি একে একে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা, ক্যামেরুন ও টোগােল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চল দখল করে।
-
ইটালির উপনিবেশ: লােহিত সাগরে অবস্থিত ইরিত্রিয়া এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে উপস্থিত সােমালিল্যান্ড ইটালি নিজের দখলে আনে। পরবর্তীকালে বেনিটো মুসােলিনি অবশ্য আবিসিনিয়াকে ইটালির সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের কাছ থেকে ইটালি ত্রিপােলি অঞ্চল দখল করে নেয়।
-
স্পেনের উপনিবেশ: আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে রিও-ডি- ওরাে প্রদেশ এবং জিব্রাল্টারের বিপরীতে আফ্রিকার উপকূলের কয়েকটি স্থানে স্পেন তার উপনিবেশ গড়ে তােলে।
[1] ইউরােপীয় সভ্যতার বিস্তার: ইউরােপীয় দেশগুলি আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তােলার পর সেখানে ইউরােপীয় সভ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটে। অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকা ধীরে ধীরে আধুনিক সভ্যতা-সংস্কৃতির আলােক স্পর্শ করে।
[2] ভৌমিক অখণ্ডতার অবলুপ্তি: উনিশ শতকের শেষ পাদ থেকে শুরু করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত আফ্রিকার প্রায় সমগ্র ভূভাগের ওপরে ইউরােপীয়দের আধিপত্য কায়েম হয়। আবিসিনিয়া, লিবিয়া এবং দক্ষিণে ট্রান্সভাল প্রজাতন্ত্র ছাড়া আফ্রিকার অন্য সমস্ত অঞ্চলগুলি ইউরােপীয়রা দখল করে নেয়।
[3] ইউরােপীয়দের অন্তর্দ্বন্দ্ব: আফ্রিকার উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে ইউরােপীয় দেশগুলির মধ্যে প্রবল অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মিশর এবং সুদান দখলকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে, মরক্কোকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে, টিউনিস অঞ্চলের দখল নিয়ে ফ্রান্স ও ইটালির মধ্যে বিবাদ বাধে।
[4] আফ্রিকার পরাধীনতা: আফ্রিকা জুড়ে ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠায় আফ্রিকাবাসী স্বাধীনতা হারায়। শুধু তাই নয় এখানকার মানুষদের বন্দি করে নিয়ে গিয়ে ইউরােপ-আমেরিকার বাজারে দাস হিসেবে বিক্রি করা শুরু হয়।
উপনিবেশ স্থাপনের কারণ ও নয়া উপনিবেশবাদের কয়েকটি কুফল লেখাে।
ব্রিটিশের উপনিবেশ বিস্তারের কাহিনি সম্পর্কে লেখাে।
পশ্চিমিশক্তিগুলি কর্তৃক এশিয়া মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখাে।
Leave a comment