প্রশ্নঃ আইন কী স্বাধীনতার পূর্বশর্ত?

অথবা, অর্থনৈতিক সাম্য কী?

ভূমিকাঃ আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নির্ধারণ আধুনিককালে একটি জটিল রাজনৈতিক প্রশ্ন। আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে স্বাধীনতা ব্যক্তির পূর্ণতা অর্জনের পথে সকল বাধা দূর করে। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক ব্যাপক।

আইন স্বাধীনতার শর্ত ও ভিত্তিঃ স্বাধীনতা আইনের শর্ত। আইনের উদ্দেশ্য স্বাধীনতাকে সহজলভ্য করা এবং প্রত্যেকের জন্য নিশ্চিত করা স্বাধীনতা খর্ব করা নয়। আইনের অনুপস্থিতিতে সমাজ বিশৃঙখলাময়। ফলে সকলেরই স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। আইনের অবর্তমানে সবল দুর্বলের ওপর অত্যচার করে। ফলে দুর্বলের স্বাধীনতা সবল কর্তৃক অপহৃত হয়। যেখানে আইনের শাসন রয়েছে সেখানে সবল ও দুর্বল প্রত্যেকেই তাদের স্বাধীনতা উপভােগ করতে পারে। সুতরাং আইন স্বাধীনতার শর্ত।

(১) আইন স্বাধীনতার রক্ষাকবচ স্বরূপঃ শাসনতান্ত্রিক আইন জনগণকে মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে অনুপ্রাণিত করে। আইন সরকারের হস্তক্ষেপ থেকে মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। এ প্রসঙ্গে জন লক বলেছেন, আইন স্বাধীনতা খর্ব বা বাধা প্রদান করে এরূপ ধারণা ভ্রান্ত বরং আইন স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারিত করে।

(২) আইন স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করেঃ স্বেচ্ছাচারী শাসক হতে আইন স্বাধীনতাকে রক্ষা করে। আইনের অবর্তমানে শাসকগণ স্বেচ্ছাচারী হয়ে গণস্বাধীনতা রক্ষা করে। আইনের সঠিক প্রয়োেগ থাকলে শাসকগণ শাস্তির ভয়ে স্বেচ্ছাচারী হয় না।

(৩) আইন স্বাধীনতার অভিভাবকঃ আইন স্বাধীনতার অভিভাবক হিসাবে কাজ করে। পিতামাতা যখন সন্তানকে সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে, তেমনি আইন আপন শক্তির সাহায্য স্বাধীনতাকে নিরাপদ রাখার সকল ব্যবস্থা করে।

(8) আইন স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেঃ আইনের উপস্থিতি স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। আইনের উপস্থিতিতে এমন এক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় যেখানে সুন্দর ও সভ্য জীবনযাপনের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। ব্রীচের মতে, “স্বাধীনতা বলতে যদি আত্মবিকাশর জন্য প্রয়ােজনীয় সুযােগ-সুবিধা বুঝায়, তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই আইনের দ্বারা সৃষ্টি হয়।”

পরিশেষঃ উপযুক্ত আলােচনা শেষে বলতে পারি যে, আইন স্বাধীনতার পূর্বশর্ত। আইনছাড়া প্রকৃত স্বাধানতা কল্পনা করা যায় না।