মহাস্থানগড়
বাংলাদেশ প্রাচীন একটি ভূখণ্ড। এর রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইতিহাসের পালাবদলে যে শাসকেরা শাসন করেছেন তারা তাদের শিল্পসৌন্দর্যের নিদর্শন রেখে গেছেন নানা স্থাপত্যে ও ভাস্কর্যে। এগুলােই আমাদের প্রত্ননিদর্শন। মহাস্থানগড় এমনই একটি প্রাচীন দুর্গ-নগরী যেখানে বহু প্রত্ননিদর্শন পাওয়া গেছে। মহাস্থানগড় বগুড়া জেলা সদর থেকে আট মাইল উত্তরে বগুড়া-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত । প্রাচীনকালে উত্তরবঙ্গের পুরাে অংশটাকে বলা হতাে পুণ্ড্রবর্ধন । এই রাজ্যের সীমানা বিস্তত ছিল উত্তরে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং দক্ষিণে গঙ্গা নদী পর্যন্ত। সপ্তম শতকে রাজা শশাঙ্ক পুরাজ্য দখল করেন। মহাস্থানগড় ছিল পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী, এখানকার বিখ্যাত রাজা পরশুরাম এই নগরীকে সমৃদ্ধিশালী নগরী রূপে গড়ে তােলেন। হযরত শাহ সুলতান ইব্রাহীম বলখী মাহীসওয়ার (রা) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে একাদশ শতকে মহাস্থানগড়ে আগমন করেন। মহাস্থানগড়ে রয়েছে তাঁর সুদৃশ্য মাজার । মাজার থেকে প্রায় ২০০ গজ উত্তর-পশ্চিমে ‘খােদার পাথর ভিটা’ নামে একটি ঢিবি অবস্থিত । খােদার পাথর ভিটা থেকে ১০০ গজ দূরে রয়েছে মানকালীর কুণ্ড। এখান থেকে জৈন মূর্তি, অলংকৃত ইট, ব্রোঞ্জের মূর্তি, নীলাভ পাথরের বেদী ও পােড়ামাটির দ্রব্য আবিষ্কৃত হয়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা অষ্টম শতাব্দীতে এখানে বৌদ্ধ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এইসব প্রত্ন-নিদর্শন শুধু এদেশের উন্নত শিল্প-সংস্কৃতিরই পরিচয় বহন করে না; বরং ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে অতীতের সাথে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতু-বন্ধনও তৈরি করে।
Leave a comment