অথবা, আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক কীরূপ? সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ আইন মানব সমাজের দর্পণস্বরূপ। বৃহত্তর সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় কাঠামাের দ্বারা আইনের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়ে থাকে অর্থাৎ আইন বৃহত্তর সমাজ জীবনে আপেক্ষিক। আইনের যথার্থ স্বরূপ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা এবং ভাব ও নীতির ওপর নির্ভরশীল।
আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্কঃ আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নিম্নে আলােচনা করা হলােঃ
(১) আইন স্বাধীনতার অভিভাবকঃ আইন স্বাধীনতাকে লালন-পালন করে। কোনাে বিশেষ কুচক্রীর চক্রান্তে জনগণের স্বাধীনতা ব্যাহত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইন জনগণের স্বাধীনতার অভিভাবকরূপে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে এবং যে কোন ধরনের চক্রান্ত থেকে জনগণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে।
(২) আইন স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেঃ আইন স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করে। আইনসভা কর্তৃক স্বীকত আইনই জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করে। আইন থাকলে জনগণ স্বাধীনতায় আঘাতকারীদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। জনগণ হেবিয়াস কর্পাসের সাহায্যে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে।
(৩) আইন জনগণের আত্মবিকাশের সুযােগ দেয়ঃ স্বাধীনতা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ সম্ভবপর নয়। কিন্তু এরূপ অধিকার ভােগ করতে হলে আইন দ্বারা তা স্বীকৃত হতে হবে। তাছাড়া বেঁচে থাকার জন্য সকল সুযােগ-সুবিধা আইন দ্বারা সৃষ্টি হয়।
(৪) আইন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করেঃ সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে মানুষের স্বাধীনতার ওপর আঘাত আসে।কেননা সমাজের বিশৃঙ্খলা দূরীভূত করে জনগণের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে পর্যাপ্ত আইনের যথার্থ প্রয়ােগ আবশ্যক। আইন এ সকল শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে স্বাধীনতা উপভােগের নিশ্চয়তা দেয়।
(৫) আইন দ্বারা স্বাধীনতার অধিকার নির্দিষ্টঃ স্বাধীনতার অর্থ হলাে ব্যক্তির আইনানুযায়ী স্বীকৃত অধিকার ভােগ করা। রাষ্ট্রের মধ্যে ব্যক্তি ঐসব অধিকারই অনুশীলন করতে পারবে যেসব অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরােধী নয় বরং পরস্পরের পরিপূরক। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Locke বলেন, ‘Where there is no law there no freedom’ আইন যাতে স্বাধীনতার পরিপন্থী না হয় সেজন্য জনগণকে সদা জাগ্রত ও সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের সতর্কতাই আইনকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচে পরিণত করতে পারে।
Leave a comment