অথবা, অপরাধের কারণ সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ অপরাধ বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলাের মধ্যে অন্যতম। এ সমস্যাটি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করছে। সমাজের সর্বস্তরেই আজ অপরাধের বিষবাষ্প ছড়িয়ে রয়েছে। অপরাধের হিংস্রতায় এ দেশের সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা, সংহতি, মূল্যবােধ, নিরাপত্তা প্রভৃতি চরম হুমকির সম্মুখীন। সমাজের এ অপরাধ প্রত্যয়টি আপেক্ষিক। স্থান, কাল, পাত্রভেদে অপরাধের ধরনের পরিবর্তন হয়।
অপরাধের কারণ সম্পর্কে মার্কসীয় ব্যাখ্যাঃ আমেরিকাতে ১৯৭০ দশকে মার্কসীয় অপরাধবিজ্ঞানের একটি বর্ণনা ও ব্যাখ্যা লক্ষ্য করা যায়। যা মূলত দ্বন্দ্বমূলক মতবাদ নামে প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে একই সময়ে ব্রিটেনে মার্কসীয় অপরাধবিজ্ঞানের আরেকটি ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এটি মূলত Interactions perspective-এর ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছিল। যা ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত Toylor, Walton এবং Young রচিত The New Criminology গ্রন্থে পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে। মার্কসীয় আলােচনায় অপরাধবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা যে প্রাথমিক ধারণা হতে এসেছে তা হলাে পথভ্রষ্ট বা বিপথগামী আচরণ মানুষের অন্যতম একটি স্বাভাবিক গুণ বা আচরণ হিসেবে ধরে নেয়া উচিত। কারণ এটা ব্যক্তিগত বা সামাজিক ব্যাধির ফল নয়। অর্থাৎ মানুষের নানা চরিত্রের একটি বিশেষ বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বিপথগামী। মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। সামাজিক প্রয়ােজনেই মানুষ বিপথে গমনকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে। সমাজবিজ্ঞানী Toylor, Walton এবং Young মনে করেন যে, সমসাময়িক সমাজগুলাের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামাের কাজই হচ্ছে বিপথগমনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, অপরাধের কারণ সম্পর্কে মার্কসীয় যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এই ব্যাখ্যা একদিকে যেমন সমাজবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে তেমনি অপরাধ সম্পর্কিত আলােচনার পথকে করেছে সুগম। মার্কসীয় এই ব্যাখ্যা অপরাধের কারণ উন্মােচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে অনেকে মনে করেন।
Leave a comment