সূচনা: এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ উপনিবেশ বিদেশি শাসন মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। এসব দেশে অব- উপনিবেশীকরণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য বিশেষ উল্লেখযােগ্য ছিল।
[1] অর্থনৈতিক দুর্বলতা: উপনিবেশের অর্থ ও সম্পদ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি হস্তগত করে নিজেদের দেশের সমৃদ্ধি বাড়িয়েছিল। এদিকে ক্রমাগত শােষণের ফলে উপনিবেশগুলি দিনে দিনে নিঃস্ব ও দুর্বল হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তির ওপরই এই উপনিবেশগুলি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে অব-উপনিবেশীকরণের পরেও অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে দেশের কৃষি উৎপাদন, শিল্পায়ন প্রভৃতি ব্যাহত হয় এবং সামগ্রিক উন্নয়ন থমকে যায়। সদ্য-স্বাধীন এসব দেশে বেকারত্ব এবং কোথাও কোথাও খাদ্যাভাব তীব্র আকার ধারণ করে।
[2] নয়া উপনিবেশবাদ: সদ্য-স্বাধীন দেশগুলিতে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলেও সেসব দেশে শীঘ্রই নয়া উপনিবেশবাদ শুরু হয়। কেননা, সদ্য-স্বাধীন দেশগুলি অর্থনৈতিক, সামরিক প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুর্বল ছিল। তাই তারা নিজেদের দেশের নিরাপত্তা, শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রভৃতির প্রয়ােজনে ইউরােপ বা অন্যান্য স্থানের বৃহৎ শক্তিগুলির ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়। সুযােগ বুঝে বৃহৎ শক্তিগুলি সদ্য-স্বাধীন এসব দেশে অর্থনৈতিক সহায়তা দান করে সেখানে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে।
[3] আঞ্চলিক সহযোগিতা: অব-উপনিবেশীকরণের পরবর্তীকালে সদ্য-স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক সহযােগিতা বৃদ্ধি পায়। সদ্য-স্বাধীন দেশগুলি সহযােগিতামূলক বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক উন্নতির চেষ্টা চালায়। এসব সংগঠন যেসব বিষয়ে পারস্পরিক সহযােগিতার উদ্যোগ নেয়, সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল অর্থনৈতিক সহযােগিতা।
[1] বর্ণবৈষম্যবাদের বিরােধিতা: এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশে শাসক শ্বেতাঙ্গ ইউরােপীয়রা শাসিত কৃয়াঙ্গ প্রজাদের সঙ্গে তীব্র সামাজিক ব্যবধান ও অসাম্য সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু অব-উপনিবেশীকরণের পর সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির বাসিন্দারা সচেতন হয় এবং বর্ণবৈষম্যবাদের তীব্র বিরােধী হয়ে ওঠে। এই বিরােধের ফলে বিশ্বে জাতিবৈরিতা ও বর্ণবৈষম্যবাদের গতি রুদ্ধ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, রােডেশিয়া থেকে বর্ণবৈষম্যবাদ বিদায় নেয়।
[2] অস্থির পরিস্থিতি: এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন উপনিবেশে মুক্তিসংগ্রাম শুরু হলেও কোনাে কোনাে উপনিবেশ তখনই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এই পরিস্থিতিতে তারা স্বাধীনতা লাভ করলে দেশে সঠিক সুস্থ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়। কিছু কিছু উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে তীব্র সংঘাত শুরু করে শক্তি ক্ষয় করে। আফ্রিকাসহ এশিয়ার বেশ কিছু উপনিবেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিভেদের ফলে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে।
[3] এলিট গােষ্ঠীর শক্তি বৃদ্ধি: ঔপনিবেশিক শক্তি বিদায় নেওয়ার পর সদ্য-স্বাধীন বিভিন্ন দেশের শাসনক্ষমতা সেদেশের শিক্ষিত ও ধনী এলিট গােষ্ঠীর হাতে চলে আসে। তারা দেশে নিজ গােষ্ঠীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষ ক্ষমতালাভে ব্যর্থ হয়।
Leave a comment