অনুচ্ছেদ রচনা : মাদকাসক্তি
মাদকাসক্তি এক মারাত্মক বিপর্যয়ের নাম যা আজ বিশ্ববাসীর কাছে চরম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। মাদকদ্রব্য গ্রহণের দুর্বার নেশাই হলাে মাদকাসক্তি । আমাদের দেশেও এর ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে এবং যুব সমাজের একটি অংশকে স্বাভাবিক জীবনের বৃত্ত থেকে অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকাসক্তির সর্বনাশা ছােবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য আজ পৃথিবীর দিকে দিকে আওয়াজ উঠেছে । কিন্তু কিছুতেই যেন এর লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশে সহজলভ্য মাদকদ্রব্যগুলাে হচ্ছে- মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, তাড়ি, বিয়ার, হেরােইন, প্যাথেড্রিন ইনজেকশন, ইয়াবা ইত্যাদি । আন্তর্জাতিক মাফিয়াচক্র বাংলাদেশকে মাদক পাচারের করিডাের হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে এদেশের এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। এর করাল থাবায় ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের কিশাের ও যুব সমাজের একটি বিরাট অংশ । মাদকদ্রব্য কেনার জন্য তারা বিভিন্ন অবৈধ উপায় অবলম্বন করছে। ফলে দেশের সর্বত্র অপরাধ-প্রবণতা ও সন্ত্রাস বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে মানুষ মাদকাসক্ত হয়। এর মধ্যে সঙ্গদোষ, কৌতূহল, সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক কলহ ও অশান্তি, বেকারত্ব, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে অমিল, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, কালাে টাকার প্রাচুর্য ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। একটি দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লক্ষ লােক মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বহুল প্রচারিত যৌন উত্তেজক মাদক ইয়াবা আসক্তের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও এর চাহিদা যে উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। জাতিসংঘের ২০১৩ সালের রিপাের্ট অনুযায়ী সারা বিশ্বে মাদকের বার্ষিক লেনদেন হয় ৪০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, যা বিশ্ববাসীর দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশের যুব সমাজকে এ সর্বনাশা আসক্তির কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারসহ সমাজের সকল স্তরের সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকদ্রব্য আমদানির তথা চোরাচালানের সমস্ত পথ বন্ধ করে দিতে হবে ।
Leave a comment