প্রশ্নঃ “আন্তর্জাতিক আইন হলাে আইনবিজ্ঞানের বিলিয়মান বিন্দু” আলােচনা কর। ভূমিকাঃ শান্তি চায় না এমন কোন মানুষ বা জাতি নেই। সকল জাতি ও সকল মানুষের একান্ত কাম্য হলাে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তারপরও বিভিন্ন কারণে যুদ্ধ-বিগ্রহ আরম্ভ হয়। ইতিমধ্যে দু’টি বিশ্বযুদ্ধও অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতিসংঘ। প্রতিষ্ঠার পর জাতিসংঘ ঘােষণা করে যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের বৈধতা বা আচার আচরণের মাপকাঠি হবে আন্তর্জাতিক আইন।
আন্তর্জাতিক আইন (International Law) কাকে বলেঃ
অধ্যাপক ওপেনহাম এর মতে, আন্তর্জাতিক আইন বলতে প্রথাযুক্ত আইনের সমষ্টি ও সন্ধির সমষ্টিকে বােঝায় যার ভিত্তিতে সভ্য দেশগুলাের পারস্পরিক কাজে আইনগত বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে।
অধ্যাপক হল এর মতে, আন্তর্জাতিক আইন বলতে এমন কিছু নিয়মাবলীকে বােঝায় যা আধুনিক রাষ্ট্রসমূহ তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে অবশ্য পালনীয় বলে গ্রহণ করে। সুতরাং বলা যায়, ন্যায়-নীতি ও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে আইন প্রয়ােগ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে।
“আন্তর্জাতিক আইন হলাে আইনবিজ্ঞানের বিলিয়মান বিন্দু”
উপরােক্ত উক্তিটি অধ্যাপক হল্যান্ড এর একটি উক্তি। অনেকেই আন্তর্জাতিক আইনকে প্রকৃত আইন বলতে নারাজ। তাদের মধ্যে হল্যান্ড অন্যতম। হল্যান্ডের মতাে আন্তর্জাতিক আইনে কোন সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ নেই। যার ফলে উক্ত আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এই আইন মানা অথবা না মানা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের উপর। এই আইন সৌজন্য নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অধ্যাপক হল্যান্ডের সাথে অস্টিন সহ অনেকেই একমত পােষণ করেছেন। নিম্নে হল্যান্ডের উক্তিটি বিশ্লেষণ করা হলাে-
(১) আইনবিদদের সংজ্ঞাঃ অনেক আইনবিদ তাদের সংজ্ঞায় আন্তর্জাতিক আইনকে যথার্থ আইন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন- অধ্যাপক ওপেনহাম, অধ্যাপক হােয়াইট, অধ্যাপক হল, ড. লরেন্স ইত্যাদি। অধ্যাপক হল্যান্ড তার সংজ্ঞায় আন্তর্জাতিক আইনকে সংকীর্ণ অর্থে গ্রহণ করেছেন। যার ফলে তিনি এই আইনকে সৌজন্যের রীতি বলে উল্লেখ করেছেন।
(২) আন্তর্জাতিক আইনের পরিসরঃ আন্তর্জাতিক আইনের পরিসর ব্যাপক। বর্তমানে তা প্রতিভাত হয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক হল্যান্ডের সময় এর পরিসর সীমিত ছিল যা বর্তমানে নেই। পূর্বের তুলনায় আন্তর্জাতিক আইনের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে হল্যান্ডে উক্ত উক্তির যথার্থতা নেই। কারণ-
(i) আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইন প্রণয়নঃ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, আন্তর্জাতিক আইন কমিশন ইত্যাদি সংস্থা আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নে ভূমিকা পালন করছে।
(ii) আইন লংঘন করলে শাস্তির ব্যবস্থাঃ আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
(iii) বিরােধ মীমাংসাঃ আন্তর্জাতিক আইন বিভিন্ন বিরােধ মীমাংসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং অধ্যাপক হল্যান্ডের “আন্তর্জাতিক আইন হলাে আইনবিজ্ঞানের বিলিয়মান বিন্দু” উক্তিটি বর্তমানে সত্য বলা যায় না।
উপসংহারঃ আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন বিষয় পর্যালােচনা করে বলা যায়, রাষ্ট্র হলাে আন্তর্জাতিক আইনে প্রথম বিষয়বস্তু। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন ব্যক্তিকেও আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে গণ্য করা যায়।
Leave a comment