একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা
আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনা একটি স্বাভাবিক বিষয় বলেই মানুষ মেনে নিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন ছােটো-বড়াে-মাঝারি নানারকম দুর্ঘটনা ঘটছে । এসব দুর্ঘটনায় জীবন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। দুর্ঘটনা আকাশপথ, নৌপথে ঘটলেও তার পরিমাণ তুলনামূলক কম। কিন্তু সড়কপথে যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে তাতে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যায়। কিন্তু সবচেয়ে বড়াে কথা হলাে এর প্রতিকার তাে নেই-ই বরং ক্রমাগত আরও বাড়ছে। কিছুদিন আগের কথা। মতিঝিল থেকে কাজ সেরে গুলিস্তান, তারপর বাসায় ফিরব। রাস্তায় দাড়িয়ে আছি স্কুটারের জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পরও না পেয়ে অগত্যা একটি লােকাল বাসেই উঠে বসি । গাড়িতে তখন যাত্রীর পরিমাণ খুব বেশি ছিল না। হেলপার ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছে। গাড়ি যাত্রী দিয়ে ভরে গেছে কিন্তু তারপরও ড্রাইভার গাড়ি ছাড়ছে না। যাত্রীরা ক্রমেই অধৈর্য হয়ে উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে যাত্রীরা ড্রাইভারকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে কিন্তু সে নির্বিকার। অবশেষে তিল ধারণের জায়গাও যখন শেষ হয়ে যায় তখন চালক গাড়ি স্টার্ট করে। গাড়ি চলছে জিপিও পার হয়ে সচিবালয় ঘুরে। প্রেস ক্লাব মােড়ে আবার গাড়ি থেমে যায়। দু’চার জন নামলেও হেলপার অন্তত দশ-বারাে জনকে নতুন করে গাড়িতে তােলে। গাদাগাদি করে কোনাে রকমে ভেতরে পাঠায়। যাত্রীরা বেজায় ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আবার শুরু হয়ে যায় শ্রাব্য-অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি। বাসের গেট থেকে হেলপার কী যেন বলার চেষ্টা করে। কিন্তু আর কোথায় যাবে। সাথে সাথে একজন যাত্রী হেলপারকে দুটো চড় দিয়ে দেয়। তারপর দুজনের বচসা চলতে থাকে। গাড়িও এগােতে থাকে হাইকোর্ট মাের পার হয়ে মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগের দিকে। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম, গরমে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দীর্ঘ সময় পর গাড়ি শাহবাগ মােড়ে আসে। গাড়ি থামতেই একটা ভিক্ষুক যাত্রীদের ঠেলে ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষের বকা হজম করতে না পেরে বেচারা ভিক্ষুক শেষ পর্যন্ত বকতে বকতে গাড়ি থেকে নেমে যায়। প্রায় সাত মিনিট পর শাহবাগ থেকে গাড়ি সামনের দিকে এগুতে থাকে। রাস্তায় জ্যাম কমবেশি আছেই। একটু ফাকা পেলেই চালক খুব জোড়ে গাড়ি চালাতে থাকে। এভাবে হােটেল রূপসি বাংলার সামনে আসতেই চালক গাড়ির গতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। হঠাৎ গাড়ি বাম দিকে ফুটপাতের ওপর উঠে যায়। সেখান দিয়ে দুজন যুবক-যুবতি সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। তারা বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির নিচে চলে যায়। মুহূর্তেই দৃশ্যপট পালটে যায়। জনতা গাড়িকে থামিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নেমে দেখি দুজনই রাস্তার সাথে পিষ্ট হয়ে গেছে। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘনার সাক্ষী হয়ে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে ।
Leave a comment