বইমেলায় একদিন 

বাংলা একাডেমির দ্বিতীয় গেটটিতে ছিল প্রচণ্ড ভিড়, তবুও লাইন ধরে প্রায় মিনিট দশেক পর আমরা প্রবেশ করতে পারলাম। নজরুল মঞ্চে চলছে নতুন নতুন লেখকদের প্রকাশনা উৎসব । কিন্তু কেন জানি তৃষ্ণাটা বেড়ে গেল, তাই কিছু খেয়ে নিব ভাবছিলাম। আজ এত মানুষের সমাগম হয়েছে যে এখান থেকে বের হতে হলে আবার ভিড়ের পাহাড় অতিক্রম করতে হবে । জুয়েল বললাে ‘ওর দরকার নেই বরং এর ভেতর থেকে কিছু খেয়ে নিলেই তাে হবে। কিছুদূর এগিয়ে দেখলাম বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে; তবে গ্রাসের সংখ্যা মানুষের। তুলনায় অনেক কম। পাশে পৌছতেই একজন ভদ্রলােক তার পানিভর্তি বােতলটি আমার দিকে দিতেই ধন্যবাদ বলে প্রায় অর্ধেক বােতল পানি পান করলাম। ভাবলাম ভদ্রলােকের আচরণে ভদ্রতা-সৌজন্য আর পরােপকারের দৃষ্টান্ত রয়েছে। শুধু আমাকে নয় এরূপ। অনেকজনকে তিনি বােতল ভর্তি করে পানি দিচ্ছেন। যাক সে কথা, আমরা এবার যখন ওখানে থেকে ফিরে এসে লেখককুঞ্জের দিকে অগ্রসর হলাম দেখলাম সাদা চুলে পাঞ্জাবি পরে ঔপন্যাসিক আনিসুল হক বের হয়ে আসছেন; আমরা তাকে দেখে খুবই আনন্দিত হলাম এবং অনেকটা আবেগ তাড়িত হয়ে বললাম যে, আমরা শিশুদের উন্নয়নে কিছু করতে চাই- এ ব্যাপারে আপনি আমাদের কিছু উপদেশ দিন; তািন বললেন, ‘এই মুহূর্তে একটা জরুরি কাজে আমাকে অফিসে যেতে হচ্ছে, আপনারা আগামীকাল অফিসে আসুন। আমরা বললাম স্যার আপনার কার্ড দিন। তিনি বললেন আমার কার্ড নেই। কী আশ্চর্য! এমন একজন মানুষের কার্ড নেই। জুয়েল বললাে ঠিক আছে আমি তাে কাওরান বাজারের প্রথম আলাের অফিস চিনি; আমরা মেলা থেকে বের হয়ে চিন্তা করলাম— শিশুদের নিয়ে বিশেষ করে শ্রমজাবা শিওদের পড়াশুনার ব্যাপারে আমরা তার দিক-নির্দেশনা চাই। পরের দিন সকাল দশটায় অফিসে পৌছে অভ্যর্থনায় আমাদের উদ্দেশ্য জানালাম । হায়! বিধি বাম। তিনি আমাদের সাথে ফোনে কথা বললেন এবং আবার আগামীকাল বইমেলার লেখককুঞ্জে দেখা করতে বললেন। মনে মনে একটু বিরক্ত হলাম। তা কী আর করা; দুবন্ধু মিলে আবার বইমেলায় গেলাম। আজ আর সেদিনের মতাে। ততটা ভিড় নেই, লেখককুঞ্জে পৌছতেই আনিসুল হক হাসি দিয়ে আমাদের দুজনকে জড়িয়ে ধরলেন; লেখক-সাহিত্যিকদের এই মনখােলা হাসি, সত্যি আমরা অভিভূত। আমাদের পরিকল্পনা শুনে বললেন, ‘পত্রিকা অফিসের নিয়ম অনুযায়ী আমি কোনাে সংগঠন/সংস্থার উপদেষ্টা হতে পারব না। তবে পত্রিকার ফিচারটি তােমাদের কাজে লাগবে। আমরা দেখলাম ‘অচ্যুত সামন্ত’ নামে ভারতের একজন ব্যক্তি প্রথম জীবনে একটি স্কুল করতে গিয়ে কত বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। স্কুল চালাতে ব্যর্থ হয়ে মাঝে মধ্যে তিনি আত্মহত্যার মতাে পথও বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভারতের একটি ব্যাংক তাকে ত্রিশ লক্ষ টাকা লােন দেয় এবং সেখান থেকেই তার ঘুরে দাঁড়ানাে। আজ তিনি শুধু ভারতের নয় বরং বাংলাদেশের শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চান। ফিচার পড়ে আমরা অভিভূত হলাম। আসলে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেকোনাে ভালাে কাজ সম্পন্ন হয়। ফিচারটি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎসভূমি হিসেবেই কাজ করবে । বিদায় নিতেই তিনি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন। এবার তার অফিসে চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন। তারপরের কথা পরে বলা হবে; আপাতত শেষ করতে হচ্ছে।