উত্তরঃ আইনবিজ্ঞানের কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় না কিন্তু আইন প্রয়োগকালে এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আইনবিজ্ঞানের প্রয়োজন হয়। তাই আইনবিজ্ঞান পাঠের প্রত্যক্ষ প্রয়োগ না হলেও এর বাস্তব মূল্য অপরিসীম। এগুলি মূলতঃ নিম্নরূপ-
প্রথমতঃ আইনের মৌলিক ধারণাসমূহ বিশ্লেষণ করে আইনবিজ্ঞান। তাই অধ্যাপক হল্যান্ড আইনবিজ্ঞানকে ‘আইন শিক্ষার ব্যাকরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আইনবিজ্ঞান পাঠ করলে আইনের মূল নীতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই অবৈধ কার্য, আইনগত ক্ষতি, অভিপ্রায়, শাস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে আইনবিজ্ঞান যেরূপ বিশ্লেষণ করে সেগুলি আয়ত্ব করলে একজন আইনের ছাত্র কোন আইনগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চিত্তাকর্ষক যুক্তি প্রদর্শনের কলা কৌশল আয়ত্ব করতে পারে। কাজেই একজন সুদক্ষ আইনজীবি বা আইনবিদ হতে হলে আইনবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়তঃ সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য আইন গৃহীত হয় বা প্রণীত হয়। স্যামন্ড বলেন, “দেশের আইন কাঠোমোর উপর প্রয়োজনীয় আলোকপাত করাই হলো আইনবিজ্ঞান পাঠের মূখ্য উদ্দেশ্য।” একটি দেশের আইন সভা বা আইন প্রণেতাগণ আইনবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলির উপর ভিত্তি করে দেশের জন্য বিজ্ঞান সম্মত আইন প্রণয়নে সচেষ্ট হন। কাজেই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনবিজ্ঞানের ভূমিকাই যথেষ্ট। নতুন কোন আইন প্রণীত হলে এর কার্যকারিতা কিরূপ হবে এবং ইহা কিভাবে ব্যাবত হতে পারে সে সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হলে আইনবিজ্ঞান যথার্থভাবে পাঠ করতে হবে।
তৃতীয়তঃ আইনবিজ্ঞান পাঠ করে এক ব্যক্তি সচেতন নাগরিক হতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তির কিছু সামাজিক দায়িত্ব ও অধিকার আছে। একজনের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে অন্যের অধিকার যেনো লংঘিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। আইন বিজ্ঞান এরূপ প্রয়োজনীয় জ্ঞান দেয়।
চতুর্থতঃ বিচার প্রশাসন আইনবিজ্ঞানের এক অন্যতম বিষয় বিধায় বিচার কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আইনবিজ্ঞান অধ্যয়নের প্রয়োজন। শাস্তির উদ্দেশ কি এবং বিভিন্ন প্রকার শাস্তির প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে হলে আইনবিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন। একজন ভাল বিচারক হতে হলে তাকে অবশ্যই একজন ভাল আইন বিজ্ঞানী হতে হবে।
পঞ্চমতঃ এই শাস্ত্র অধ্যয়নের দ্বারা মানুষের মন আইনগত চিন্তাধারার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়। তাই আইনে গবেষণার ক্ষেত্রে আইনবিজ্ঞান যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এজন্য আইনশাস্ত্র গবেষকদের জন্য আইন বিজ্ঞান পাঠ করা অত্যাবশ্যকীয়।
ষষ্ঠতঃ আইনবিজ্ঞান যেহেতু আইনের ব্যাকরণ, চক্ষু ও অভিধান স্বরূপ। আইনে যথার্থ জ্ঞানলাভ করতে হলে প্রথমে আইনবিজ্ঞানে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন।
পরিশেষেঃ ইহা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, আইনবিজ্ঞান শুধু যথার্থ আইনবিদ, বিচারক, আইন গবেষক এবং সচেতন নাগরিক হতে সাহায্য করে তাই নয় এই শাস্ত্র পাঠে লব্ধ জ্ঞান সমগ্র আইনগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
আইনবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তার পয়েন্টসমূহঃ এছাড়া নিন্মলিখিত কারণ আইনের জ্ঞানাজনে আইনবিজ্ঞান পাঠ করার প্রয়োজন আছে। পয়েন্টসমূহ উল্লেখ করা হলো, যথাঃ-
১। আইন সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ
২। আইনগত চিন্তাধারার বিকাশঃ
৩। আইন শিক্ষার ব্যাকরণঃ
৪। আইনের মৌলিক নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ
৫। প্রচলিক আইনের ব্যাখ্যা প্রদানঃ
৬। আইন কাঠামোর উপর আলোকপাত করা যায়ঃ
৭। আইন প্রণয়ন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়ঃ
৮। বিচার কার্যে আইনবিজ্ঞানের ভূমিকাঃ
৯। বিচার বিভাগীয় নজীর সম্পর্কে জ্ঞানঃ
১০। আইনের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ
১১। আইনের প্রয়োগবিধি অবগত হওয়াঃ
১২। আইনে ব্যবহৃত শব্দের ব্যাখ্যা অবগত হওয়াঃ
১৩। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধানের ক্ষেত্রে আইনবিজ্ঞানঃ
১৪। অন্যান্য বিষয়ের সহিত আইনের সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়ঃ
১৫। ন্যায়বিচার সম্পর্কে জ্ঞান লাভঃ
১৬। আইন সম্পর্কীত উপদেশ লাভঃ
১৭। পূর্ব হতে অধিকার-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে আইনবিজ্ঞানঃ
১৮। জটিল মামলার সমাধানে আইনবিজ্ঞানঃ
১৯। সামাজিক পরিবর্তনে আইনবিজ্ঞানের ভূমিকাঃ
২০। আইনজীবিদের জন্য আইনবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তাঃ
ট্যাগঃ আইন বিজ্ঞান বই pdf, আইন বিজ্ঞান কি, যুক্তি শাস্ত্র আইন বিজ্ঞানের জনক কে, জুরিসপ্রুডেন্স বই
Leave a comment