উত্তরঃ সুখবাদ অনুসারে সুখই পরম কল্যাণ বা পরমার্থ। সুখই মানব আচরণের একমাত্র কাম্য বস্তু এবং সর্বোচ্চ লক্ষ্য। সুখই নৈতিকতার একমাত্র মানদণ্ড। যে কাজ যতবেশি সুখ উৎপাদন করে সে কাজ ভালাে এবং যে কাজ সুখ পরিপন্থি সে কাজ মন্দ। সুখবাদের নানা শ্রেণির মধ্যে আত্মসুখবাদ অন্যতম।
আত্মসুখবাদঃ যে মতবাদ মনে করে যে, ব্যক্তির নিজের সুখই মুখ্য অপরের সুখ গৌণ এবং নিজের জন্য সর্বাধিক সুখ অন্বেষণ করার ব্যাপারটি আত্মসুখবাদ নামে পরিচিত। এ মতবাদ ব্যক্তির নিজের সুখকে বড় করে দেখে। ব্যক্তি পরের জন্য যে সমস্ত কাজ পরিচালনা করে না কেন তার ভিতরে নিজের স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। আত্ম সুখবাদকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. স্থুল আত্ম সুখবাদঃ স্থুল আত্ম সুখবাদ ইন্দ্রিয় সুখের উপর গুরুত্বারােপ করে। এ মতবাদের প্রবক্তা হলেন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টিপাস। তিনি ইন্দ্রিয় সুখকে যাবতীয় কর্মকাণ্ডের চাবিকাঠি মনে করেছেন। তার মতানুসারে মানুষ যে যে অবস্থায় থাকে না কেন, তার সেই পরিস্থিতিতে সুখ অন্বেষণ করা উচিত। তীব্র সুস্থ হওয়ায় ইন্দ্রিয় সুখই সর্বশ্রেষ্ঠ।
২. সূক্ষ্ম আত্ম সুখবাদঃ সূক্ষ্ম আত্ম সুখবাদ ইন্দ্রিয় সুখের উপর গুরুত্বারােপ না করে মানসিক সুখের উপর প্রাধান্য দেয়। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস হলেন এ মতের প্রবক্তা। তার মতে, ক্ষণস্থায়ী সুখ মানবজীবনের একমাত্র পন্থা হতে পারে না। যেহেতু মানুষ বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন জীব সেহেতু তাকে ব্যক্তি সুখের উপর গুরুত্বারােপ করতে হবে। শারীরিক সুখ কখনাে শান্তি আনয়ন করতে পারে না। সুতরাং মানসিক সুখই জীবনের একমাত্র পরম কল্যাণ। তাই মানুষকে ইন্দ্রিয় সুখকে বর্জন করা উচিত।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আত্মসুখবাদ কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ভালাে মনে হলেও সার্বিকভাবে কখনাে গ্রহণযােগ্য মতবাদ হতে পারে না। সমাজে বসবাস করতে হলে বৃহত্তম মানবগােষ্ঠীর কথা আমাদের ভাবা উচিত। ব্যক্তি স্বার্থ পরিহার করে সাফল্য মণ্ডিত সমাজ গঠনই একমাত্র কাম্য।
Leave a comment