অভ্যন্তৱীণ বাণিজ্য : পণ্যদ্রব্য যখন দেশের সীমার মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রয়বিক্রয় বা আদানপ্রদান করা হয়, তখন তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বা অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য বলে। উদাহরণ— তামিলনাড়ুর কফি পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি করা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য : পণ্যসামগ্রী যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশের মধ্যে আদানপ্রদান করা হয়, তখন তাকে আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বা বহির্বাণিজ্য বলা হয়। উদাহরণ—দার্জিলিং-এর কমলালেবু বাংলাদেশে রপ্তানি করা অথবা ইরান, ইরাক, কুয়েত প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল ভারতে আমদানি করা।

বিশ্বায়নের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। নীচে এর গুরুত্বগুলি আলােচনা করা হল一

[1] শিল্পোন্নয়ন : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে শিল্পোৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বাড়ায় শিল্পে এসেছে জোয়ার। শিল্পোন্নত দেশগুলি তাদের উৎপাদিত দ্রব্য শিল্পে অনুন্নত দেশগুলিতে রপ্তানি করে। তা ছাড়া শিল্পে অনুন্নত দেশগুলি শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল শিল্পোন্নত দেশগুলি থেকে আমদানি করে। যেমন—ভারত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল (যেমন-ইউরেনিয়াম) ফ্রান্স ও রাশিয়া থেকে আমদানি করে।

[2] কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি : বাণিজ্যের প্রসার দেশবিদেশে কাজের সুযােগ বৃদ্ধি করে। বাণিজ্যের প্রসার পরােক্ষভাবে কৃষি ও শিল্পের উন্নতি ঘটায়। পণ্যসামগ্রীর আদানপ্রদানের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের অফিসের কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়। তাই কৃষি, শিল্প, পরিবহণ ও অন্যান্য সেবাক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে কম্পিউটার তথা ইন্টারনেটের যুগে সাইবার কাফেগুলিতে প্রচুর কর্মী কাজ করে।

[3] চাহিদা পূরণ : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশ্বব্যাপী পণ্যদ্রব্যের আদানপ্রদান চলে। কোনাে দেশই সবধরনের পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে না। তাই দ্রব্যের অভাবপূরণের জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য চলে। যেমন—খনিজ তেলের অভাব থাকায় আমরা ইরান, ইরাক প্রভৃতি দেশ থেকে খনিজ তেল আমদানি করি। আবার ওইসব দেশ আমাদের দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে।

[4] সংস্কৃতির প্রসার : পণ্যদ্রব্য আমদানি-রপ্তানির সময় দেশ বিদেশের বহু লােকের সমাগম ঘটে। এর ফলে এক দেশের সংস্কৃতির অন্য দেশে প্রবেশ ঘটে এবং তা প্রসারিত হয়।

[5] দ্রব্য উৎপাদনে বিশেষীকরণ ও বাজার সৃষ্টি : আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ বিশেষ দ্রব্যের চাহিদা থাকে। প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক কারণে এক-একটি দেশ এক-একটি দ্রব্য উৎপাদনে দক্ষ হয়ে ওঠে এবং ওইসব দ্রব্যের গুণমান উৎকৃষ্ট হয়। ফলে ওই দ্রব্যের স্থানীয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হয়। যেমন—জাপান বৈদুতিন দ্রব্য উৎপাদনে সর্বশ্রেষ্ঠ, তাই দেশের জাতীয় পণ্যের বিশাল আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি হয়েছে।

[6] সুসম্পর্ক স্থাপন : বাণিজ্যিক লেনদেন ঘটার ফলে দুটি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।

[7] স্বনির্ভরতা লাভ : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটার ফলে কোনাে দেশ কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা অর্জন করে। যেমন—ভারতে যে সবুজ বিপ্লব ঘটেছিল তার প্রযুক্তি জাপান থেকে আমদানি করা হয়েছিল। বর্তমানে ভারত কৃষি উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে।