প্রশ্নঃ আপীল, রিভিউ ও রিভিশন বলতে কি বুঝ? কি কি কারণে একটি ডিক্রী বা আদেশ রিভিউ করা যেতে পারে? রিভিউ-এর আবেদন মঞ্জুর অথবা অগ্রাহ্য হলে এর বিরুদ্ধে আপীল চলে কি?

What do you mean by appeal, review, and revision? On what grounds a decree or order may be reviewed? Is an order allowing or disallowing a review appealable?

আপীলঃ সাধারণত কোন আদালতের রায় বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অসন্তুষ্ট পক্ষ কর্তৃক তা বাতিল বা সংশোধনের জন্য উচ্চতর আদালতে মেমোরেণ্ডাম আকারে আবেদন করাকে আপীল বলে। [নগেন্দ্র বনাব সুরেশ ৩৬সি ডব্লিউ এন ৮০৩] ভারতীয় আদালত আপীল সম্পর্কে আরো বলেছেন যে, এটা হচ্ছে, নিম্ন আদালতের ডিক্রী বাতিল করার জন্য আইনে প্রদত্ত একটি প্রতিকার।

আপীল একটা স্বতন্ত্র মোকদ্দমা নয়, মূল মামলার এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাই আপীল কোর্টের ডিক্রী, মূল মামলার ডিক্রী হিসেব গণ্য হয়। দেওয়ানী কার্যবিধিতে আপীলের সংজ্ঞা দেয়া নাই। কিন্তু ৯৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, বিপরীত মর্মে অন্য কোথাও কিছু বলা যায় না থাকলে আদি এখতিয়ার (Original jurisdiction) প্রয়োগকারী আদালত কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যেক ডিক্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতাপ্রাপ্ত আদালতে আপীল করা যাবে।

রিভিউঃ কোন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ পক্ষের আবেদনক্রমে সেই আদালত কর্তৃক পুনরায় বিবেচনা করাকে রিভিউ বলে। দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৪ ধারা এবং ৪৭ আদেশে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান রয়েছে। সকল রায় বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ করা যায় না। (ক) যে ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল চলে কিন্তু আপীল করা হয় নি, (খ) যে ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল চলে না, এবং (গ) স্বল্প এখতিয়ার আদালতের রেফারেন্স অনুযায়ী গৃহীত সিদ্ধান্ত এর বিরুদ্ধে রিভিউ এর আবেদন করা যায়।

রিভিশনঃ ‘রিভিশন’ সম্পর্কে ১১৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অধঃস্তন কোন আদালত যে মামলা নিস্পত্তি করেছেন এবং যে নিস্পত্তির বিরুদ্ধে কোন আপীল চলে না, সেক্ষেত্রে হাইকোট বিভাগ উক্ত মামলার নথি তলব করতে পারেন এবং যদি প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত অধঃস্তন আদালত-

(ক) আইনত তার যে এখাতিয়ার নেই, তা প্রয়োগ করেছেন অথবা, 

(খ) এখতিয়ার প্রয়োগে অপারগ হয়েছেন, অথবা, 

(গ) এখতিয়ার বেআইনীভাবে বা অনিয়মিতভাবে প্রয়োগ করেছেন; তবে সে মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ যথোপযুক্ত আদেশ দিতে পারেন।

যে সকল কারণে কোন মোকদ্দমার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ এর আবেদন করা যায় তা হলো নিম্নরূপঃ

১. কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উদ্ঘাটনঃ আবেদনকারী যদি এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারে, যা মামলার রায়ের পূর্বে সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও তার গোচরীভূত হয় নি, অথবা যা তিনি আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন নি, তবে তিনি রিভিউ এর আবেদন করতে পারেন।

২. নতুন সাক্ষ্যের উদ্ঘাটনঃ রিভিউ এর জন্য আবেদনকারী পক্ষ যদি আদালতের সন্তুষ্টি সাধনে এই মর্মে বক্তব্য পেশ করতে পারেন যে, তিনি এমন কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যের উদঘাটন করেছেন, যা রায় প্রদানের পূর্বে তার জানা ছিল না এবং সে সাক্ষ্য বিবেচনা করলে হয়ত রায় পরিবর্তিত হতে পারতো তবে তার রিভিউ এর আবেদন গ্রহণ করা যায়।

৩. নথিপত্রে দৃশ্যত ভুলঃ আদালতের নথিপত্রে কোনরূপ ভুল বা ভ্রান্তি দৃশ্যমান হলে এবং এর ভিত্তিতে কোন রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করা হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষুব্ধ ব্যক্তি রায়টি রিভিউ করার জন্য আদালতে আবেদন পেশ করতে পারে। এটা অবশ্য কোন তথ্যের ভুলের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়, তা আইনের ও হতে পারে। এটা অবশ্যই এমন ভুল হতে হবে যা শুধু রেকর্ডটি পর্যালোচনা করলেই পরিলক্ষিত হতে পারে ।

৪. অন্য কোন পর্যাপ্ত কারণঃ পর্যাপ্ত কারণ বলতে কোন নির্দিষ্ট অজুহাতের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ ও সম্পর্কযুক্ত পর্যাপ্ত বা যথেষ্ট কারণকে বুঝায়।

আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, রিভিউ করার মত পর্যাপ্ত কারণ নেই, তবে আদালত রিভিউ এর আবেদন সরাসরি নাকচ করে দিতে পারেন। আপীলের বিধান থাকলে আপীল দায়ের করার পূর্বেই রিভিউ এর আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রায়, ডিক্রী বা আদেশের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে রিভিউ করার জন্য আবেদন পেশ করতে হবে। রিভিউ এর আবেদন পেশ করার পর আপীল দায়ের করা যেতে পারে, কিন্তু একবার আপীলের শুনানি রিভিউ আর অগ্রসর হতে পারে না। আবার রিভিউ এর আবেদন গৃহীত হলে এবং একটি নতুন ডিক্রী দেয়া হলে আপীলের আর শুনানি চলবে না, কেননা যে ডিক্রীর বিরুদ্ধে আপীল করা হয়েছে তা নতুন ডিক্রী দ্বারা রদ্ করা হয়েছে।

পুনঃবিবেচনা মঞ্জুর বা অগ্রাহ্য হলে তার বিরুদ্ধে আপিল চলে কিনাঃ পুনঃবিবেচনার আবেদন মঞ্জুর হলে তার বিরুদ্ধে আপিল চলে কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হলে আপিল চলে না।