অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রকৃতি বলতে এর নিজস্ব স্বভাব, ধর্ম, গুণ, চরিত্র বা রূপ প্রভৃতিকে বােঝায়। যেমন—
(১) বিবর্তন : মানব সভ্যতা যত উন্নত হয়েছে, অর্থনৈতিক কাজের প্রকৃতি বা ধরন তত বদলে গিয়েছে। যেমন সভ্যতার আদি পর্বে মানুষ খাদ্য সংগ্রহ করে জীবনধারণ করত। এরপর বন্য প্রাণীদের পােষ মানিয়ে পশুপালন করতে শিখেছে। তারপর ক্রমে কৃষিকাজ করার পর শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদনের কলাকৌশল আয়ত্ত করে শিল্প গড়ে তুলেছে। শিল্পের পাশাপাশি ব্যাবসাবাণিজ্যের কাজে মানুষ আগ্রহ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
(২) গতিশীলতা : পরিশ্রম, বুদ্ধি আর পরিকল্পনার সাহায্যে, অর্থনৈতিক কাজের মাধ্যমে মানুষ সম্পদের উপযােগিতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে। তাই ধীরে ধীরে কৃষির বাণিজ্যকরণ ঘটে এবং কৃষিতে আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন হয়। প্রচলিত জ্বালানির (কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদি) নির্ভরশীলতা কমাতে সৌরশক্তি, জোয়ারভাটার শক্তি প্রভৃতিকে মানুষ ব্যবহার করতে শিখেছে। এইভাবে মানুষ নিত্যনতুন উপায়ে সম্পদের উপযােগিতা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়—যা অর্থনৈতিক কাজকে গতিশীল করে।
(৩) মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সংযোগ : প্রকৃতি মানুষের অর্থনৈতিক কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই পৃথিবীর সব জায়গায় একই ধরনের শস্য চাষ করা যায় না, একই রকমের খনিজ দ্রবাও পাওয়া যায় না। এমনকি মানুষও একই রকম দক্ষ এবং শিক্ষিত হয় না। অন্যদিকে, মানুষও প্রকৃতির এই নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির পথ খোঁজে। কারিগরি উৎকৃষ্টতাকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতির বাধা (Resistance) অতিক্রম করে। ফলে উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, জলসেচের উপায় ইত্যাদি মানুষ আবিষ্কার করে। এভাবে মানুষ ও প্রকৃতির টানাপােড়েনের মধ্য দিয়ে নতুন অর্থনৈতিক কাজ ও নতুন পেশার সৃষ্টি হয়।
(৪) ব্যক্তি নিরপেক্ষতী : কৃষিক্ষেত্রে বা শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন কতকগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। এই নিয়মগুলি ব্যক্তি নিরপেক্ষ (Impersonal)। ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এইরকম নিয়ম নীতি আছে। ফলে অর্থনৈতিক কাজ সব সময় নৈর্ব্যক্তিক নিয়ম অনুসরণ করে। অর্থনৈতিক কাজ কখনও ব্যক্তিমানুষের খেয়ালখুশি, ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না।
(৫) আর্থসামাজিক উন্নয়ন : অর্থনৈতিক কাজ যেহেতু সামাজিক কাজ, তাই অর্থনৈতিক কাজের মূল উদ্দেশ্য হল সম্পদের উপযােগিতা বাড়িয়ে সমস্ত মানুষের চাহিদা মেটানাের চেষ্টা করা, যাতে সমাজের সব মানুষের উপকার হয়। এই কারণে—
-
কোনাে ব্যক্তির খেয়ালখুশি মতাে যে কাজ করা হয় এবং
-
যে কাজ মানুষ ও প্রকৃতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্ট হয়নি, সেই কাজকে অর্থনৈতিক কাজ বলা যায় না।
তাই চুরি, ডাকাতি, লুঠ, ভিক্ষা, খুন, অগ্নিসংযােগ, দাঙ্গা, যুদ্ধ প্রভৃতি কাজকে অর্থনৈতিক কাজ বলা যায় না। কারণ, এই কাজে দু-একজন লােক বা মুষ্টিমেয় কিছু লােকের উদ্দেশ্য পূরণ হলেও সমাজের কোনাে উপকার হয় না।
Leave a comment