নীতি-প্রচারই বঙ্কিম-সাহিত্যের প্রধান কথা। এই নীতি হইতেছে সত্য শিব ও সুন্দরের উপলব্ধিতে জীবন ধারণ করিয়া যাওয়া। বঙ্কিম তাঁহার উপন্যাসে, প্রবন্ধে আলোচনায় এই নীতিরই জয় ঘোষণা করিয়া গিয়াছেন একটি অপূর্ব কাব্যসম্মিত উপায়ে। কমলাকান্তের দপ্তরে সেই নীতিরই পুনরুল্লেখ রহিয়াছে। বঙ্কিমের কাছে সর্বাপেক্ষা উচ্চস্থান ছিল বাঙালি ও বাংলাদেশের। তিনি জানিতেন বাংলা এবং বাঙালির বিরাট ঐতিহ্য আছে। তাহার ইতিহাস বিচিত্র এবং সুন্দর। নানাকারণে বাঙালি নিজের দেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সাহিত্য ও ধর্মে বিশেষ উৎসাহ প্রকাশ করে না। ইংরেজের আগমনে বাঙালি তাহার আচার ধর্ম পরিষদ সাহিত্য সমস্ত ভুলিয়া পাশ্চাত্য শিক্ষা দীক্ষা, সাহিত্য, ধর্ম দর্শনের বিশেষ অনুশীলনে ব্যস্ত হইয়া পড়ে। দেশপ্রেমিক মহান বঙ্কিমের তাহাতে গাত্রদাহ উপস্থিত হইল। এই অসংগতি এবং বিভ্রান্তি, তিনি কোনও ক্রমেই সহ্য করিতে পারিলেন না।
তিনি এই আত্মবিস্মৃত জাতির জাগরণের ভার স্বহস্তে লইলেন তিনি সংস্কারক রূপে আত্মপ্রকাশ করিলেন। সেই সংস্কারক রূপের পরিচয় কিছু মেলে তাঁহার উপন্যাসে এবং প্রবন্ধে। কিন্তু উপন্যাসে এবং প্রবন্ধে বঙ্কিম যেভাবে আপন বক্তব্য ও উদ্দেশ্য পরিবেশন করিয়াছেন তাহা বাঙ্গালীর মর্মে গিয়া আঘাত করিতে সময় লাগে। অথচ সে সময় ব্যয় করিতে তিনি অপারগ। উপন্যাসের ভাব, প্রবন্ধের যুক্তি এই উদ্দেশ্যসাধনে ততখানি তৎপরতা দেখাতে পারে না যতখানি ব্যঙ্গ বিদ্রূপের শাণিত অস্ত্রে সম্ভব। কমলাকান্তের দপ্তরের চৌদ্দটি দপ্তরেই সেই ব্যঙ্গের ঝাঁজ রহিয়াছে তাহাতে হাস্যরসের সূর্যকিরণ পড়াতে তাহা নিটোল মুক্তার মতো হৃদয়গ্রাহী হইয়া উঠিয়াছে।
ইংরাজীতে হাস্যরসের চারিভাগ Satire Pun, Wit ও Humour, ইহার মধ্যে humourই বঙ্কিম কমলাকান্তের দপ্তরে প্রয়োগ করিয়াছেন।
Homour হইতেছে করুণ হাস্যরস। কারণ হাস্যরসের উজ্জ্বল স্রোতে কমলাকান্তের দপ্তর প্লাবিত হইয়াছে। সে যাই হোক, ইহার প্রকাশভঙ্গীটি তির্যক। এই তির্যকতা-সৃষ্টি ব্যঙ্গের দ্বারা সম্ভব হইয়াছে।
কমলাকান্তের দপ্তরের প্রধান তির্যক ভঙ্গী হইতেছে বঙ্কিমের কমলাকান্তের ভূমিকা গ্রহণ করা। কমলাকান্ত হইতেছে আহিফেনসেবী, ভবঘুরে, জীবনবিমুখ বৈরাগী, গেরুয়াবস্ত্রধারী, পাগল, নির্বোধ এবং ছন্নছাড়া। এইরূপ একটি ভূমিকার আশ্রয় গ্রহণ করার অর্থ হইতেছে, বঙ্কিম জানিতেন, যে কমলাকান্তের মতো লোকের কথা অনেকেই শুনিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। নীতির গুরুগম্ভীর কথা কেহ শুনিতে আগ্রহী নয় অথচ বঙ্কিমের উদ্দেশ্য নীতিকথা শোনান। সেইজন্য কমলাকান্তের মুখে এই কথাগুলি বসানোই যুক্তিযুক্ত। বঙ্কিম এই যৌক্তিকতা অস্বীকার করিতে পারেন নাই। দপ্তর-প্রকাশে বঙ্কিমের যেন কোনও দায় নাই বঙ্কিম এই ভাব দেখাইয়াছেন। তাঁহার উদ্দেশ্য যে, সিদ্ধ হইবে, তাহা ওই কমলাকান্তের চরিত্র-চিত্রণেই বিধৃত রহিয়াছে।
কমলাকান্ত যাহা বলিয়াছে, তাহার দুইটি করিয়া অর্থ-নিরূপণ সম্ভব। কিন্তু এই অর্থ নিরূপণের পূর্বে আমাদের জানিয়া রাখিতে হইবে যে, কমলাকান্তের অহিফেন সেবন এবং নিরাসক্ত জীবনযাপন করিয়া জীবন ও জগৎ সম্পর্কে মূল্যবান কথা উচ্চারণ করিবার অন্তরালে একটি বৃহৎ অর্থ নিহিত। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজের কুশ্রীতা ও কদর্যতা দেখিয়াও তাহার কিছু করার থাকে না কেননা সেও সেই সমাজের মোহমুগ্ধ হইয়া থাকে। সমাজের কুশ্রীতা এবং কদর্যতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করিতে হইলে সমাজ-বহির্ভূত জীব না হইলে চলে না। বঙ্কিমচন্দ্র বাঙালি সমাজে বাস করিয়া বাঙালির কুসংস্কার অন্ধ গোঁড়ামি দেখিয়াও কিছু বলিবার পথ পাইতেছিলেন না। কারণ পূর্বেই বলা গিয়াছে, সমাজ বহির্ভূত না হইলে তাহা সম্ভব নয়। বলা বাহুল্য সেই সমাজরিক্ত উন্মাদকল্প মানুষ কমলাকান্ত। বঙ্কিমের সংস্কারমুক্ত নিরপেক্ষ মনের পরিচয় কমলাকাস্তের চরিত্রে স্পষ্ট ছাপ ফেলিয়াছে। কমলাকান্তর অহিফেন সেবন তো সেই নিরপেক্ষ সংস্কারমুক্ত মনের দ্বারোদ্ঘাটন। মূলত বঙ্কিমের সমালোচকরূপের প্রকাশ কমলাকান্তের মধ্যে বিবৃত।
শুধু কমলাকান্ত চরিত্র-কল্পনায় এবং তাহার অহিফেন সেবনের মধ্যেই তির্যক ভঙ্গী নাই, বিষয় বস্তুর বর্ণনায়ও বঙ্কিমের তির্যক মনোভঙ্গী কাজ করিয়াছে। যে যে দপ্তরে সেই তির্যক ভঙ্গী ব্যঙ্গে বিদ্রূপে ও হাসির ধারায় ঝলকিয়া উঠিয়াছে, তাহা হইতেছে, ‘মনুষ্যফল, ‘ইউটিলিটি বা উদরদর্শন’, ‘পতঙ্গ’, ‘বসন্তের কোকিল’, ‘বড়বাজার’, ‘বিড়াল’ এবং ‘ঢেঁকি’।
‘মনুষ্যফল’-এ বঙ্কিম বলিয়াছেন, মনুষ্য একমাত্র ফলের সহিত তুলনীয়। কোনও কোনও মানুষ কাঁঠাল এবং আমের মতো। কাঁঠালরূপ ধনী মানুষের চারিপাশে ঘুরিয়া বেড়ায় প্রসাদলোভাতুর নায়েব গোমস্তা, মোসাহেব প্রভৃতিরা। কাঁঠাল এবং আম্রফল শৃগালের লোভ হইতে রক্ষা পায়, কিন্তু নায়েব গোমস্তার হাত হইতে ধনী ব্যক্তি রেহাই পায় না। আমের সহিত তুলনা করা হইয়াছে সিবিল সার্ভিসের সাহেবগণকে। সেই আমগুলির কিছু টক, কিছু মিষ্টি, কিছু স্বাদহীন। সেলাম-জলের স্পর্শে খোশামোদের বরফে সেই আমগুলি ভক্ষণের যোগ্য হয়। স্ত্রী-মনুষ্যফলকে কলাগাছ, মাকালফল এবং নারিকেলের সঙ্গে তুলনা করা চলে। ‘মনুষ্যফল’-এ বঙ্কিমের ব্যঙ্গ বিদ্রূপের সহিত উন্নত কল্পনাশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
‘ইউটিলিটি বা উদরদর্শন’-এ বঙ্কিম হিতবাদের এক ব্যঙ্গ-মিশ্রিত কল্পনাময় ব্যাখ্যা করিয়াছেন। ‘পতঙ্গ’-এ বলিয়াছেন মানুষমাত্রেই পতঙ্গ। পতঙ্গ যেমন অন্ধ মোহে আগুনের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া জীবন বিসর্জন দেয়, মানুষও তেমনি জ্ঞান, ধন, মান, রূপ, ধর্ম, ইন্দ্রিয় বহ্নিতে নিজ জীবন বিসর্জন দেয়। কমলাকান্ত যে কতখানি নিরাসক্তচিত্ত, অন্ধ ঘোঁড়ামিবর্জিত, তাহা এই ‘পতঙ্গ’ অধ্যায় হইতে জানা যায়।
‘বসন্তের কোকিল’ রচনায় কমলাকান্ত সমাজের সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী মানুষের স্বরূপ উদ্ঘাটন করিয়াছেন। বসন্তের কোকিলরূপ মানুষের সহিত বসবাস করিতে স্বতঃই মনে সংশয় জাগে। কমলাকান্ত কেন বেদনার্দ্রচিত্তে এই সমাজ ত্যাগ করিয়া বিবাগী হইবার আয়োজন করিয়াছিল, তাহার যথার্থ কারণ, এই ‘বসন্তের কোকিল’ রচনায় মিলিবে। ইহাতে বঙ্কিমের বজ্র কটক্ষ বর্ষিত হইয়াছে এই সমাজ সংসারের ওপর।
‘বড়বাজার’ আর একটি ব্যঙ্গবাণে বিধ্বস্ত রচনা। পৃথিবী একটি বৃহৎ বড়বাজার। এই বাজারে বিভিন্ন পটি। সেই পট্টি কয়টি রূপের, বিদ্যার এবং যশের। বঙ্কিম দেখাইয়াছেন রূপ, বিদ্যা, যশ কী বিস্তর ফাঁক ও ফাঁকিতে পূর্ণ। পৃথিবীর লোক এই ফাঁকির কারবারে এত বেশি মশগুল যে ইহার সত্যতা নির্ণয়ে কোনও আগ্রহ প্রকাশ করে না। ‘বড়বাজার অধ্যায়ে কমলাকান্ত বলিতে চায়, এই ফাঁকিতে তাহার কোনও আসক্তি নাই। রূপ বিদ্যা যশের প্রতি কমলাকান্তের বিন্দুমাত্র অভিলাষ নাই? কমলাকান্তের নিরাসক্ত হৃদয়ের আর এক রূপ এখানে প্রকাশিত।
যুক্তি সিদ্ধ শ্লেষসিত্ত রচনা হিসাবে ‘বিড়াল’কে গ্রহণ করা যায়। বিড়াল চুরি করিয়া ক্ষীর, সর, দধি, দুগ্ধ, মাংস খাইবে। কারণ সে ক্ষুধার্ত। যেখানে ক্ষুধার উদ্বৃত্ত খাদ্য পড়িয়া থাকিবে, বিড়ালের তাহাতে নিরঙ্কুশ অধিকার। এই অধিকারে কাহারও বাধাপ্রদানের এতটুকু ক্ষমতা নাই। বঙ্কিম ‘বিড়াল’ দপ্তরটিতে নিপীড়িত শোষিত মানুষের পক্ষে ওকালতি করিয়া সাম্যতত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করিতে চাহিয়াছেন। এই প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসাবে বিড়ালকে দাঁড় করাইয়া বঙ্কিম যেমন বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়াছেন, তেমনি রসিকচিত্তের অর্গল মুক্ত করিয়াছেন।
ঢেঁকি রচনাটিতে বলা হইয়াছে, ঢেঁকির কাজ কেবল ধানভানা, কিন্তু ঢেঁকি সম্বন্ধে বলিতে যাইয়া বঙ্কিম মনে করিয়াছেন, সমস্ত বিশ্বসংসারই ঢেঁকিশালা। ঢেঁকির একমাত্র কাজ ধান্যপেষা। এই ধান্য নিপীড়িত অত্যাচারিত ও শোষিত জনসমাজের প্রতিভূ। জমিদার, আইনবিদ, বাবু এবং লেখকরূপ ঢেঁকি যথাক্রমে প্রজা, দরিদ্রজনসাধারণ, পিতৃধন, সরস্বতীরূপ ধান্য নির্বিকারচিত্তে পিষিয়া যাইতেছে। এই সমস্ত বিচার করিয়া কমলাকান্ত স্বয়ং বুঝিয়াছে, সেও একটি ঢেঁকি বিশেষ। সে নেশার ঘোরে মনোদুঃখ রূপ ধান্য পিষিয়া দপ্তর চাউল বাহির করিতেছে।
যাই হোক, দপ্তরের, প্রায় প্রত্যেকটি রচনায় বঙ্কিম জীবনের চরম অসঙ্গতির বিরুদ্ধে মনে ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছেন। প্রকাশ করিতে গিয়া কয়েকটি রূপক বা প্রতীকের সাহায্য লইতে হইয়াছে। কিন্তু এই প্রতিকগুলি এতই অকিঞ্চিৎকর যে, তাহা লইয়া সাধারণ মানুষ কোনও প্রশ্ন করে না। বঙ্কিম জগতের অকিঞ্চিৎকর বিষয়বস্তুর মাধ্যমে এক বৃহত্তর সত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করিয়াছেন। ‘পতঙ্গ’ ‘বড়বাজার’ ‘ঢেঁকি’ ‘বসন্তের কোকিল’ ‘বিড়াল’ প্রভৃতি রচনাগুলি তাহার উপযুক্ত প্রমাণ। ‘আমার দুর্গোৎসব’, ‘একটি গীত’ এই রচনা দুইটিতে বঙ্কিম স্বদেশপ্রেমের কথা বলিয়াছেন। ‘আমার দুর্গোৎসব’-এ বঙ্কিম দুর্গা-প্রতিমার রূপের ব্যাখ্যার আড়ালে দেশ ও দেবতাকে একটি অভিন্ন রূপে কল্পনা করিয়াছেন। এই দুর্গা যথার্থই দেশমাতৃকা। এই দেশমাতৃকার পরিকল্পনা করিয়াছিল পরবর্তীকালের বিপ্লবী বাঙলার নির্ভীক যুবকের দল। কমলাকান্তের একটি অখণ্ড বৈশিষ্ট্য আছে।
‘একটি গীত’ অধ্যায়ে একটি গীত হইতেছে “এসো সো বঁধু এসো, আধ আঁচরে বসো, নয়ন ভরিয়া তোমা দেখি।” এই গীতটি শ্রবণ করিতে, করিতে কমলাকান্তের দেশহিতৈষণার কথা মনে পড়িতেছে। ভারতবর্ষ তথা বাঙলাদেশ সাত শত বৎসরের উপর পরাধীন। বাঙালির তাহাতে সুখ শান্তি আশা কিছুই নাই। সেইসঙ্গে কমলাকান্তও অসুখী ও নিরাশ।
উপরিউক্ত দুইটি রচনায় কমলাকান্তরূপী বঙ্কিমের যথার্থ মর্মবেদনার সার্থক চিত্র অঙ্কিত হইয়াছে।
যাহাই হোক, কমলাকান্তের দপ্তরের রচনাগুলি পর্যালোচনা করিলে মনে হয়, কমলাকান্তরূপী বঙ্কিমের এই জগৎ জীবন তথা বাঙালাদেশ সম্বন্ধে কিছু বক্তব্য আছে যাহা বলিবার মাধ্যম উপন্যাস বা প্রবন্ধ হইতে পারে না। সরস আসরের দীর্ঘ ভূমিকা প্রয়োজন। কমলাকান্তর দপ্তর সেই প্রয়োজন মিটাইয়াছে। এইজন্য আমরা দেখি, এই দপ্তরের বিভিন্ন বিষয়ের নামকরণের আড়ালে আর একটি বৃহত্তর নামকরণের অবকাশ রহিয়াছে। পাঠককে সেই বৃহত্তর ব্যঞ্জনার দিকে টানিয়া লইবার জন্য বঙ্কিম দাঁড় করাইয়াছেন অহিফেনসেবী কমলাকান্তকে, আর বিড়াল, পতঙ্গ, ঢেঁকি, দুর্গাপ্রতিমা, একটি কোকিল, মনুষ্যফল প্রভৃতিকে। আপাতদৃষ্টিতে রচনাগুলি বেশ মনোহর। কিন্তু মনকে প্রফুল্লতা দান করিবার কালে পাঠকের মস্তিষ্কেরও যাচাই হইয়া যায়। তখন বুঝিতে দেরী হয় না যে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটি মায়ার পুরী। এই মায়া-পুরীতে মানুষ অন্ধের মতো আবিষ্টের মতো বিভ্রান্তভাবে চলাফেরা করিতেছে। কমলাকান্ত এইরূপ কোনও বিভ্রান্তি হইতে মুক্ত, সকলপ্রকার সংস্কারবর্জিত। অনায়াসে বলা যায় বঙ্কিমচন্দ্র কি উদার অনাসক্ত উন্নত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। সেই উদার হৃদয়ের রহস্যময় সান্নিধ্যে পাঠক পৌঁছাইতে পারে কমলাকান্তের দপ্তরের রচনাগুলি একটু ঘাঁটাঘাঁটি করিলে।
অতএব নিশ্চিত প্রতিপাদ্যে আসা গেল কমলাকান্তের দপ্তরের দুইটি অর্থ, একটি স্থূল অন্যটি সূক্ষ্ম। স্থূলতা অতিক্রম করিয়া সূক্ষ্মতায় পৌঁছানই পাঠকের তথা বঙ্কিমের অন্যতম উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য সফল হইয়াছে। প্রত্যেকটি দপ্তরের সমাপ্তি অংশ বড়ো মনোরম। পাঠক যখন সূক্ষ্ম অর্থের দুয়ারে আসিয়া পৌঁছায়, তখন সেই সূক্ষ্মতাকে হাস্যরসের তরল চমৎকৃতি একটি চরম বৈপরীত্য সৃষ্টি করিয়া আরও ঘনীভূত করিয়া তোলে। সেই সঙ্গে রসিক বঙ্কিমের আত্মা, মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ সচকিত হইয়া দেখা দেয়। বাঙালির আত্মবিস্মৃতির মায়াস্পর্শ দূর হইয়া যায়।
Leave a comment