প্রশ্নঃ আইনত ও কার্য স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও সরকারের স্বীকৃতির পার্থক্য কি?

ভূমিকাঃ স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিসত্ত্বা প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন ভূ-খণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করে।

স্বীকৃতি (Recognition) কাকে বলেঃ কোন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, নতুন গঠিত কোন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেওয়া কে স্বীকৃতি বলে।

অধ্যাপক ওপেনহাম এর মতে, ‘কোন রাষ্ট্র শুধু স্বীকৃতির মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক সত্ত্বা লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়বস্তু হিসেবে গণ্য হয়।’

অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত একটি রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিসত্ত্বা প্রতিষ্ঠিত হয় না। কারো কারো মতে স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত একটি রাষ্ট্র পূর্ণতা লাভ করে না।

এই স্বীকৃতি কোন অধিকার নয়। অর্থাৎ অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দাবী করা যায় না । আন্তর্জাতিক আইনে নতুন গঠিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে পুরাতন রাষ্ট্রের উপর কোন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয় নি। এটি নির্ভর করে সম্পূর্ণভাবে কোন রাষ্ট্রের মর্জির উপর।

আইনত ও কার্যত স্বীকৃতির পার্থক্যঃ নিম্নে আইনত স্বীকৃতি ও কার্যত স্বীকৃতির পার্থক্য উল্লেখ করা হলো- 

পার্থক্যের বিষয় 

আইনত স্বীকৃতি

কার্যত স্বীকৃতি 

(১) সংজ্ঞাগত পার্থক্য 

কোন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেওয়া এবং কূটনৈতিক ও অন্যান্য সম্পর্ক স্থাপন করাকে আইনত স্বীকৃতি বলে।

নতুন গঠিত কোন রাষ্ট্রকে আইনত স্বীকার না করে বিভিন্ন কাজের দ্বারা স্বীকার করা হলে তাকে কার্যত স্বীকৃতি বলে। 

(২) প্রতিশব্দগত পার্থক্য 

আইনত স্বীকৃতির প্রতিশব্দ- De-jure Recognition.

কার্যত স্বীকৃতির প্রতিশব্দ- De-facto Recognition. 

(৩) মামলাগত পার্থক্য

আইনত স্বীকৃত দেশের আদালতে মামলা দায়ের করা যায়৷

কার্যত স্বীকৃত দেশের আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না।

(৪) প্রকৃতিগত পার্থক্য 

আইনত স্বীকৃতি স্থায়ী প্রকৃতির 

কার্যত স্বীকৃতি অস্থায়ী প্রকৃতির। 

(৫) প্রত্যাহারগত পার্থক্য 

আইনত স্বীকৃতি প্রত্যাহার করা যায় না। 

কার্যত স্বীকৃতি প্রত্যাহার করা যায়।

(৬) সত্ত্বাগত পার্থক্য

আইনত স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক সত্ত্বা তৈরি হয়।

কার্যত স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক সত্ত্বা তৈরি হয় না।

(৭) কূটনীতিগত পার্থক্য

আইনত স্বীকৃতির পর সেই দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায়৷ 

কার্যত স্বীকৃতির পর সেই দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। 

(৮) সম্পত্তি উদ্ধারগত পার্থক্য

আইনত স্বীকৃতিদাতা দেশের বিরুদ্ধে সম্পত্তি উদ্ধারের দাবী করা যায়।

কার্যত স্বীকৃতিদাতা দেশের বিরুদ্ধে সম্পত্তি উদ্ধারের দাবী করা যায় না। 

(৯) সন্ধিচুক্তিগত পার্থক্য

আইনত স্বীকৃতির পর উভয় দেশের মধ্যে সন্ধি-চুক্তি হতে পারে। 

কার্যত স্বীকৃতির পর সেই দেশের সাথে সন্ধি-চুক্তি হতে পারে না। 


রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও সরকারের স্বীকৃতির পার্থক্যঃ নিম্নে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও সরকারের স্বীকৃতির পার্থক্য উল্লেখ করা হলো : 

পার্থক্যের বিষয়

রাষ্ট্রের স্বীকৃতি 

সরকারের স্বীকৃতি

(১) সংজ্ঞাগত পার্থক্য 

নতুন গঠিত কোন রাষ্ট্রকে কর্তৃক অন্যান্য রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেওয়া কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বলে। 

নতুন গঠিত কোন সরকারকে অন্যান্য রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকার করে নেওয়া কে সরকারের স্বীকৃতি বলে। 

(২) প্রতিশব্দগত পার্থক্য 

রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে ইংরেজিতে Recognition of State বলে। 

সরকারের স্বীকৃতিকে ইংরেজিতে Recognition of Government বলে। 

(৩) স্বীকৃতিগত পার্থক্য 

সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়।

রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দিয়ে সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।

(৪) বৈশিষ্ট্যগত পাৰ্থক্য 

রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হলে উক্ত রাষ্ট্রের ৫টি উপাদান বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়।

সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হলে কোন উপাদান বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয় না।

(৫) স্থায়িত্বগত পার্থক্য

কোন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদান করলে তা স্থায়ী স্বীকৃতি বলে গণ্য হয়। 

কোন সরকারকে স্বীকৃতি প্ৰদান করলে তা স্থায়ী স্বীকৃতি বলে গণ্য হয় না।

উপসংহার: স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিসত্ত্বা প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ স্বীকৃতির মাধ্যমে কোন ভূ-খণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করে। কোন রাষ্ট্র স্বীকৃতি লাভ করলেই কেবল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে পারে।