অষ্টাদশ শতকের ইংরেজি সাহিত্যে লিরিক্যাল ব্যালাডস্-এর গুরুত্ব কী?
অষ্টাদশ শতকের ইংরেজি সাহিত্যে এক নতুন মোড় নিয়ে এসেছিল উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এবং সাম্যুয়েল টেলার কোলরিজ এর যুগ্ম রচিত ‘লিরিক্যাল ব্যালাডস্’ কাব্যগ্রন্থ। অষ্টাদশ শতকের ক্ল্যাসিক ধারার কবিদের পথ থেকে সরে এসে প্রকৃতি ও মানুষের দিকে ফিরে তাকালেন কবিদ্বয়। শুরু হল নতুন যুগ-প্রকৃতিতে প্রত্যাবর্তন (Return to Nature) যুগের। এ যুগে সূচিত হল বিস্ময় ও রহস্যের পুনর্জন্মের (Renaissance of Wonder and Mystery) কোলরিজের কবিতায় অলৌকিক রহস্যের বাতাবরণ সৃষ্টি হল। আর ওয়ার্ডওয়ার্থের কবিতায় নিত্য পরিচিত জগৎ নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে কবির বিস্ময়-বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল। ইংরেজি সাহিত্যে রোমান্টিক ভাবনার অতি মৃদুটান অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে সূচিত হলেও, বলতে গেলে, ‘লিরিক্যাল ব্যালাডস্’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে নতুন যুগ প্রভাত বিঘোষিত হল।
‘দি থ্রিল্যুড’ (The Prelude) কাব্যগ্রন্থে কবির কী মানসিকতার পরিচয় নিহিত?
আত্মকাহিনীমূলক কাব্যগ্রন্থ ‘দি প্ৰিল্যুড’ (The Prelude) কবি ওয়ার্ডওয়ার্থ রচনা করেন ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে। সমালোচকদের মতে এই কাব্যগ্রন্থটি কবির শ্রেষ্ঠ আত্মকাহিনীমূলক কাব্যগ্রন্থ। এখানে কবি নিজেকে ধরা দিয়েছেন। তিনি অনুভব করেছেন প্রকৃতির বুকের এক পথিক রূপে। প্রথমত, কলেজের ছুটিতে রাত্রে বনে বনে বেড়ানোর সময় তিনি নিজেকে এক উৎসর্গিত আত্মা বলে অনুভব করেছেন। এর পর ‘দি সিম্পলন পাস’ (The Simplon Pass) বিষয়ক কবিতাবলীতে তিনি উপলব্ধি করলেন বিশ্বচরাচর ঈশ্বরসৃষ্ট। বৃষ্টি, রৌদ্র, তুষার, কুয়াশা সবই কোনো এক ইচ্ছার মূর্তিরূপ। জগতের সর্বত্র তাঁর ইচ্ছাই তরঙ্গিত। এমনকি কবি নিজেও তারই ইচ্ছার প্রকাশ। কবির ‘টিনটার্ন অ্যাবে’ কবিতার মধ্যেও এই মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে। এই যে বিশ্ববোধ চেতনা, এই হল কবির অন্ত্যরোপলব্ধি। নিজেকে প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে সমগ্র প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে অনুসন্ধান করে আত্মপরিচয় ব্যক্ত করেছেন কবি এখানে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘মোর জীবনে বিচিত্র রূপ ধরে তোমার ইচ্ছা তরঙ্গিছে’—ভাবনাই ব্যক্ত করে আত্মমানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন কবি সত্য ভাষণে।
‘ওয়ার্ডওয়ার্থ প্রকৃতির কবি’—সমালোচকদের এই মতের পক্ষে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
কবি ওয়ার্ডওয়ার্থের অন্তরের গভীরে যে সত্য নিহিত ছিল, তা হল প্রকৃতিই মানুষের Friend, Philosopher and Guide। এবং নিজেকে তিনি উপলব্ধি করেছেন প্রকৃতির বুকের এক পথিক রূপে। তাঁর কাব্যে তাই প্রকৃতি কেবল ল্যান্ডস্কেপ বা সৌন্দর্যময়ী রূপে নয়, জীবন্ত রূপে, মানুষের শেষ আশ্রয় রূপে, প্রাণের আরাম-মনের আনন্দ-আত্মার শাস্তি ক্ষত নিরাময়ক রূপে প্রতিভাত হয়েছে। প্রকৃতিকে ভালোবেসে তিনি ভালোবেসেছেন মানুষকে। তার ‘লুসি’ (Lucy), ‘দ্য ওল্ড কাম্বারল্যান্ড বেগার’ (The Old Cumberland Beggar) প্রভৃতি কবিতার মানুষেরা মাটির কাছাকাছির মানুষ বা প্রকৃতির বুকে লালিত। “দি থ্রিল্যুড’ (The Prelude) কাব্যগ্রন্থে কবি আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে তো পরিষ্কার ভাবেই বলেছেন যে তিনি এই বিশ্বচরাচরে প্রকৃতির মতোই ঈশ্বরসৃষ্ট। প্রকৃতির বুকে এক উৎসর্গিত আত্মা। তাঁর এই অনুভব, উপলব্ধি, চেতনা সবই তাঁর প্রকৃতি প্রেম তথা আত্মোপলব্ধির জারণ। তাই ওয়ার্ডস্ট্ওয়ার্থ প্রকৃতির কবি-সমালোচকদের এই মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে সমর্থনযোগ্য।
Leave a comment