(খ) ‘ক’ একটি ভূমি সংক্রান্ত বন্ধকী দলিল আদালতে উপস্থাপন করে যাতে সে একজন বন্ধকদাতা । বন্ধকগ্রহীতা জমির দখলে আছে। এ ঘটনা থেকে কি অনুমান করা যায়?
উত্তর: (ক): প্রত্যয় হচ্ছে একটা বিধি যদ্বারা আদালত একটা ঘটনাকে সত্য বলে ধরে নিতে পারেন বা ধরে নিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত তা অসত্য বলে প্রমাণিত না হয়। [The term presumption may be defined to be an inference, affirmative or disaffirmative of the truth or falsehood of a doubtful fact or proposition drawn by a process of probable reasoning from something proved or taken for granted. (Best )]
প্রত্যয় সম্পর্কিত বিধিগুলি প্রমাণের ভার বিধির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে প্রমাণের ভার বিধির সব কিছুই প্রত্যয় বিধির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় এবং প্রত্যয়গুলিও প্রমাণের ভার বিধির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। এক পক্ষের উপর যখন প্রমাণের দায়িত্ব ন্যস্ত তখন বলা যায় যে, সংশ্লিষ্ট ঘটনার অস্তিত্বহীনতা সেই পক্ষের অনুকূলে বলে অনুমিত।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের প্রত্যয় সম্পর্কে যে বিধি বিধান রয়েছে তা কোন নির্দিষ্ট ধারায় বর্ণিত হয় নি, সমগ্র আইনেরই ইহা বিস্তৃত রয়েছে। ৪ ধারায় শুধু তিন শ্রেণীর প্রত্যয়ের উল্লেখ রয়েছে। এগুলি হচ্ছে নিম্নরূপ-
(১) প্রত্যয় করা যেতে পারে (May presume): আদালত কোন ঘটনার অস্তিত্ব অনুমান করতে পারেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ঘটনা অসত্য বলে প্রমাণিত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আদালত তা সত্য বলে ধরে নিবেন অথবা তা প্রমাণ করার জন্য আহবান জানাবেন।
(২) প্রত্যয় করতে হবে (Shall presume): কতকগুলি ঘটনা বা বিষয় আদালত অবশ্যই সত্য বলে ধরে নিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত তা মিথ্যা প্রতিপন্ন বা অপ্রমাণিত না হয়।
(৩) চূড়ান্ত প্রমাণ (Conclusive proof): সাক্ষ্য আইনে যখন একটি বিষয়কে অপর একটি বিষয়ের চূড়ান্ত প্রমাণ বলে ঘোষণা করা হয় তখন আদালত প্রথমোক্ত বিষয় প্রমাণিত হলেই অপর বিষয় ও প্রমাণিত বলে গণ্য করবেন এবং উহা মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য সাক্ষ্যদানের অনুমতি দিবেন না।
সাক্ষ্য আইনের ৪ ধারায় বর্ণিত বিধান হতে দেখা যায় যে, প্রত্যয় মূলত দু ধরনের—(ক) খণ্ডনীয় এবং (খ) অখণ্ডনীয়।
খণ্ডনীয় প্রত্যয়ঃ মিথ্যা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত যা সত্য বলে ধরে নেয়া যায় এবং যা খণ্ডনের জন্য সাক্ষ্য দেয়া যেতে পারে তা খণ্ডনীয় প্রত্যয়।
অখণ্ডনীয় প্রত্যয়ঃ যা সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায় না বা যা মিথ্যা প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না তাকে অখণ্ডনীয় প্রত্যয় বলে।
ব্রিটিশ সাক্ষ্য আইনে প্রত্যয়কে নিম্নোক্ত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ (১) আইনের প্রত্যয়। (২) ঘটনার প্রত্যয়। (৩) মিশ্র প্ৰত্যয়।
কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রত্যয় করার জন্য আইনের যে বিধি রয়েছে তাকে আইনের প্রত্যয় বলে। এগুলির মধ্যে কতগুলি হচ্ছে চূড়ান্ত যাকে অখণ্ডনীয় আইনের প্রত্যয় বলে। অন্যগুলি খণ্ডনীয় আইনের প্রত্যয় তবে এগুলি মিথ্যা বা অসত্য প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সত্য বলে অনুমান করা . হয়। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে যে ঘটনার অস্তিত্ব সম্পর্কে স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা যে ধারণা পোষণ করতে পারেন আদালত সেরূপ অনুমান করলে তাকে ঘটনার প্রত্যয় বলা হয়। এই দুটোর মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে মিশ্র প্রত্যয়। ১৮৭২ সনের সাক্ষ্য আইনে প্রত্যয়ের এরূপ শ্রেণী সম্পর্কে কোন উল্লেখ নাই। তবে বাংলাদেশের আইনে যেগুলি প্রত্যয় করা যেতে পারে শ্রেণীভুক্ত সেগুলি ব্রিটিশ আইনে ঘটনার প্রত্যয়। প্রত্যয় করতে হবে শ্রেণীভুক্ত প্রত্যয়গুলি ব্রিটিশ খণ্ডনীয় আইনের প্রত্যয় এর অন্তর্ভুক্ত। অখণ্ডনীয় আইনের প্রত্যয়ই হচ্ছে বাংলাদেশের আইনে চূড়ান্ত প্রমাণ প্ৰত্যয়৷
প্রত্যয় করা যেতে পারেঃ এরূপ প্রত্যয় সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনের ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৯০ ও ১১৪ ধারায় বিধি বিধান রয়েছে।
ধারা ৮৬—–বিদেশী আদালতের প্রত্যায়িত অনুলিপি যথার্থ বলে আদালত ধরে নিতে পারেন।
ধারা ৮৭–সাধারণ ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তথ্যের জন্য আদালত যে পুস্তকের সাহায্য গ্রহণ করতে পারেন তা এবং প্রকাশিত কোন মানচিত্র বা বর্ণিত বিষয়সমূহ প্রাসঙ্গিক ঘটনা হলে এবং তা পরিদর্শনের জন্য দাখিল করা হলে আদালত ধরে নিতে পারেন যে তা- যথার্থ৷
ধারা ৮৮—টেলিগ্রাফ অফিস হতে যে তারবার্তা অর্পণ করা হয় তা যথার্থ বলে আদালত ধরে নিতে পারেন।
ধারা ৯০– কোন দলিল যদি ৩০ বছরের অধিক পুরাতন হয় এবং দলিলটি যদি সেই ব্যক্তি কর্তৃক দাখিল হয়ে থাকে যার নিকট হতেই দাখিল হওয়া স্বাভাবিক, তাহলে দলিলের লেখা এবং স্বাক্ষর যথার্থ ব্যক্তির বলে আদালত ধরে নিতে পারেন।
ধারা ১১৪–এখানে বলা হয়েছে যে, প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর সাধারণ গতিধারা মানবিক আচরণ এবং সরকারী ও বেসরকারী কার্যাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে যা ঘটা সম্ভব বলে আদালত মনে করেন, কোন মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সেই বিষয়ের অস্তিত্ব আদালত ধরে নিতে পারেন। নিম্নোক্তগুলি ১১৪ ধারায় বর্ণিত প্রত্যয়ের উল্লেখযোগ্য উদাহরণঃ
(১) যে ব্যক্তির নিকট চোরাই মাল পাওয়া গিয়েছে সে ব্যক্তি হয় চোর নতুবা জেনে শুনেই চোরাই মাল গ্রহণ করেছে যদি এই মালের যথার্থ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়।
(২) একজন অপরাধের সহযোগী বিশ্বাসের অযোগ্য যতক্ষণ পর্যন্ত উপযুক্ত সাক্ষ্য দ্বারা তা সমর্থিত না হয়।
(৩) যে বিনিময় বিলটি গ্রহণ করা হয়েছিল বা পৃষ্ঠাঙ্কন করা হয়েছে তা উপযুক্ত প্রতিদানের বিনিময়েই করা হয়েছে বলে ধরা যায়।
(৪) কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে আইনত বাধ্য না থাকা সত্ত্বেও এবং উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর যদি উত্তর দেয়া হয় তবে ধরে নেয়া যায় যে, এগুলি তার পক্ষে যাবে না।
প্রত্যয় করতে হবেঃ সাক্ষ্য আইনের ৭৯ হতে ৮৫, ৮৯ ও ১০৫, ধারায় এ সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এগুলি নিম্নরূপঃ
ধারা ৭৯–সার্টিফিকেট, জাবেদা নকল কিংবা অন্য প্রকার সত্যায়িত দলিল আদালতে দাখিল করা হলে তা যথার্থ বলে আদালত ধরে নিবেন।
ধারা ৮০—এই ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ সাক্ষ্যের বিবরণী যা বিচার কার্যক্রমে সাক্ষী যা বলেছে, যা কোন ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মচারীর নিকট সাক্ষী বলেছে ও জজ বা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আইনানুগভাবে সাক্ষী যে বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি দিয়েছে তা যথার্থ বলে আদালত ধরে নিবেন।
ধারা ৮১—এই ধারা অনুসারে আদালত প্ৰমাণ ব্যতিরেকেই যেগুলি যথার্থ বলে ধরে নিবেন সেগুলি হচ্ছে (ক) লন্ডন গেজেট, (খ) সরকারী গেজেট, (গ) ব্রিটিশ উপনিবেশের সরকারী গেজেট, (ঘ) সংবাদপত্র, (ঙ) সাময়িক পত্রিকা, (চ) যুক্তরাজ্যের সরকার কর্তৃক মুদ্রিত সংসদীয় আইন ও (ছ) আইনে নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা রক্ষিত অন্যান্য দলিল।
ধারা ৮২—ইংল্যান্ডে যে সকল দলিল প্রমাণ ব্যতীত গৃহীত হয় সে সকল দলিল এদেশেই একইভাবে গৃহীত হবে।
ধারা ৮৩–সরকারের কর্তৃত্বাধীনে প্রণীত মানচিত্র বা নকসা সঠিক বলে আদালত ধরে নিবেন।
ধারা ৮৪–আইনের পুস্তক ও আদালতের সিদ্ধান্ত সরকারের কর্তৃত্বাধীনে প্রকাশিত হলে তা বিশুদ্ধ বলে আদালত ধরে নিবেন।
ধারা ৮৫—এই ধারায় মোক্তারনামা বিশুদ্ধ বলে আদালত ধরে নিবেন।
ধারা ৮৯–নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও যে দলিল আদালতে দাখিল করা হয় নি সেই দলিলের স্ট্যাম্প, সম্পাদন ও প্রত্যয়ন যথাযথ হয়েছিল বলে আদালত অবশ্যই ধরে নিবেন।
ধারা ১০৫—এই ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্ত হলে তা দণ্ডবিধিতে বর্ণিত সাধারণ ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়লে সেটা প্রমাণের দায়িত্ব সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর বর্তাবে, অন্যথায় এরূপ পরিস্থিতি অনুপস্থিত বলে আদালত অবশ্যই ধরে নিবেন।
চূড়ান্ত প্ৰমাণঃ সাক্ষ্য আইনের ৪১, ১১২ ও ১১৩ ধারায় এ সম্পর্কে বিধান রয়েছে।
ধারা ৪১–এই ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রবেট, বৈবাহিক, নৌবিভাগ সম্পৰ্কীয় অথবা ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা সম্পৰ্কীয় আদালতের পূর্ববর্তী রায় গ্রহণীয় এবং সকলের উপর তা বাধ্যকর।
ধারা ১১২–এই ধারা অনুসারে একটি সন্তানের বৈধতা চূড়ান্ত বলে প্রমাণিত হবে যদি তার পিতামাতার বৈধ বিবাহিত জীবনযাপনকালে তার জন্ম হয়ে থাকে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের ২৮০ দিনের মধ্যে জন্ম হয় এবং পিতামাতার মধ্যে মিলনের পথ উন্মুক্ত থাকে।
ধারা ১১৩–এই ধারাটি বর্তমানে বাংলাদেশে বলবৎ নেই। ১৯৭৩ সালে ইহা রদ করা হয়েছে।
উত্তরঃ (খ): ‘ক’ একটি ভূমি সংক্রান্ত বন্ধকী দলিল আদালতে উপস্থাপন করে এবং এতে দেখা যায় যে, সে একজন বন্ধকদাতা । বন্ধকগ্রহীতা জমির দখলে আছে। এক্ষেত্রে কি অনুমান করা যায় তা হচ্ছে জিজ্ঞাস্য। সাক্ষ্য আইনের ১১৪ ধারার (ঝ) উদাহরণে বলা হয়েছে যে, যে দলিল দ্বারা দায় সৃষ্টি হয়, সেই দলিল যদি যার দায় সৃষ্টি হয় তার হাতে থাকে, তবে তার দায়ের অবসান ঘটেছে বলে আদালত ধরে নিবেন। বন্ধকী দলিল বন্ধকগ্রহীতার নিকটে থাকে এবং পাওনা পরিশোধ হলে বন্ধকদাতার নিকট অর্পণ করা হয়। তাই বন্ধকদাতার নিকট বন্ধকী দলিল থাকলে এটা ধরা হয় যে, বন্ধকী ঋণ পরিশোধিত হয়েছে। অবশ্য বন্ধকদাতা যদি চুরি করে বা অন্য কোন অবৈধ পন্থায় দলিলটি হস্তগত করে বলে অভিযোগ উঠে তাহলে এই অনুমান আর টিকে না৷
Leave a comment