শীতের পিঠা 

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর মধ্যে শীতের স্থান পঞ্চম। ঋতুচক্রে পৌষ ও মাঘ এ দুমাস শীতকাল। বাস্তবে এ দেশে অগ্রহায়ণ মাস থেকে শীত শুরু হয়ে যায় আর ফারুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকে। বাংলাদেশের কৃষকেরা প্রাণপণ পরিশ্রম করে ফসল ফলান। অগ্রহায়ণ মাসে তারা ধান কাটেন। পৌষ মাসে ঘরে ঘরে নতুন ধানে গােলা ভরে যায়। নতুন ধানের আনন্দে শুরু হয় পিঠা খাওয়ার উৎসব-পৌষ-পার্বণ। বাংলাদেশ পিঠাপুলির দেশ সারা বছরই পিঠা তৈরি হয়। কিন্তু শীতকালের পিঠা উৎসবের আনন্দই আলাদা। এ সময় খেজুরের রস ও খেজুর গুড় পাওয়া যায়। নতুন চালের গুঁড়া আর খেজুর রসের গুড় দিয়ে বানানাে হয় নানা রকম পিঠা। নানান তাদের নাম, নানান তাদের বৈচিত্র্য। ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, চিকন পিঠা, নকশি পিঠা, দুধকুলি, পাথােয়া, চন্দ্রপুলি, ক্ষীরপুলি ইত্যাদি হরেক রকমের পিঠা খাওয়ার উৎসব চলে বাংলার ঘরে ঘরে প্রতি গ্রামেগঞ্জে। রাত জেগে চলে পিঠা তৈরির আয়ােজন। গ্রামের ঘরে ঘরে সকাল বেলায় শীতের পিঠা খাওয়ার ধুম লেগে যায়। এ সময় শহর থেকে অনেকে গ্রামে যায় কি গ্রামের বাড়িগুলাে অতিথিদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে। শীতের দিনে সকাল বেলায় গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। গ্রামের মতাে শহরে শীতের পিঠা সেরকম ঘরে ঘরে বানানাে হয় না। এ সময় সকালে বিকালে গরিব মানুষেরা হাটে-বাজারে, রাস্তার ধারে শীতের ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে। শহরের লােকেরা এসব পিঠা কিনে নিয়ে খায়। এছাড়া শহরে অনেক বড় বড় হােটেলে পিঠা উৎসব হয়। শীতের পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির জনপ্রিয় উপাদান।