সূচনা: হায়দার আলি নামে জনৈক ভাগ্যান্বেষী যােদ্ধা অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মহীশূরে একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে হায়দার আলির সঙ্গে ইংরেজদের কোনাে বিরােধ না থাকলেও কিছুকাল পর উভয়পক্ষের বিরােধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। এর ফলে হায়দার আলি ও তার পুত্র টিপু সুলতান ইংরেজদের বিরুদ্ধে চারটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধগুলি ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ নামে পরিচিত ছিল।
[1] হায়দার-ইংরেজ সম্পর্ক: হায়দার আলি মহীশূরকে একটি পরাক্রান্ত রাজ্যে পরিণত করে। প্রথমদিকে হায়দার ব্রিটিশ বিরোধী ছিলেন না, তার প্রধান লক্ষ্য ছিল মারাঠা ও নিজামের আক্রমণ প্রতিরােধ করে মহীশূরের অখণ্ডতা রক্ষা করা। কিন্তু কোম্পানির মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ হায়দার-বিরােধী আর্কটের নবাব মহম্মদ আলির সঙ্গে সদ্ভাব গড়ে তুললে হায়দারের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের বদলে শত্রুতায় পরিণত হয়।
[2] ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ: কখনও এককভাবে, কখনও মারাঠা ও নিজামের সঙ্গে মিলিতভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিজোট গঠন করে হায়দার দুটি যুদ্ধের অবতারণা করেন।
-
প্রথম যুদ্ধ: প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময় হঠাৎ একদল অশ্বারােহী সৈন্য নিয়ে হায়দার দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটি মাদ্রাজের উপকণ্ঠে হাজির হন। ভীত মাদ্রাজ কাউন্সিল হায়দারের সঙ্গে মাদ্রাজের সন্ধি (১৭৬৯ খ্রি.) করতে বাধ্য হয়। সন্ধির শর্তানুযায়ী হায়দার ও ইংরেজ কর্তৃপক্ষ উভয়েই একে অপরের বিজিত স্থান ও যুদ্ধবন্দি প্রত্যর্পণ করেন। এ ছাড়াও স্থির হয় হায়দার তৃতীয় কোনাে শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে তাকে ইংরেজরা রক্ষা করবে।
-
দ্বিতীয় যুদ্ধ: পেশােয়া মাধব রাও মহীশূর আক্রমণ (১৭৭০ খ্রি.) করলেও মাদ্রাজের সন্ধি শর্ত মেনে ইংরেজরা হায়দারকে সাহায্য করেনি। এর পাশাপাশি গুন্টুর সমস্যা সৃষ্টির জন্য হায়দার ইংরেজদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুম্ধ হন। এই অবস্থায় হায়দার বুঝতে পারেন ইংরেজরাই মহীশূরের প্রধান শত্রু। তাই ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (১৭৭৫ খ্রি.) শুরু হলে সুযােগ বুঝে হায়দার ইংরেজ-বিরােধী মহীশূর-মারাঠা শক্তিজোট গড়ে তােলেন। পরে নিজামকেও ওই জোটে টেনে এনে তিনি ইংরেজ শক্তির উচ্ছেদে অগ্রসর হন। শুরু হয় দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৮০ খ্রি.)। বিভিন্ন রণক্ষেত্রে হায়দার ব্রিটিশ শক্তিকে বিপর্যস্ত করে তালেন। ঠিক এই সময় ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে হঠাৎ হায়দারের মৃত্যু হয়।
-
কৃতিত্ব: হায়দার আলি দেশবাসীকে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তিনি নিজেও অসামান্য দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে লড়াই করে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে ভারতমাতার বীর সন্তানরা সহজে পরাজয় স্বীকার করতে রাজি নয়। তারা নিজেদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই করতে জানে।
উপসংহার: ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে জয়ী হয়ে ইংরেজ শক্তি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে অনেকটা এগিয়ে যায়।
Leave a comment