প্রশ্নঃ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল আলোচনা কর অথবা কিসের সমন্বয়ে মানবাধিকার আন্তর্জাতিক বিল গঠিত? প্রধান প্রধান সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকার আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের সাথে অন্য কোন সৃষ্টির তুলনা হয় না। সকল ধর্মগ্রন্থেই মানুষকে সকল সৃষ্টির সেরা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সেই মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সমাজে বা রাষ্ট্রে যেমন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তেমনি দেশের বাইরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল আলোচনা কর
অথবা কিসের সমন্বয়ে মানবাধিকার আন্তর্জাতিক বিল গঠিতঃ
মানবাধিকার ঘোষণায় মানুষের বিভিন্ন সুবিধার বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। যেমনঃ মতপ্রকাশ করা স্বাধীনতা, নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস, সম্পত্তি অর্জন করার অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার, বিবাহ করার অধিকার, জাতীয়তা ধারন করার অধিকার, সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার অধিকার, স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার, রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের অধিকার ইত্যাদি।
এরপরও এক মানুষ অন্য মানুষের অধিকার হরণ করে বা নষ্ট করে। যারফলে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। এই কারণে ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা’ উপলব্ধি করে মানবাধিকার বিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মানবাধিকার কমিটি ১৮ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। পক্ষ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এমন দেশের নাগরিক নিয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন কিছু ব্যক্তিদেরকে এই সদস্যদের মধ্যে বিবেচনা করতে হবে।
প্রত্যেকটি পক্ষ রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ দুইজনকে নির্বাচন করবে। সকল পক্ষ রাষ্ট্রের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কমিটির সদস্য নির্বাচিত হবে। এক রাষ্ট্র থেকে একজন নির্বাচত হতে পারবেন। এদের মেয়াদকাল হবে চার বছর।
প্রধান প্রধান সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকারঃ নিম্নে মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক বিলের প্রধান প্রধান সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকার উল্লেখ করা হলো-
(১) সমান অধিকার : ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতি, নারী, পুরুষ, রাজনৈতিক আদর্শ ইত্যাদির পার্থক্য থাকলেও সকলে সমান অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করবে। [অনু-২]
(২) জীবন রক্ষার অধিকার : প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা থাকবে। [অনু-৩]
(৩) দাস প্রথা নিষিদ্ধ : কোন ব্যক্তিকে দাসত্বে বা গোলামীতে আবদ্ধ রাখা যাবে না। [অনু-৪]
(৪) আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার : আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান অধিকার ভোগ করবে। [অনু-৭]
(৫) মৌলিক অধিকার লংঘন হলে প্রতিকারের অধিকার : সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক অধিকার লংঘন হলে তার বিরুদ্ধে প্রত্যেকের আইনী প্রতিকারের অধিকার থাকবে। [অনু-৮]
(৬) প্রকাশ্য শুনানি পরিচালনা : কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য শুনানি পরিচালনা করতে হবে। [অনু-১০]
(৭) আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা : দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সকল ব্যক্তিকে নির্দোষ বলে গণ্য করতে হবে। আর অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনে বর্ণিত দণ্ডের চেয়ে অতিরিক্ত দণ্ড প্রদান করা যাবে না। [অনু-১১]
(৮) স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার : সকল ব্যক্তি তার নিজ দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে। এছাড়া অন্য দেশে যাওয়া-আসার অধিকারও থাকবে। [অনু-১৩]
(৯) অন্য দেশে আশ্রয়লাভের অধিকার : কোন ব্যক্তি নিজ দেশে অন্যায়ভাবে নিপীড়নের স্বীকার হলে অন্য দেশে আশ্রয়লাভের অধিকারী হবেন। [অনু-১৪]
(১০) জাতীয়তা লাভের অধিকার : কোন ব্যক্তিকে জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না বা অস্বীকার করা যাবে না। [অনু-১৫]
(১১) বিবাহের অধিকার : প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নারী-পুরুষের সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহের অধিকার থাকবে। [অনু-১৬]
(১২) ধর্মীয় স্বাধীনতা : সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। [অনু-১৮) তা
(১৩) মত প্রকাশের অধিকার : সকল মানুষের মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। [অনু-১৯]
(১৪) সংগঠনের অধিকার : সকল মানুষের বৈধ সংগঠন করার অধিকার থাকবে। [অনু-২০]
(১৫) নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার : প্রত্যেক ব্যক্তির অন্যকে নির্বাচন করার অধিকার থাকবে এবং নিজেও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার লাভ করবে। [অনু-২১]
(১৬) মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের অধিকার : প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের এবং তার পরিবারের সদস্যদের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের অধিকার থাকবে। [অনু-২১]
উহসংহারঃ জন্মগতভাবে মানুষ অনেকগুলি অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ মানুষ পৃথিবীতে আসার আগেই অধিকার তৈরি থাকে। আবার জন্মের পরও অনেকগুলি অধিকার লাভ করে। এগুলি আইন দ্বারা সমর্থিত। এগুলিকে হরণ করা যায় না। কেউ এসে হস্তক্ষেপ করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
Leave a comment