আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিনিধিত্বমূলক। এই প্রতিনিধিত্বের ভিত্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের ভিত্তি প্রসঙ্গে মূলত দু’টি নীতি আছে : 

  • (১) ভৌগোলিক বা আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব এবং 

  • (২) পেশাগত বা বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্ব।

(১) ভৌগোলিক বা আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব

বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের আইনসভার প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণত আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের নীতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। নির্বাচনের ব্যাপারে সমগ্র দেশকে মোটামুটি সম জনসংখ্যার ভিত্তিতে কতকগুলি পৃথক পৃথক নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি এলাকা থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। এরকম ব্যবস্থায় জাতি, ধর্ম, পেশা প্রভৃতি নির্বিশেষে সমানাধিকারের ভিত্তিতে ভোটদাতাগণ একটি এলাকায় ভোট দেন এবং সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হন। সুতরাং এই ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি কোন বিশেষ নির্বাচন এলাকায় করে থাকেন। এই ব্যবস্থাকে ভৌগোলিক বা আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব বলা হয়। 

ভৌগোলিক বা আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের সপক্ষে যুক্তি

(১) এই নির্বাচন-ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ সরল এবং সুবিধাজনক। এই ব্যবস্থায় ভোটদাতাগণ পছন্দমত একজন মাত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেন। ব্যক্তিগত পছন্দমত একজন প্রার্থীকে ভোট দিলেই ভোটদাতার আর দায়িত্ব থাকে না।

(২) এক-একটি এলাকার স্বতন্ত্র স্বার্থ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাকে সমর্থন করা হয়। 

(৩) এক-একটি এলাকার অধিবাসীদের স্বার্থ সাধারণত একই রকমের হয়। তাই আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাই বাঞ্ছনীয়। কারণ একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করা যায়। গেটেল মন্তব্য করেছেন: “The interest of the people within these districts were essentially alike, and that the majority within each district should select the representative for the appropriate fractional part of the population.” 

(৪) আঞ্চলিক স্বার্থ বহুলাংশে ব্যক্তির রাজনীতিক মতামতকে প্রভাবিত করে। একই অঞ্চলের মানুষের স্বার্থ একই রকমের হয় বলে তাদের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক অভিন্নতা দেখা যায়। এই রাজনীতিক মতাদর্শ বা চেতনার জন্য ভোটদাতারা নিজেদের অঞ্চলের পরিচিত প্রার্থীকে ভোট দিতে বিশেষভাবে আগ্রহী ও উৎসাহী হয়।

(৫) আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনসভার একটিমাত্র দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তার ফলে সরকার স্থায়ী ও শক্তিশালী হতে পারে। 

(৬) এই ব্যবস্থায় নির্বাচন এলাকার আয়তন ছোট হয়। তারফলে ভোটদাতাদের সঙ্গে প্রতিনিধির পরিচয় থাকে এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এইভাবে প্রতিনিধি ও ভোটদাতাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং দায়িত্বপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। তার ফলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সফল হয়।

ভৌগোলিক বা আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের বিপক্ষে যুক্তি

(১) অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচনে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় ও সংকীর্ণ স্বার্থ অত্যধিক প্রাধান্য পায়। তার ফলে দেশের ও দশের বৃহত্তম সমষ্টিগত স্বার্থ অবহেলিত হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুসারে আঞ্চলিক স্বার্থ সংরক্ষণই তাঁদের একমাত্র দায়িত্ব বলে মনে করেন। তার ফলে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের অবহেলা হয়।

(২) এই নির্বাচন-ব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক। একই অঞ্চলের অধিবাসীদের স্বার্থ অভিন্ন হয় না। বিভিন্ন বৃত্তিধারী ও পরস্পর-বিরোধী স্বার্থের মানুষ একই এলাকায় বসবাস করে। বিভিন্ন বৃত্তিগত বা পেশাগত গোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থেরও দ্বন্দ্ব থাকে। তাই এ ধরনের আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব কৃত্রিম ও বাস্তব অবস্থার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। গেটেল বলেছেন: “That people living in the same area do not necessarily have interest in common and that modern society Fis composed of classes based on function or occupation.” তাই আঞ্চলিক ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি সকলের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না এবং আইনসভা প্রতিনিধিত্বমূলক হয় না।

(৩) এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সংখ্যালঘুদের অভাব-অভিযোগ ও মতামত আইনসভায় প্রতিফলিত হয় না। তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ার আশংকা থাকে।

(৪) এই ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল পুনরায় ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে এমনভাবে নির্বাচনী এলাকাসমূহের পুনর্বিন্যাস করতে পারে যাতে দলীয় প্রার্থীদের সহজেই জয়লাভ সম্ভব হয়। একে ‘জেরিম্যাণ্ডারিং (Gerrymandering) বলা হয়।

(৫) এই ব্যবস্থায় নির্বাচনী এলাকাগুলি সাধারণত ছোট হয়। ফলে বেশ কিছু সংখ্যক ভোটদাতাকে প্রভাবিত করে ক্ষমতাসীন দল দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী সাফল্যকে সুনিশ্চিত করতে পারে। সরকারী দলের হাতে প্রশাসন যন্ত্র, প্রচার যন্ত্র প্রভৃতি থাকে। অন্যান্য দলের হাতে থাকে না। তার‌ ফলে সরকার সহজে জনগণ ও জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে।

(৬) প্রতিনিধিত্বের এই ব্যবস্থায় একই নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রায় ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফলে নির্বাচকদের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যায়। তার ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীও নির্বাচিত হতে পারেন। এই দিক থেকে এই ব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক।

(৭) আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় অযোগ্য ও স্বার্থপর প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছোট ছোট অঞ্চলের নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটদাতাদের ছলে-বলে-কৌশলে প্রভাবিত করার জন্য বিত্তবান ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রার্থীরা উদ্যোগী হন। সাধারণভাবে ভোটদাতাদের অধিকাংশই অজ্ঞ ও অশিক্ষিত। তার ফলে দুর্নীতিপরায়ণ প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এইভাবে প্রকৃতপক্ষে যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীরা এ ধরনের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এঁটে উঠতে পারে না।

(২) পেশাগত বা বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্ব

পেশা বা বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে পেশা বা বৃত্তির ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকা সংগঠন করা হয় এবং আইনসভায় প্রত্যেক পেশার উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হয়। এই ব্যবস্থায় শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল, শ্রমিক, কৃষক প্রভৃতি কর্ম বা পেশার ভিত্তিতে সমগ্র দেশকে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত করা হয়। বিভিন্ন বৃত্তিতে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ নিজ নিজ প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করেন। প্রত্যেক পেশা থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এইভাবে পেশাগত ভিত্তিতে আইনসভা গঠিত হয়।

পেশাগত বা বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্বের সপক্ষে যুক্তি

পেশাগত প্রতিনিধিত্বের সমর্থকদের মধ্যে দ্যুগুই, কোল, স্যাফল, গ্রাহাম ওয়ালাশ প্রমুখ ব্যক্তির নাম উল্লেখযোগ্য। এই নির্বাচন ব্যবস্থার সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করা হয়।

(১) গণতন্ত্রসম্মত: পেশাগত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে গঠিত আইন সভাই হল গণতন্ত্রসম্মত। এই ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ বিভিন্ন শ্রেণীর স্বার্থ সম্যকভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। ব্যক্তির কাছ থেকে আঞ্চলিক স্বার্থ অপেক্ষা বৃত্তিগত স্বার্থ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনসভায় বিভিন্ন বৃত্তি ও স্বার্থের প্রতিফলন ঘটে।

(২) জনমতের প্রতিফলন ঘটে: প্রতিনিধিত্বের এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রকৃত জনমত ও সাধারণ ইচ্ছা আইনসভায় প্রতিফলিত হতে পারে। গণতান্ত্রিক আদর্শ অনুসারে আইনসভা হবে জনমতের প্রকৃত দর্পণ। এদিক থেকে কৃত্রিম আঞ্চলিক ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন ও আইনসভার গঠন অযৌক্তিক। পেশা বা বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে আইনসভায় জনমতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে।

(৩) কোলের মত: বহুত্ববাদীদের মতানুসারে রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থে বৃত্তিগত ভিত্তিতে গঠিত সমাজের বিভিন্ন সংস্থাকে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া দরকার। কোল-এর মতে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন কাজের অনুপাতে আইনসভায় সমসংখ্যক সংঘের স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত।

(৪) ওয়ালাশের মত: গ্রাহাম ওয়ালাশের মতানুসারে আইনসভাকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট করা দরকার এবং একটি কক্ষের প্রতিনিধিগণ আঞ্চলিক ভিত্তিতে ও অপরকক্ষের প্রতিনিধিগণ পেশার ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন। 

(৫) দ্যুণ্ডই-এর মত: দ্যুগুই-এর মতানুসারে শিল্প, সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদনমূলক পেশা, বিজ্ঞান, ধর্ম প্রভৃতি জাতীয় জীবনের মুখ্য শক্তিগুলি যাতে আইনসভায় প্রতিনিধি পাঠাতে পারে তার ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাঁর মতানুসারে সমাজে সাধারণ ইচ্ছার যাতে প্রকাশ ঘটে তার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা থাকা দরকার। গোষ্ঠীসমূহের মতামতের ভিত্তিতে সাধারণ ইচ্ছা গঠিত হয়। দ্যুগুই বলেছেন: “All the great forces of national life ought to be represented-industry, commerce, manufacturing profession etc.”

(৬) বৃত্তিগত স্বার্থ সংরক্ষণ বাঞ্ছনীয়: অ-সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের সমাজ হল শ্রেণীবিন্যস্ত। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় শিল্পপতি-শ্রমিক, জোতদার-কৃষক প্রভৃতি শ্রেণীসমূহ একই নির্বাচনী এলাকার মধ্যে বসবাস করে। এদের স্বার্থ কিন্তু পরস্পর-বিরোধী। বৃত্তিগত বিভিন্নতার কারণে স্বার্থের বিভিন্নতার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন বৃত্তির ব্যক্তিবর্গের স্বতন্ত্র স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় সমাজজীবনে বিভিন্ন শ্রেণী ও গোষ্ঠীর মধ্যে অকাম্য অসদ্ভাব ও ক্ষোভের সৃষ্টি হবে।

পেশাগত বা বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্বের বিপক্ষে যুক্তি

(১) কার্যকর করা কঠিন: পেশাগত ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকা গঠন করে নির্বাচন পরিচালনা করা‌ অত্যন্ত জটিল ও কঠিন ব্যাপার। প্রতিনিধিত্বের এই পদ্ধতিকে বাস্তবে কার্যকর করা অসুবিধাজনক। বৃত্তির ভিত্তিতে সমাজের অসংখ্য গোষ্ঠীর মধ্যে আসন বণ্টন করা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়।

(২) আইনসভার দক্ষতা হানি: বৃত্তিগত ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আইনসভা পরস্পর বিরোধী স্বার্থের বিতর্কসভায় পরিণত হয়। গার্ণারের মতানুসারে এরকম আইনসভা আইন প্রণয়নকারী সংস্থার পরিবর্তে একটি বিতর্কসভায় পর্যবসিত হয়। ফলে আইন-সভার উদ্দেশ্য ও দক্ষতার হানি ঘটে। আইনসভা কোন সুষ্ঠু নীতি গ্রহণ করতে পারে না।

(৩) জাতীয় সংহতি বিরোধী: এই নির্বাচন-ব্যবস্থা জাতীয় সংহতির পরিপন্থী। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বৃত্তিস্বার্থের দ্বারা নাগরিক চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং হিংসা-দ্বেষ, ভেদাভেদ প্রভৃতি বৃদ্ধি পায়। তার ফলে জাতীয় জীবনে অরাজকতার সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ে।

(৪) অস্থায়ী সরকার: এ রকম নির্বাচন ব্যবস্থার ফলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে আইনসভা বিভক্ত হয়ে পড়ে। কোন গোষ্ঠীর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। আর এ ধরনের সরকার প্রকৃতিগতভাবে অস্থায়ী ও দুর্বল হয়। প্রতিনিধিত্বের এ ধরনের ব্যবস্থার ফলে কোন স্থায়ী শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠে না এবং সরকার দ্রুত ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। 

(৫) গণতন্ত্রসম্মত নয়: এই ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনীতিক বিচারে উদাসীন ও অযোগ্য ব্যক্তিও আইনসভায় নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এই প্রতিনিধিত্বের দ্বারা রাজনীতিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না। এই কারণে এই ব্যবস্থা গণতন্ত্রসম্মত নয় বলে অভিযোগ করা হয়।

(৬) ফরাসী লেখক ইজমির মতে, পেশাগত প্রতিনিধিত্বের নীতি অলীক ও ভ্রান্ত। এই ব্যবস্থা সংঘর্ষ, বিশৃঙ্খলা, এমনকি অরাজকতার সৃষ্টি করবে।

(৭) বৃত্তিমূলক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশাভিত্তিক গোষ্ঠীসমূহের সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা কঠিন ব্যাপার। তা ছাড়া এই পদ্ধতিতে সকল সংখ্যালঘু স্বার্থের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা যায় না। 

(৮) প্রতিনিধিত্বের এ ধরনের পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ থাকে। তা ছাড়া প্রতিনিধিত্বের এই ব্যবস্থায় নাগরিক চেতনার বিকাশ ও বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হয়। তার ফলে সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

উপসংহার: আঞ্চলিক ও পেশাগত প্রতিনিধিত্বের মধ্যে তুলনামূলক বিচারে আঞ্চলিক নির্বাচন ব্যবস্থাই কাম্য বিবেচিত হয়। তার মূল কারণ হল এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই দেশের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি সুবিচার করা সম্ভব হয়। ল্যাস্কির কথায়: “The territorial assembly built upon universal suffrage seems to be the best method of making final decisions in conflict of wills within the community.” তবে বৃত্তি বা পেশাগত গোষ্ঠীসমূহের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায়। না। তবে এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ‘পরামর্শদানকারী সংস্থার মাধ্যমে আইনসভায় বিভিন্ন বৃত্তি বা স্বার্থগত গোষ্ঠীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলনের ব্যবস্থা করা যায়।