যুবকেরাই এই একটি দেশের কর্ণধার তারাই পারে দেশের মেরুদন্ডকে টিকিয়ে রাখতে। তাইতো যুবকদের কর্মকান্ডকে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ ১২ই আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্ব এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে থাকে।
জাতিসংঘ ২০০০ সালের ১২ ই আগস্ট যুব দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। নিচে আন্তর্জাতিক যুব দিবস – কবে পালিত হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো –
আন্তর্জাতিক যুব দিবস
জেগে ওঠো হে যুবক, ঘুমিও না আর।
অনেক দায়িত্ব আছে তোমার এ বিশ্ব মাঝার।
চোখ খোলো চেয়ে দেখো এ সমাজ কোথায় যাচ্ছে চলে,
প্রতিরোধ তোমায় করতে হবে সংগ্রাম আপন বলে।
বিশ্বব্যাপী যুবক তথা তরুণদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছর ১২ ই আগস্ট যুবকদের উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালন করা হয়। এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের সমস্ত যুবককে প্রভাবিত করা এবং তাদের প্রাসঙ্গিক সমস্যা গুলি সমাধান করার জন্য যুবকদের সচেতন করে গড়ে তোলা। ২০০০ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখে যুব দিবস পালন করা হয়।
যুব দিবস পালনের প্রধান স্লোগান হল “তারুণ্যের নাগরিক সম্পৃক্ততা”। প্রতিটি দেশেরই যুবকই হল সেই দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৩0 ভাগই হলো যুবক। সমাজ এবং রাষ্ট্র গঠনের জন্য যুবকদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আর এই জন্যই প্রতি বছর সারা বিশ্বে এই যুব দিবস পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের ইতিহাস
১৯৬৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক যুব দিবসের সূচনা হয়। এই আন্তর্জাতিক যুব দিবসকে আবার গ্লোবাল ইয়ুথ সার্ভিস ডে GYSD বলা হয়। আবার এই আন্তর্জাতিক যুব দিবস যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিত “ন্যাশনাল ইউথ সার্ভিস ডে” নামে। এটি একটি সমন্বিত বার্ষিক ইভেন্ট যা স্বেচ্ছায় বিশ্বব্যাপী যুবকদের জনক পালিত হয়। তরুণ সমাজকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তরুণ সমাজের জন্য একটি দিবসের সূচনা করা হয়। বিশ্বের সকল যুবকদের পারস্পরিক শান্তি, শ্রদ্ধা এবং জনগণের স্বার্থে সঠিকভাবে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই দিবসকে অনুমোদন করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস -রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
আর ১৯৬৫ সাল থেকে এই দিবসের সূচনা হয় তবে বিভিন্ন সময় প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই দিবস ১৯৯৯ এর ১৭ই ডিসেম্বরে এসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে যুবকদের জন্য সুপারিশ গ্রহণ করে। আর এই ভাবেই জন্ম হয় আন্তর্জাতিক যুব দিবসের। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ১২ই আগস্ট থেকে এই দিবসটিকে যুবকদের জন্য যুব দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর এরপর থেকেই সারা বিশ্বে প্রতিবছর ১২ ই আগস্ট যুব দিবস পালন করা হয়ে থাকে। পুরো বিশ্বব্যাপী যুবকদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা, অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকরী সম্পদ হিসেবে এবং দেশের হাতিয়ার হিসেবে যুবকদের ব্যবহার করা হয়।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসে থাকে যুবকদের কমিউনিটি সার্ভিস, যুব ভয়েস এবং সার্ভিস লার্নিং। যুবকদের কমিউনিটি সার্ভিস বলতে বোঝানো হয়ে থাকে যুবক থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে যখন প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ যুবককে পরিণত হয়। তারা যৌবনের পদার্পণ করলে দেশের জন্য প্রাণশক্তি হয়ে ওঠে। আর লার্নিং সার্ভিস হলো একটি শিক্ষামূলক পদ্ধতি যা যুবকরা তাদের বাস্তবসম্মত এবং প্রগতিশীল জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার আলোকে পরিসেবার সাথে শিক্ষার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। স্বতন্ত্র ধারণা এবং মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞান বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ হিসেবে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের প্রবক্তা বা উদ্যোক্তা
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের প্রবক্তা হল আমেরিকার দ্বারা পরিচালিত হার্সে চার্লস স্টুয়ার্ট মট ফাউন্ডেশন, অল টেস্ট ফাউন্ডেশন এবং সোডেক্স ফাউন্ডেশন এই তিন স্পন্সর শিপ এর অবদানে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হয়। বর্তমানে পুরো বিশ্বে দুই হাজার ২০০০ টিরও বেশি যুব সংগঠন অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক যুব দিবসের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংস্থা গুলোর মধ্যে রয়েছে – ইউনাইটেড স্টেট কনফারেন্স অফ মেয়র, হেরিটাস ফর হিউম্যানিটি, উড ম্যান অফ দা ওয়ার্ল্ড, গ্লোবাল ইউথ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, পয়েন্টস অফ লাইট ফাউন্ডেশন, ইয়োথ সার্ভিস আমেরিকা সহ বিভিন্ন সংস্থা স্বীকৃতি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস নিয়ে মনীষীদের মত
আন্তর্জাতিক যুব দিবস বা গ্লোবাল ইউথ সার্ভিস ডে সম্পর্কে বলতে গিয়ে কফি আনান বলেন – ” স্বেচ্ছা সেবকেরা আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান অংশীদারিদের মধ্যে কিছু এবং গ্লোবাল ইয়োথ সার্ভিস ডে তাদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠদের প্রচেষ্টাকে উদযাপন করে”। জেন গুড অল বলেছেন – ” আমি প্রায়শই বলেছি যে, প্রতিটি ব্যক্তি গণনা করে, প্রতিটি ব্যক্তির ভূমিকা পালন করতে হয় এবং প্রতিটি ব্যক্তি একটি পার্থক্য তৈরি করে”।
আরো পড়ুনঃ শিশু দিবস কি – ১৭ ই মার্চ – জাতীয় শিশু দিবস সম্পর্কে জেনে নিন
বাংলাদেশের মোট জলের সংখ্যার এক তৃতীয় অংশ হলো যুবক যুবতী এবং সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যুবক যুবতীর সংখ্যা তবে এদের অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে
বিশ্ব যুব দিবস ২০২৪
বিশ্ব যুব দিবস বা আন্তর্জাতিক যুব দিবস সারা বিশ্বে প্রতিবছর আগস্ট মাসের ১২ তারিখে পালন করা হয়ে থাকে। তবে ইয়ুথ সার্ভিস ডে বা আন্তর্জাতিক যুব দিবসের বিভিন্ন ইভেন্ট রয়েছে আর এই ইভেন্ট ২০২৪ পালিত হবে এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত।
জাতীয় যুব দিবস বাংলাদেশ
বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার যুবক-যুবতী হল এক তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশে এখন তরুণ-তরুণী রয়েছে পাঁচ কোটিরও বেশি। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যদি বাংলাদেশেও ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে গণনা করা হয় তাহলে এর সংখ্যা বাংলাদেশে প্রায় ১১ কোটি যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ। আর এই ৭০ শতাংশ জনসংখ্যা কে আধুনিক, প্রযুক্তিগত এবং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা একান্ত প্রয়োজন। আর এদের যদি শিক্ষিত করতে পারা যায় তবেই বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের তাৎপর্য
২০০০ সালের ১২ ই আগস্ট থেকে জাতীয় যুব দিবস পালন করে থাকে। এই দিবসে তরুণদের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ মনোনীত একটি বিশেষ দিন। এই দিবসে তরুণরা মুখোমুখি বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে। তবে আন্তর্জাতিক যুব দিবসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে এগুলো হল –
টেকসই উন্নয়ন
বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আর একটি দেশের উন্নয়ন তখনই টেকসই হয় যখন সেই দেশের যুবসমাজ শিক্ষিত যুব সমাজের পরিণত হয়। আর আন্তর্জাতিক যুব দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য হলো টেকসই উন্নয়ন অর্থাৎ যুবকদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং তাদেরকে স্বীকৃতি প্রদান করা। লার্নিং সার্ভিস অর্থাৎ শিক্ষার মাধ্যমে যুবকদেরকে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা।
অনুপ্রেরণা
আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালনের অন্যতম তাৎপর্য হলো যুবকদেরকে বিভিন্ন অবদান এবং কৃতিত্ব মূলক কাজে অনুপ্রাণিত করা এবং তাদের স্বপ্ন এবং আবেগ অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা।
স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ
আন্তর্জাতিক যুব দিবসের অন্যতম তাৎপর্য হলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা যাতে করে আমাদের যুব সমাজ নাগরিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে এবং সু নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আর এই দিবসটি তাদেরকে মনে করিয়ে দেয় তাদের একটি নিজস্ব কণ্ঠস্বর রয়েছে এবং তারা তাদের এই কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে বিশ্ব গঠনে একটি পার্থক্য দেখাতে পারবে।
ক্ষমতায়ন
আন্তর্জাতিক যুব দিবস আমাদের তরুণ সমাজের পরিবর্তনে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। তরুণদেরকে জীবনের বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা এবং সংস্থান সহ প্রয়োজনীয় বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে থাকে।
শেষ কথা
আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালনে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে। কারণ এই দিবসটি তরুণদের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। একটি তরুণ তাদের ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত, সমর্থন গ্রহণের প্রক্রিয়া, তাদের বর্তমান, অতীত, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন বিশ্ব তৈরীর ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে থাকে। তাইতো কবির ভাষায় বলতে হয় –
তোমায় নিয়ে এ সমাজে রয়েছে কত আশা,
তুমি যুবক তোমার ওপর সকলেরই ভরসা।
Leave a comment