২০০১ খ্রিস্টাব্দে জেনেভায় ৪৬ তম আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষার আধুনিক ও যুগােপযােগী উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়েছে। যে-কোনাে শিক্ষামূলক কাজের একটি উদ্দেশ্য থাকে। 

(১) বৈজ্ঞানিক মানবতাবােধ: শিক্ষার প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক মানবতাবােধ জাগ্রত করা। বৈজ্ঞানিক মানবতাবােধের মূল বক্তব্য হল প্রত্যেক মানুষ অবশ্যই বস্তুজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে এবং সে তার এই জ্ঞানের দরুন সক্রিয়তাকে প্রাথমিকভাবে মানুষের সেবার কাজে ব্যবহার করবে।

(২) মানসিক ক্ষমতার বিকাশ : শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটানাের জন্য পাঠক্রমকে এমনভাবে পরিচালনা করা হয় যাতে শিক্ষার্থীর চিন্তন ক্ষমতা, বিচার ক্ষমতা, সমস্যাসমাধানের ক্ষমতা সুদৃঢ় হয়।

(৩) সৃজনধর্মী : সাধারণভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দু-ধরনের পরস্পরবিরোধী চাহিদা বর্তমান থাকে। আবার এরই সঙ্গে মানুষের মধ্যে সৃজনাত্মক ধর্ম বর্তমান আর এই সৃজনাত্মক ধর্মের জন্যই মানুষ তার নিজের নিরাপত্তা ও দুঃসাহসিকতার পরিতৃপ্তির জন্য সক্রিয়তা প্রদর্শন করে। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিধর্মিতা বিকাশের সুযােগ সৃষ্টি করা।

(৪) শারীরিক বিকাশ : আধুনিক যুগের শিক্ষায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে শারীরিক বিকাশ ঘটানো হয়, কারণ সুস্থ শরীর সুস্থ মানসিকতা তৈরি করে।

(৫) সামাজিক বিকাশ : শিক্ষণ সামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। শিক্ষার্থীকে সমাজব্যবস্থা এবং তার নানান সমস্যার সঙ্গে পরিচিতি ঘটিয়ে সামাজিক করে তােলাই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।

(৬) জ্ঞান অর্জন : সঠিক জ্ঞান অর্জনই শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তুলবে।

(৭) শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা : সাধারণভাবে কোনাে রাষ্ট্র যখন একটি শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পনা রচনা করে, তখন সে চায় এমন এক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিককে তাদের রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক জীবনের জন্য প্রস্তুত করে তােলা যাবে। তাই বিশ্ব শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী মানুষকে তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য, নিজ নিজ সুখ ও আনন্দ সঠিকভাবে উপলব্ধিতে সহায়তা করা।

(৮) ব্যক্তিত্বের বিকাশ : আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাদান করা, যাতে তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে।

(৯) জীবনব্যাপী শিক্ষা : আন্তর্জাতিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (UNESCO) গঠিত কমিশন শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছে। বিশ্ব শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার জীবনব্যাপী নিজস্ব প্রতিষ্ঠা স্থাপনে সহায়তা করা। অর্থাৎ প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যে জ্ঞান, বােধ, দক্ষতা ইত্যাদি শিক্ষার্থীকে দান করা হচ্ছে সেগুলি নমনীয় এবং প্রয়ােজন অনুযায়ী পরিবর্তনযােগ্য।

(১০) প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা : প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে দরকার প্রয়ােজনীয় জ্ঞান। শিক্ষালয়ের মাধ্যমে এই জ্ঞান অর্জন করানাের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

(১১) চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষাদান : বর্তমান শিক্ষা শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। তাই তাদের চাহিদা ও সামর্থ্য বিচার করে পাঠক্রম নির্ধারণ করতে হবে।

(১২) কর্মদক্ষতা অর্জন ও অর্থনৈতিক বিকাশ : শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য কর্ম দক্ষতা অর্জন। সঠিক কর্ম দক্ষ শ্রমিক পারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে, যা কিনা পক্ষান্তরে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী জনসম্পদ তৈরি করা শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

(১৩) একত্রে বাঁচার ধারণার বিকাশসাধন : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজজীবনের উন্নতি ঐক্যের মধ্যে বিরাজমান। জাতীয় সংহতি দেশের উন্নতির মূল হাতিয়ার। তেমনই ব্যক্তিজীবনের উন্নতিও নির্ভর করে সমাজজীবনের উপরে। তাই আধুনিক শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য একত্রে বসবাসের ধারণার বিকাশসাধন করা।

(১৪) বৃত্তির বিকাশ সহায়ক শিক্ষা : আধুনিক শিক্ষা এমন হবে যা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নির্বাচনে সাহায্য করে, স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা দেয়।

(১৫) সংগতিবিধানের সহায়ক : সদা পরিবর্তনশীল যুগের সঙ্গে সঙ্গতিবিধানে সহায়তা করে শিক্ষা। শিক্ষা ব্যক্তিকে নিজস্ব চাহিদা পুরণে সক্ষম করে। পাশাপাশি পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তাকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে শিক্ষা।

(১৬) পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠা : আধুনিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য জ্ঞানী, কর্মদক্ষ, সামাজিক এবং সৃজনশীল মানুষ তৈরি। পরিপূর্ণ বা প্রকৃত মানব সম্পদই পারে দেশ ও দশের উন্নতি করতে।

এইভাবে আধুনিক শিক্ষা শেখায় যুথবদ্ধভাবে উৎপাদনশীলতার বিকাশ ঘটাতে, স্বাবলম্বী হতে এবং সর্বোপরি প্রকৃত মানুষ হতে।