Relationship of Accounting with other Subject
উত্তরঃ হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞান এককভাবে কার্যাবলি সম্পাদন করতে সক্ষম হয় না। কার্যসম্পাদনে হিসাববিজ্ঞানের সাথে যেসব বিষয়ের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্ক রয়েছে নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
১. হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি (Accounting and Information Technology): হিসাববিজ্ঞানের কাজ হলো আর্থিক তথ্য সরবরাহ করা। সা¤প্রতিককালে উন্নততর তথ্য প্রযুক্তি তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব এনেছে। দ্রুত এবং সঠিক তথ্য সরবরাহের জন্য তাই আইটি সম্পর্কে হিসাববিজ্ঞানীদের মে․লিক জ্ঞান থাকা দরকার। কারণ আইটি ব্যবহারের মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞানের কাজ স্বল্প সময়ে করা সম্ভব। তাই কম্পিউটার পরিচালনা, কম্পিউটার সফ্টওয়্যার ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে মে․লিক জ্ঞান থাকলে হিসাববিজ্ঞান তথ্য পদ্ধতির নকশা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ এবং ক্সবদ্যুতিক উপাত্ত প্রক্রিয়া Electronic data processing করা সহজ হয়। তাই তথ্য প্রযুক্তির সাথে হিসাববিজ্ঞানের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
২. পরিসংখ্যান বিদ্যা ও হিসাববিজ্ঞান (Statistics & Accounting): আধুনিক যুগে পরিসংখ্যান বিদ্যা ও হিসাববিজ্ঞান একই জাতীয় বিষয় বলে গণ্য হয়। কারণ পরিসংখ্যানের কাজ হলো বিভিন্ন ঘটনার পরিমাণগত উপাত্ত সংগ্রহ করা, শ্রেণিবদ্ধ করা, বিশ্লেষণ করা এবং বিশেষিত উপাত্তগুলো সংশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে উপস্থাপন করা। পরিসংখ্যানবিদ কর্তৃক উপস্থাপিত তথ্যাবলির উপর ভিত্তি করে সংশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। অনুরূপভাবে হিসাববিজ্ঞানকে (i) আর্থিক উপাত্তগুলোর সংগ্রহ ও পরিমাপ (ii) লিপিবদ্ধকরণ ও শ্রেণিবদ্ধকরণ (iii) সংক্ষিপ্তকরণ প্রণয়ন ও প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ এবং (iv) বিশ্লেষণ ও বিশদ ব্যাখ্যাকরণ-এ চারটি প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে সম্পাদন করে হিসাবনিকাসকরণের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। উপরিউক্ত প্রক্রিয়াগুলো পরিসংখ্যান বিদ্যায় ব্যবহৃত হয়। কাজেই দেখা যায়, হিসাববিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
৩. গণিতশাস্ত্র ও হিসাববিজ্ঞান (Mathematics & Accounting): হিসাবশাস্ত্রের প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই গণিত শাস্ত্রের প্রয়োগ অপরিহার্য। বিভিন্ন হিসাবের বহিতে অঙ্কের ঘরে লেনদেন সম্পর্কিত টাকার অঙ্কগুলো যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করার পূর্বে সেগুলোকে গাণিতিক যোগ, বিয়োগ প্রভৃতির সাহায্যে নিরূপণ করে নিতে হয়।
৪. হিসাববিজ্ঞান ও আইন (Accounting & law): দেশের প্রচলিত আইন হিসাবনিকাসকরণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। হিসাব-নিকাসকে দেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে হিসাব-নিকাস সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন, বিবরণী প্রভৃতি প্রস্তুত করতে হয়। যেমন- ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুসারে প্রত্যেক কোম্পানিকে হিসাবপত্রের বই রাখতে হবে এবং বিভিন্ন প্রতিবেদন ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে। অনুরূপভাবে অংশীদারি কারবারকে অংশীদারি আইন লিপিবদ্ধের বিধানাবলি মেনে চলতে হবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো সম্পত্তির মালিকানা পাওয়া না যায় ততক্ষণ সংশিষ্ট সম্পত্তিকে সম্পত্তিরূপে হিসাবভুক্ত করা যায় না। সুতরাং হিসাব-নিকাসকে দেশে প্রচলিত আইন-কানুন মেনে হিসাব-নিকাসকরণ কার্য সমাধান করতে হয়। কাজেই আইন বিষয়ের সাথে হিসাববিজ্ঞানের সম্পর্ক রয়েছে।
৫. অর্থবিদ্যা ও হিসাববিজ্ঞান (Economics & Accounting): অর্থনীতির একটি শাখা হিসেবে হিসাববিজ্ঞানের কাজ হলো অর্থ‣নতিক ক্রিয়াকর্ম লিপিবদ্ধকরণ ও বিশ্লেষণ। সেজন্য অর্থনীতি ও হিসাববিজ্ঞানের মধ্যে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। অসীম অভাব ও সসীম সম্পত্তির মধ্যে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করাই অর্থনীতির কাজ। আর হিসাববিজ্ঞানের কাজ হলো মানুষের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক তথ্য সরবরাহ করা। অর্থনীতি যখন সামগ্রিকভাবে ক্রেতা-বিক্রেতার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে হিসাববিজ্ঞান তখন প্রতিটি ক্রেতা-বিক্রেতাকে কোনো বিশেষ আচরণে উদ্বৃদ্ধ করতে সহায়তা করে। কাজেই দেখা যায়, হিসাববিজ্ঞান ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি বিভিন্ন বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সাম্প্রতিককালে অর্থনীতিবিদগণের হিসাববিজ্ঞানের ডেবিট ও ক্রেডিট নীতির উপর বিশেষ মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। বাস্তব প্রেক্ষাপটে তারা মানুষের আচার-আচরণ বিচার-বিশ্লেষণ করে যেকোনো অর্থ‣নতিক সিদ্ধান্তে উপনীত হন। কাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে অর্থনীতিবিদগণ যেসব পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন তার প্রতিটিই হিসাবরক্ষক সরবরাহ করেন। মানুষের অর্থ‣নতিক আচরণের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা অর্থবিদ্যার কাজ। ঠিক তেমনি হিসাবশাস্ত্রের কাজ হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহের তথ্য সংগ্রহ করা। লিপিবদ্ধ ও শ্রেণিবদ্ধ করা, সামগ্রিক লেনদেনের সংক্ষিপ্তাকার প্রস্তুত করা এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা। অর্থনীতিবিদগণ বলেন, উৎপাদনের উপাদান হলো ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন।
৬. হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা (Accounting & Management): হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে সুগভীর সম্পর্ক। হিসাববিজ্ঞানকে অনেক সময় ব্যবস্থাপনার অঙ্গ বলা হয়। অন্যদিকে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা একে অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। কারণ আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের তথ্যভান্ডার হিসেবে ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণরূপে হিসাববিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞান যাবতীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। যার ফলে ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সহজ, সরল ও সুচারুভাবে যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। ব্যবস্থাপনা শুধু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নয় ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। অতএব, ব্যবস্থাপনা কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যকে ভিত্তি করেই হিসাব রাখা হয়, অন্যদিকে হিসাববিজ্ঞানকে পরিবেশিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপকগণ সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপনীত হন। কাজেই হিসাবরক্ষণ ও ব্যবস্থাপক খুব কাছাকাছি অবস্থান করে ব্যবসা পরিচালনা করে। হিসাববিজ্ঞান কর্তৃক সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্যের আলোকে যেসব আর্থিক ফলাফল নিরূপণ করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তা ব্যবহার করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সময়োপযোগী কঠিন সিদ্ধান্ত ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকে। হিসাববিজ্ঞান তথ্যের সাহায্যে হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবস্থাপনার সহায়ক বিজ্ঞান বলা যেতে পারে।
৭. হিসাববিজ্ঞান ও কম্পিউটার ((Accounting & Computer): আধুনিক বিশ্বে হিসাববিজ্ঞান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের মধ্যে অত্যন্ত কার্যকর সম্পর্ক বিরাজমান। কম্পিউটার মূলত একটি গণনাকারী যন্ত্র। অধুনা হিসাববিজ্ঞানে এ যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ফলে কম্পিউটারের মাধ্যমে কোটি কোটি গাণিতিক সমস্যা ধারণ করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে তার সমাধান করা সম্ভব। অপরদিকে হিসাববিজ্ঞানে বিভিন্ন প্রকার লেনদেনের হিসাব লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ ও ফলাফল নির্ণয় করা হয়। যাতে প্রচুর সময় ও শ্রমশক্তির দরকার হয় তবুও হিসাবের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। কম্পিউটার এসব বাধা অপসারণ করেছে। কারণ নির্দিষ্ট ছক ও প্রোগ্রাম অনুযায়ী লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও উপাত্ত কম্পিউটার ব্যবহার করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে নির্ভুল হিসাব ক্সতরি করা সম্ভব হচ্ছে। এতে সময় ও শ্রমের অপচয় রোধ করা যায়। এছাড়া কম্পিউটারের সাহায্যে অল্প সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনভিত্তিক হিসাব ক্সতরি, সংরক্ষণ এবং অনুপাতের যথার্থতা যাচাই করা সম্ভব হয়। কম্পিউটার প্রয়োগ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে। অতএব, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়টি তথ্য ও তথ্যের ফলাফল প্রদানের সাথে সংশিষ্ট বা হিসাববিজ্ঞানের একটি অন্যতম উদ্দেশ্যও বটে। তাই হিসাববিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।
উপরিউক্ত উপাদানগুলোর উৎপাদন কার্য হতে আয়রূপে যথাক্রমে ভাড়া, মজুরি, সুদ ও মুনাফা প্রাপ্ত হয়। আর্থিক হিসাবরক্ষকগণ উক্ত বিষয়গুলো হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধকরণ এবং হিসাবনিকাসকরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিগণকে বা প্রতিষ্ঠানকে এতদসংক্রান্ত তথ্যাবলি সরবরাহ করেন। মোটকথা হিসাববিজ্ঞান ও অর্থবিদ্যা একে অপরের ঘনিষ্ঠ সহায়ক বলে গণ্য করে।
Leave a comment