প্রশ্নঃ আত্মহত্যা কি নৈতিকতা বিরোধী?
অথবা, আত্মহত্যা নৈতিকতাবিরোধী কি-না, যুক্তি দেখাও ৷
ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা একটি আদর্শনিষ্ঠ এবং মূল্যায়নধর্মী বিজ্ঞান হিসাবে মানুষের সকল কাজের উচিত অনুচিত সম্পর্কে মত প্রকাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় আত্মহত্যা নৈতিক কি-না সে দিকটিও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছে। আত্মহত্যা একটি মানবতা বিরোধী কাজ এবং নীতিবিদ্যা এটিকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। আত্মহত্যা নৈতিক ও প্রাকৃতিক নিয়মের পরিপন্থী এবং নীতিবর্জিত ও অন্যায় কাজ বলে নীতিবিদরা মনে করেন।
আত্মহত্যা নৈতিকতা বিরোধী কি-নাঃ পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যাদের বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আছে, ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার সামর্থ। তা সত্ত্বেও মানুষ ভাবাবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটি মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সমাজে বসবাস করতে গেলে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, জ্বালা-যন্ত্রণা, অভাব অনটন ইত্যাদির জাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে নাভিশ্বাস ছাড়ে, তখন সেই দুর্বিসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ কখনো কখনো আত্মহননের পথ বেছে নেয়। একজন মানুষ তখনই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় যখন সে সমাজের প্রতিকূল পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে এবং তখন তার বিবেকবুদ্ধি লোপ পায় এবং সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবাবেগ দ্বারা চালিত হয়। সুতরাং মানুষ যখন তার বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ভাবাবেগ দ্বারা চালিত হয় এবং ভালো মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, এই অবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়ে সে আত্মহত্যা করে। বস্তুত ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যা একটি পাপ কাজ এবং নীতিবিদ্যার বিচারে এটি একটি অপরাধ। অধ্যাপক কান্টের মতে, “আমাদের এমনভাবে আচরণ করতে হবে, যাতে আমি নিজে বা সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিরা সে আচরণকে পন্থা হিসেবে গ্রহণ না করে লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করে।” নৈতিক দিক থেকে যদি আত্মহত্যাকে সমর্থন দেওয়া যায় তবে সমাজে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হবে। সামান্য কারণে মানুষ তার বিচার বিবেচনার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। মানুষ প্রতিকুল পরিবেশে সংগ্রাম করে টিকে থাকার মানষিকতা হারিয়ে ফেলবে। তাই নীতিবিদগণের পরামর্শ এই যে দুঃখ দুর্দশা, দারিদ্র্য-হতাশা, জ্বালা-যন্ত্রণা এগুলি মানুষের জীবনে আসবেই। এরূপ প্রতিকূল অবস্থা যখন সামনে এসে দাঁড়ায় তখন বিচলিত না হয়ে, ভাবাবেগ দ্বারা তাড়িত না হয়ে বিচার বুদ্ধি দিয়ে সেগুলোকে সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। মানুষ শুধু নিজের জন্য বাচেনা বরং সমাজের বৃহত্তর কল্যাণ সাধনের জন্য মানুষের দায়িত্ব রয়েছে এবং সমাজে একজন মানুষের সাথে আরো অনেকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং নির্ভরশীল তাই কেউ আত্মহত্যা করলে তার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্যরাও গভীর বিপদে পড়ে এবং শোকে ব্যাকুল হয়, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। তাই নৈতিক দিক থেকে আত্মহত্যাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আত্মহত্যা সমাজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পরিপন্থী এবং এটি সমাজে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আত্মহত্যাকে নৈতিক দিক থেকে কোনভাবেই সমর্থন করার উপায় নেই। তাই আত্মহননের পথ বেছে না নিয়ে বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে সকল সমস্যা সমাধানের এবং দুঃখ-দুর্দশা তাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করলে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবন অনেক বেশি সুন্দর হবে এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় ৷
Leave a comment