রীতি হচ্ছে পদচারণার বিশিষ্ট ভঙ্গি। ‘বিশিষ্টা পদরচনা রীতিঃ । যে কবিতায় পদগুলি এমনই সুন্দর কায়দায় সজ্জিত করা হয়—যাতে এই পদসংস্থাপনে একটা নতুন সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়—বিশিষ্টভাবে পদচারণার এই ভঙ্গিকেই বামন প্রমুখ আলংকারিকেরা ‘রীতি’ বলেছেন।

ইংরাজিতে style বলতে যা বোঝায়— সংস্কৃত আলংকারিকেরা তাকেই রীতি বলে ভেবেছেন। (কিন্তু ইংরাজি style হল লেখকের স্বকীয় চিন্তা প্রকাশের এক বিশেষ নিজস্ব পদ্ধতি ভিন্ন লেখক ভিন্নভাবে চিন্তা করেন, বক্তব্য পেশ করেন—তাই বিভিন্ন style-এর উৎপত্তি ; কিন্তু সংস্কৃত পণ্ডিতেরা রীতিকে ঠিক এই দৃষ্টিতে দেখেননি। তাঁরা পদসংস্থাপনার ভঙ্গিকে রীতি বলে ধরেছেন।

কাব্যের আত্মা হল রীতি বা স্টাইল। স্টাইলের গুণেই বাক্য বা সন্দর্ভ কাব্য হয়, আর‌ তার অভাবে বক্তব্য বিষয়ের সমতা থাকলেও বাক্য কাব্য হয় না।

রীতি হচ্ছে কাব্যের অবয়ব-সংস্থান, আর অলংকার হচ্ছে এই রীতির আনুষঙ্গিক বস্তু। অলংকার পরলেই মানুষকে সুন্দর দেখায় না, যদি না তার অবয়বসংস্থান নির্দোষ হয়।

রীতিবাদের সমালোচনা করে কেউ কেউ বলেছেন যে শুধু নির্দোষ অবয়বে অলংকার পরলেই শোভনদৃশ্য হওয়া যায় না যদি না সেই দেহে লাবণ্য থাকে। রমণীদের লাবণ্য যেমন অবয়বসংস্থানের অতিরিক্ত অন্য জিনিস, তেমনি মহাকবিদের বাণীতে এমন বস্তু আছে যা শব্দ, অর্থ, রচনাভঙ্গি—এ সবার অতিরিক্ত আরও কিছু। দেহলালিত্য যেমন দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে একেবারে আলাদা জিনিস—অথচ ওই অঙ্গ-সংস্থানের দ্বারাই ব্যক্ত, এবং কোনো রকম ভূষণাদির অপেক্ষা রাখে না, তেমনি মহাকবিদের বাণীতেও রমণীদেহের লাবণ্যের মতো এক প্রতীয়মান অর্থ থাকে। এই অর্থই হল কাব্যের আত্মা যা বাক্যকে কাব্যত্বে উন্নীত করে। (এই অর্থকেই সোজা কথায় ‘ধ্বনি’ বলা হয়েছে)