আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) সম্পর্কে আমাদের সবার জানতে ইচ্ছে করে। ফ্রান্সের প্যারিস শহরে আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কেন বিখ্যাত। তাই আমি আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) – আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কেন বিখ্যাত এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আমি আইফেল টাওয়ার, আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা, আইফেল টাওয়ার কেন বিখ্যাত, আইফেল টাওয়ার কোন নদীর তীরে অবস্থিত, আইফেল টাওয়ারের স্থপতি যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। নিচে আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) – আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কেন বিখ্যাত এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচিপত্রঃ আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) – আইফেল
টাওয়ার (Eiffel Tower) কেন বিখ্যাত
আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower)
বিশ্বের সবচেয়ে এক অন্যতম দৃষ্টান্তমূলক পরি কাঠামো হলো আইফেল টাওয়ার। এই টাওয়ারটিকে সর্বাধিক পরিদর্শনে স্থান রূপে গড়ে তুলেছেন যার কারণে বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ জনসাধারণ এটি পরিদর্শন করে। ফ্রান্সের সর্বাধিক পরিচিত প্রতীক হলো আইফেল টাওয়ার। এটি লা তুর ইফেল নামেও পরিচিত। এই টাওয়ারটি সম্পূর্ণ লৌহ কাঠামো। আইফেল টাওয়ার ফরাসি বিপ্লব স্মরণীয় করে রাখতে নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরো বিশ্বের এমন কোন লোক নেই যারা আইফেল টাওয়ারের নাম শোনেননি।
একটি পরিচিত নাম হল আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের একটি প্রধান আকর্ষণ। এই টাওয়ার প্রকৌশলী ছিলেন গ্যাসটেভ আইফেল। গ্যাসটেভ আইফেলের নাম অনুসারে এই টাওয়ারের নামকরণ করা হয় আইফেল tower। এই প্রকৌশলী আর একটি স্তম্ভের ডিজাইন বা পরিকল্পনা করেছিলেন আর সেই স্মৃতিস্তম্ভটি দ্য স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। আইফেল টাওয়ারটি খোদাই করেছিল ৭২ জন ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকৌশলী, বৈজ্ঞানিক এবং গনিতজ্ঞ এর অবদানের কথা মাথায় রেখে।
আরো পড়ুনঃ সেন্টি লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ- সম্পর্কে জেনে নিন
এই টাওয়ারের মধ্যে রয়েছে ত্রিস্তরীয় পর্যবেক্ষণ মঞ্চ বা রেস্তোরা। দর্শকেরা সিড়ি বেয়ে বা লিফটের সাহায্যে টাওয়ারের উঠেন। প্যারিসের একটি মহান দৃশ্য অবলোকন করার জন্য টাওয়ার এর ভেতরে রয়েছে দুইটি রেস্তোরা। যার নাম হলো ৫৮ লে ট্যুর আইফেল, লে জুেল ভার্ন। আইফেল টাওয়ার হল একটি বিশ্ব বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক যার কারণে এই আইফেল টাওয়ার থেকে প্যারিসের সমস্ত জায়গা দেখা যায়। আইফেল টাওয়ারের একেবারে শেষে ওঠার জন্য ধাপ বা সিঁড়ি রয়েছে ১৬৬৫ টি ।
সিঁড়ি ছাড়াও আইফেল টাওয়ারে উঠতে লিফট রয়েছে। তাছাড়া এই টাওয়ারে উঠতে ব্যবহার করা যেতে পারে এলিভেটর। এই টাওয়ারে রয়েছে বেশ কিছু লিফট। লিফট গুলোর মধ্যে একটি লিফট নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত যাওয়া যায়। এ ছাড়াও ২ জোড়া লিফট রয়েছে যা দ্বিতীয় তলা থেকে শীর্ষ তলা পর্যন্ত ওঠা যায়।
আইফেল টাওয়ারের (Eiffel Tower) উচ্চতা
আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ১০৫০ ফুট বা ৩২০মিটার। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত এই টাওয়ারটি উচ্চতায় পৃথিবীর উচ্চতম টাওয়ার ছিল।প্রকৌশলী গুস্তাম্ভো আইফেল রেলের জন্য নতুন নকশা প্রণয়ন করতেন আর এই ধারণা থেকে তিনি ১৮.০৩৮ খন্ড লোহার বিভিন্ন আকৃতির ছোট বড় কাঠামো জোড়া দিয়ে তিনি এই আইপিএল টাওয়ার তৈরি করেন। এই আইফেল টাওয়ার নির্মাণে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৩00 শ্রমিক।
আরো পড়ুনঃ সায়েন্স সিটি – কলকাতা সম্পর্কে জানুন
আইফেল টাওয়ারের ওপর দুইবার এন্টেনা স্থাপন করা হয়েছিল যার কারণে আইফেল টাওয়ারের বর্তমান উচ্চতা হল ৩৩০ মিটার বা ১০ ৮৩ ফুট। আইফেল টাওয়ার নির্মাণের ৪০ বছর পর নির্মাণ করা হয় নিউইয়র্কের ক্রিসলার বিল্ডিং। আর এই ক্রিসলার বিল্ডিং নির্মাণের ফলে আইফেল টাওয়ারের চাইতে ক্রিসলার বিল্ডিং এর উচ্চতা বেড়ে যায়।যার কারনে আইফেল টাওয়ারের উপর আবার একটি এন্টেনা যুক্ত করা হয়।
আর এই কারণে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা আবার বেড়ে যায়। যার কারণে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা হয় ১০৬৩ ফুট বা ৩২৪ মিটার। কিন্তু আইফেল টাওয়ারের এই গৌরব বেশি দিন অক্ষুন্ন থাকেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইফেল টাওয়ারের চেয়ে বেশি উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণ করা হয় যার কারণে উচ্চতায় আইফেল টাওয়ার আবার পিছিয়ে পড়ে। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আইপিএল টা আবার ছিল সবচেয়ে উচ্চতা সম্পন্ন স্থাপনা।
আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কেন বিখ্যাত
ফ্রান্সের প্যারিসের একটি প্রধান আকর্ষণ এই আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ারের অন্য নাম হলো ট্যুর আইফেল। ফ্রান্সের মানুষের কাছে এটি বেশি পরিচিত ট্যুর টাওয়ার নামে। এই টাওয়ারটি সম্পূর্ণ নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৭,৮০০,০০০ গোল্ড ফ্রাস্কস। ১৮৮৯ সালে বিশ্ব প্রদর্শনীর জন্য শহরের পক্ষ থেকে একটি স্থাপত্য কাঠামো তৈরি করতে চেয়েছিলেন যেটা হবে ফরাসি বিপ্লবের ১০০তম পূর্তি এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যা ফ্রান্সের গর্ব হয়ে উঠবে।
আর ফ্রান্সের ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে এই উদ্দেশ্য একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রস্তাব ছিল গুস্তাভের আইফেলের। কিন্তু এ সম্পর্কে গুস্তাভের নিজের কোন ধারনা ছিল না। তিনি ঘেঁটেছেন পুরনো স্কেচ গুলি এবং তিনি একটি নকশা তৈরি করেন তার সহযোগী কোয়েসেলিন দ্বারা নির্মিত একটি স্টিলের টাওয়ারের জন্য। এরপর প্রকল্প পাঠানো হয় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়।
আর এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১০৭ টি বিভিন্ন প্রকল্প। আর এই প্রতিযোগীদের মধ্যে ৪ জন নির্বাচিত হন বিজয়ী হিসেব।আর প্রতিযোগীদের বিষয় ছিল আইফেল আর এটি বিজয় ঘোষণা হয়েছিল স্থাপত্যের আবেদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং প্রকল্প পরিবর্তন করার পরে। প্রতি বছর আইফেল টাওয়ার পরি দর্শন করে পাঁচ মিলিয়নের বেশি লোক। টাওয়ারটি পরিদর্শন করেছে প্রচুর লোক অর্থাৎ টাওয়ার নির্মাণ শুরু থেকে পরিদর্শন করেছে ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি লোক।
আরো পড়ুনঃ রানী ভিক্টোরিয়া – ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- টাওয়ারের কাঠামোর ওজন ছিল ১0 হাজার টনের বেশি।
- টাওয়ার নির্মাণে ১৮ হাজারেরও বেশি ধাতবংশ এবং২.৫ মিলিয়ন রিভেট ব্যবহার করা
হয়েছিল। - টাওয়ারটি নির্মাণে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭.৫ মিলিয়ন ফ্রাস্ক যা প্রদর্শনীর সময়
পরিশোধ করা হয়েছে।
এই বিল্ডিং কে ফ্রান্সের প্যারিসের লোকেরা উপলব্ধি করেছিল নেতিবাচক হিসেবে। তাদের বিশ্বাস ছিল যে এই স্থাপত্য শহরের স্থাপত্যের সাথে খাপ খায় না। তারা বারবার আবেদন করেছিল মেয়রের কার্যালয়ে যাতে করে এই নির্মাণ ভেঙ্গে দিয়ে ফেলা হয়। সুতরাং তারা টাওয়ারের বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। গাই ডি মাউপাসান্ট প্রায়ই খাবার খেতে টাওয়ারে অবস্থিত একটি রেস্তোরায় । তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি কেন এত ঘন ঘন এখানে আসেন?
এই প্রশ্নে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন প্যারিস শহরের এটিই একমাত্র জায়গা যেখানে গেলে টাওয়ার দেখা যায় না। শরৎ এবং বসন্তকাল হলো আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের জন্য সবচেয়ে সেরা সময়। এই টাওয়ার এ সূর্যাস্তের পর ২০ হাজার বাল্বের আলোকছটা প্রতি ঘন্টায় পাঁচ মিনিট করে জলতে থাকে। আর এই আলোর কারণে টাওয়ারটি এক অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে। আর এই আলোয় পর্যটকদের আকর্ষণীয় করে তোলে।
টাওয়ারের চূড়া থেকে পুরো শহরের সৌন্দর্য দেখা যায় যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে করে তোলে। শুধু আইফেল টাওয়ার কে কেন্দ্র করে প্রতি বছর কয়েক লক্ষাধিক পর্যটক আসে প্যারিসে। বিশেষ দিনগুলোতে বিশেষ রঙে সাজানো হয় আইফেল টাওয়ার কে। যার কারণে আইপিএল টাওয়ারের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের কবিতা সোনার তরির মতো হয়ে যায়। কবি বলেন, ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট্ট সে তোরি আমারই সোনার ধানে গিয়াছে ভরি।
ঠিক তেমনি প্যারিস শহরে ও তিল ধরার মতো ঠাঁই থাকে না এত বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। এই আইফেল টাওয়ার শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে তা নয়, এটি ফ্রান্সের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক আইফেল টাওয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে বিশ্বের ঐতিহ্যপূর্ণ শীর্ষস্থান হিসেবে। আর তখন একটু বেশি সুবিধা পাওয়া যায় প্যারিস ভবনের জন্য। আর এই সকল কারণে আইফেল টাওয়ার এত বিখ্যাত।
আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কোন নদীর তীরে অবস্থিত
ফ্রান্সের প্যারিস শহরের আইফেল টাওয়ারটি প্যারিসের সেইন নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এই টাওয়ার পৃথিবীর অন্যতম নিদর্শন। ১৮৮৯ সালে এই আইফেল টাওয়ারটি নির্মাণ করেন গোস্তাভ আইফেল। এই টাওয়ারের উচ্চতা প্রায়ই ১০৫০ ফুট। এত সুবিশাল টাওয়ার তৈরি করতে কাজ করেছিলেন মাত্র ৩০০ জন শ্রমিক। এবং তারা এই টাওয়ার নির্মাণে কাজ শেষ করেন মাত্র দুই বছর দুই মাস দুই দিন সময়ে। ১৯৪০ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই আইফেল টাওয়ারটি ছিল সবচেয়ে উচ্চতর টাওয়ার।
আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কোন শহরে অবস্থিত
পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হলো আইফেল টাওয়ার আর এই বিখ্যাত স্থাপনাটি ইউরোপ মহাদেশের ফ্রান্সের প্যারিস শহরে অবস্থিত WTO এর বর্তমান তথ্য অনুযায়ী ফ্রান্স হলো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। তাই যাদের প্রশ্ন থাকে আইফেল টাওয়ার কোন শহরে অবস্থিত তারা অনায়াসে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ঘুরে আসতে পারেন। আর উপভোগ করতে পারেন আইফেল টাওয়ারের সৌন্দর্য। কেননা প্রতিবছর প্যারিস শহরের আইফেল টাওয়ার ভ্রমণ করে প্রায় সাত মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক আসে আসে।
আইফেল টাওয়ারের (Eiffel Tower) স্থপতি কে
আইফেল টাওয়ারের স্থপতি গুস্তাভ আইফেল। প্রকৌশলী গস্তাভ সেই সময় রেলের সেতুর জন্য নকশা প্রণয়ন করেন। টাওয়ার নির্মাণে তিনি তার এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। ম্যারিস কোকলেন, নুগাইয়ার স্টিভেন সাভেস্টার এর তৈরিকৃত নকশা এবং ৩০০ শ্রমিকের দুই বছর দুই মাস দুই দিন পরিশ্রমের মধ্যে গড়ে ওঠে ১০৫০ ফুট বা ৩২০মিটার উচ্চতার এই আইফেল টাওয়ার। এই আইফেল টাওয়ার তৈরি হয়েছিল ১৮.০৩৮ খন্ড ছোট বড় লোহার কাঠামো দিয়ে আর এই টাওয়ার তৈরি করতে নাট বল্টুর প্রয়োজন হয়েছিল ২৫ লক্ষ।
প্রথমে স্পেনে এই টাওয়ার নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেন গুস্তাভ আইফেল। তবে স্পেন এই স্থাপনাকে অখণ্ড মনে করেন এবং তার দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সে বিশ্বমেলা অনুষ্ঠিত হয় আর এই মেলায় প্রবেশ পথ হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এই টাওয়ার। এরপরে বেতার মাধ্যম ও পর্যবেক্ষণ হিসেবে এই টাওয়ার ব্যবহার করা হলে স্থায়িত্ব প্রদান করা হয় এই টাওয়ারের।
আরো পড়ুনঃ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ – হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আইফেল টাওয়ার ও হিটলার
১৯৪০ সালে হিটলার প্যারিস শহর দখল করে নেন যার কারণে প্যারিস শহরবাসী লিফটের তার কেটে দেয়। তাই হিটলার কে আইফেল টাওয়ার দেখার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়েছিল। হিটলার কে ১৬৬৫ টি সিঁড়ি অতিক্রম করে আইফেল টাওয়ার দেখতে হয়েছিল। আর এই কারণে বলা হয় হিটলার প্যারিস শহর দখল করেছে কিন্তু জয় করতে পারেনি এই আইফেল টাওয়ার।
আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কত তলা বিশিষ্ট
ফ্রান্সের প্যারিস শহরে যে আইফেল টাওয়ার রয়েছে তা তিন তলা বিশিষ্ট। এই টাওয়ারের প্রথম তলায় রয়েছে রেস্টুরেন্ট এবং পর্যটকদের জন্য বসার স্থান। পর্যটকরা এখান থেকে প্যারিস শহরের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আইফেল টাওয়ারের তৃতীয় তলার উচ্চতা ১ হাজার ফুট আর এই টাওয়ারের নির্মাতা এই টাওয়ারে তৃতীয় তলায় নিজের জন্য একটি প্রাইভেট রুম তৈরি করেছিলেন। আর এই তলাতে তৎকালীন সময়ে যাতা ছিল বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের।
এই টাওয়ারে রয়েছে ১৬৬৫ টি সিঁড়ি। তবে এই টাওয়ার এর প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় উঠতে সিঁড়ি এবং লিফট দুটোই ব্যবহার করা যায় কিন্তু টাওয়ারের তৃতীয় তলায় উঠে শুধু লিফট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লিফটে ওঠার জন্য খরচ হয় উনিশ ১৯ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকাই এর পরিমাণ হল প্রায় ১৮০০ টাকা। ১০ হাজার টোন হলো এই টাওয়ারের ওজন। আইফেল টাওয়ার সম্পূর্ণ লোহা তৈরি তাই এই টাওয়ারটি ৭ বছর পর পর রং করা হয় মরিচার সাথে হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।
৬০ টোন রঙের প্রয়োজন হয় এই সম্পূর্ণ টাওয়ার একবার রং করতে। যার ওজন প্রায় দশটি হাতির ওজনের সমান। মোট ১৮ বার এই টাওয়ার থেকে এখন পর্যন্ত রং করা হয়েছে। বর্তমানে আইফেল টাওয়ারের রেপ্লিকা রয়েছে ৩০ টিরও বেশি। ২৫ হাজার জনের বেশি বর্তমানে আইফেল টাওয়ারে আরোহন করে।
আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) কত সালে নির্মাণ করা হয়
আইফেল টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি এবং এই টাওয়ারে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮৮৯ সালের ৩১ শে মার্চ। এই টাওয়ার নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ৩০০ জন শ্রমিকের দুই ২ বছর ২ মাস এবং দুই ২ দিন।
রাতের আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower)
১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। ১০৫০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ার বিশ হাজার বাল্বের আলোয় আলোকিত হয়। আর এর ফলে কয়েক শত গুন শহরের সৌন্দর্য বেড়ে যায়। টাওয়ারের মনমুগ্ধকর এত সৌন্দর্য দেখতে টাওয়ারের আশেপাশের এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যায়। তবে সবাই রাতে আইফেল টাওয়ার ঘুরে দেখতে পারবে কিন্তু কোন ছবি তুলতে পারবে না।
আরো পড়ুনঃ ভিক্টোরিয়া – মেমোরিয়াল- স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সম্পর্কে জেনে নিন
ছবি তোলার ব্যাপারে এখানে বিধি নিষেধ রয়েছে। তবে ছবি তুলতে হলে বাড়তি অনুমতির প্রয়োজন হয়। অনুমতি না নিলে জেল বা জরিমানা হতে পারে। ছবি তোলার ক্ষেত্রে এমন কড়াকড়ির কারণ হলো দেশটির পাবলিক ডোমেন আইফেল টাওয়ারের ছবি এবং আলোকিত আইফেল টাওয়ার মূল নকশাটির কপিরাইট সংরক্ষণ করা। তাই দিনের বেলায় আইফেল টাওয়ারের ছবি তোলা গেলেও রাতে ছবি তোলা নিষেধ।
আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) সম্পর্কে শেষ কথা
আইফেল টাওয়ার বিশ্বের একটি আশ্চর্যকর স্থাপনা প্রকৃতপক্ষে আইফেল টাওয়ারের ওজন ১০ হাজার ১০০ টন। আর এই স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল লোহার খন্ড। এই টাওয়ার টি সর্বমোট ১৬৬৫ টি সিঁড়ি বা ধাপ রয়েছে এবং পাশাপাশি রয়েছে লিফটের ব্যবস্থা। তবে টাওয়ারে চূড়া থেকে এক নজর প্যারিস শহর দেখার অনুভূতি সারা জীবন মনে রাখার মত। প্যারিসের কথা যখনই মনে পড়বে তখনই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠবে প্যারিসের যুগান্তকারী সেই ঐতিহাসিক টাওয়ারের কথা।
আরো পড়ুনঃ জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তি – বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক অর্জন সম্পর্কে জেনে নিন
আইফেল টাওয়ার সারা বছরই পরিদর্শন করা যায় তবে ১৫ জুন থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সকাল সন্ধ্যা পরিদর্শনের জন্য আইফেল টাওয়ার খোলা থাকে। আবার বছরের অন্যান্য সময় এর ভিতরে প্রবেশ করা যায় সকাল দশ ১০টা থেকে রাত্রি ১১ঃ০০ টা পর্যন্ত। তবে বিশেষ সময়গুলোতে এর পরিদর্শন সময় আরো বাড়ানো হয়।
আমি আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। আমার যদি কোন ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে আপনারা নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন এবং যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে একটি লাইক এবং কমেন্টস করে আমাকে জানাবেন।
Leave a comment