প্রশ্নঃ আন্তর্জাতিক আদালত কর্ম-প্রণালী মামলায় নির্দোষ অতিক্রমণ বিষয়ে কোন ধরনের পথ অবলম্বন করেছে?
ভূমিকাঃ সমুদ্র আইন একটি আন্তর্জাতিক আইন। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে সমুদ্রের ব্যবহার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং সমুদ্রের নানামূখী ব্যবহারের ফলে এর গুরুত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্র সংক্রান্ত দু’টি কনভেনশন হলো ১৯৫৮ সালের জেনেভা কনভেনশন এবং ১৯৮২ সালের সমুদ্র সংক্রান্ত কনভেনশন। জ্যামাইকার মন্টিগো বে-তে ১৯৮২ সালের কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক আদালত কর্ফু-প্ৰণালী মামলায় নির্দোষ অতিক্রমণ বিষয়ে কোন ধরনের পথ অবলম্বন করেছেঃ
কর্ফু প্রণালী মূলতঃ আলবেনিয়ার রাষ্ট্রীয় সমুদ্রের একটি অংশ। এই প্রণালী নিয়ে বৃটিশ এবং আলবেনিয়ার দ্বন্দ্ব। ১৯৪৬ সালের ২৫ মে একটি বৃটিশ জাহাজ উক্ত প্রণালী অতিক্রম করার সময় আলবেনিয়ার স্থলবাহিনী গুলি বর্ষণ করে।
বৃটিশ সরকার এই মর্মে অভিযোগ করে যে, আলবেনিয়া ইচ্ছাকৃত এই আচরণ করেছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। অন্যদিকে আলবেনিয়ার সরকার যুক্তি প্রদান করে যে, উক্ত প্রণালী আলবেনিয়ার সমুদ্র সীমানায় অবস্থিত। বিদেশী কোন জাহাজ উক্ত প্রণালী অতিক্রম করতে পারে না।
পরবর্তীতে আলবেনিয়া ও গ্রীসের মধ্যে সীমানা বিষয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এসময় আলবেনিয়া সরকার এই প্রণালীতে ‘মাইন’ পুঁতে রাখে। বৃটিশ সরকার উক্ত ‘মাইন’ অপসারণ করার জন্য দাবি জানায়। কিন্তু আলবেনিয়ার সরকার উক্ত মাইন অপসারণ করা থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে দুইটি বৃটিশ ডেস্ট্রয়ার উক্ত মাইনের সাথে ধাক্কা খেয়ে দারুণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে ৪৪ জন নাবিক প্রাণ হারায়। বৃটিশ সরকার ক্ষতিপূরণ দাবী করে এবং আলবেনিয়াকে ক্ষমা চাইতে বলে। অবশেষে এটি বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে প্রেরণ করা হয়।
বিচারকদের রায় : ১৫ জন বিচারকের মধ্যে ১৪ জন বিচারক একমত হয়ে অভিমত প্রকাশ করেন যে, বিদেশী জাহাজ অন্য দেশের আঞ্চলিক সমুদ্রে নির্দোষ অতিক্রম করতে পারে। রায়টি বৃটিশ সরকারের অনুকূলে যায়। আলবেনিয়াকে ৮,৪৩,৯৪৭ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হয়।
উপসংহারঃ সমুদ্র আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আইন। সমুদ্রের উপকূলে যে সকল রাষ্ট্র অবস্থিত সেই সকল দেশ এই আইনের বিশেষ সুবিধা ভোগ করে। আঞ্চলিক সমুদ্র এলাকার মধ্যে অন্যান্য দেশ শুধু নির্দোষ ভাবে চলাচল করতে পারে। অন্য কোন সুবিধা ভোগ করতে পারে না। কিন্তু উন্মুক্ত সমুদ্রে সকল দেশ সমান অধিকার ভোগ করে থাকে।
Leave a comment