অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলী কী কী? আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্যের অন্ত নেই। সেই প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনাে মতৈক্য গড়ে ওঠেনি। বস্তুত রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তার প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আর রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রসঙ্গেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্তহীন বাদানুবাদ বর্তমান। স্বভাবতই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সম্পর্কে কোনাে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের কার্যাবলিকে মােট দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ অপরিহার্য বা মৌলিক এবং গৌণ বা ঐচ্ছিক।
মৌলিক কার্যাবলিঃ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা বার উদ্দেশ্যে যেসকল কাজ অবশ্যই করতে হয় সেই সকল কাজকে রাষ্ট্রের প্রাথমিক বা অপরিহার্য কাজ বলে। রাষ্ট্রের অপরিহার্য কার্যাবলি নিম্নরূপঃ
(১) প্রশাসন পরিচালনার কার্যঃ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রকে শাসন বিভাগ গঠন করতে হয়। শাসন কার্য পরিচালনার জন্য উপযুক্ত লােক নিয়ােগ ও নীতিমালা রচনা করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলাের অন্যতম।
(২) সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের কাজঃ বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের একটি মৌলিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্র সেনাবাহিনী গঠন ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করে থাকে।
(৩) বিচার সংক্রান্ত কাজঃ আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাও রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। এ জন্য রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ সংগঠন ও পরিচালনা করতে হয়।
ঐচ্ছিক কার্যাবলিঃ আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য জনগণের সর্বাঙ্গীন কল্যাণসাধন ও উন্নততর জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র যেসকল কাজ সম্পাদন করে সেগুলােতে ঐচ্ছিক কাজ বলে। ঐচ্ছিক কার্যাবলি নিম্নরূপঃ
(১) শিক্ষাসংক্রান্ত কাজঃ জনগণকে শিক্ষিত করে সচেতন করে তােলাই হলাে রাষ্ট্রের একটি দায়িত্ব। এজন্য স্কুল, কলেজ, বিেিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা পাঠাগার নির্মাণ এবং এগুলাের পরিচালনার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কাজের অন্তর্ভুক্ত।
(২) স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজঃ জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র মাতৃসদন ইত্যাদি নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
(৩) কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা সংক্রান্ত কাজঃ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নসাধনের জন্য রাষ্ট্র কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বহুবিধ কাজ করে থাকে। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংক স্থাপন করে নানা রকম সুযােগ-সুবিধা দেয়া হয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, দেশ ও কালভেদে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের কার্যাবলির পরিধি সম্পর্কিত ধারণারও পরিবর্তন হয়। তাই রাষ্ট্রের কর্মপরিধির কোনাে সীমারেখা টানা সম্ভবপর নয়।
Leave a comment