অনুচ্ছেদ রচনা : বিশ্ব শিশু দিবস

শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর পৃথিবীর কল্যাণকামী চিন্তাশীল ব্যক্তিরা ভেবে দেখলেন যে, যুদ্ধে বেসামরিক লােকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে শিশু। যারা বেঁচে আছে তাদের অবস্থাও খুব শােচনীয় । এছাড়া অনেক দেশে শিশুরা দুবেলা দুমঠো খেতেও পারছে না। তাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই। অনেক শিশু যুদ্ধে মা-বাবাকে হারিয়ে নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে। মহাযুদ্ধ পৃথিবীর দেশে দেশে শিশুদের অসহায় করে তুলেছে। এ অবস্থায় বিশ্ব-নেতৃবৃন্দ শিশুদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক শিশুকল্যাণ ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন। এই উদ্যোগে ১৯৫৩ সালে বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রথম উদযাপিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস’ । বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়। আন্তর্জাতিক শিশু কল্যাণ ইউনিয়ন ইউনিসেফ’-এর সহযােগিতায় দিনটি উদযাপনের জন্য পৃথিবীব্যাপী আয়ােজন করা হয়ে থাকে। তবে পৃথিবীর সব দেশে একই তারিখে দিবসটি উদযাপিত হয় না। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা দিবসটি পালন করি প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সােমবারে । অথচ বুলগেরিয়া দিবসটি পালন করে মে মাসে, কিউবা জুনে, চেকোশ্লাভিয়া মে-তে, মিশর জানুয়ারিতে, ফ্রান্স মার্চে, জার্মানি মে-তে, হাঙ্গেরি মে-র শেষ দিকে বা জুনের প্রথমে, ভারত দুদিন ২ অক্টোবর ও ১৪ নভেম্বর, ইরান ৩১ অক্টোবর, জাপান ৫ মে, পােল্যান্ড জুনে, থাইল্যান্ড জানুয়ারিতে, যুক্তরাজ্য জুনে, ভিয়েতনাম সেপ্টেম্বরে ইত্যাদি। বিশ্ব শিশু দিবস প্রথম উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলাে শিশু অধিকার সনদ গ্রহণ করা। সম্ভবত ১৯৫৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৭টি ধারা সংবলিত একটি ‘শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয়। এতে বলা হয় শিশু যে দেশের এবং যে সমাজেরই বাসিন্দা হােক না কেন, তার জন্মের পর থেকেই সে পাবে পুষ্টিকর খাদ্য ও আশ্রয় । তার স্বাস্থ্যরক্ষা, শিক্ষাদানের ব্যবস্থা এবং জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে । জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে’র ধারাগুলাে সব রাষ্ট্র মেনে নিলেও দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলােতে আজও শিশুরা সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজও বিশ্বের উন্নত দেশগুলাে দেশে দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। সারা বিশ্বের শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বিশ্ব শিশু দিবস পালন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। আর এ জন্য বিশেষভাবে দায়ী থাকবে বিশ্বের যুদ্ধবাজ দেশগুলাে।