বাংলাদেশের ডাকটিকিট

তথ্যপ্রযুক্তি-বিপ্লব শুরুর আগে মানুষের একটি অপরিহার্য যােগাযােগ মাধ্যম ছিল ‘ডাক যােগাযােগ’ । মনের ভাবকে প্রকাশ করতে । যেমন ভাষার উদ্ভব তেমনি মনের কথা অন্যের কাছে পৌছে দেওয়ার মাধ্যম চিঠি । আর এই চিঠি আদান-প্রদানের জন্যই প্রয়ােজন ডাক যােগাযােগের । ডাক যােগাযােগের ক্ষেত্রে ডাকটিকিট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ডাকটিকিটের ছােট্ট পরিসরে স্থান পায় একটি | দেশের প্রকৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির নানা বিষয়। তাই একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ধরে রাখার একটি মাধ্যমও বলা যায় ডাকটিকিটকে। বাংলাদেশে ডাকটিকিটের প্রচলন হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘মুজিবনগর সরকার কর্তৃক মাঠ পর্যায়ের পােস্ট • অফিস স্থাপন করার মধ্য দিয়ে । মুক্তাঞ্চলের পােস্ট অফিসসমূহের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর পরিবহণ ও যােগাযােগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডাকবিভাগকে ন্যস্ত করা হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য জন স্টোন-হাউসের সহায়তায় একজন বাঙালি বিমান মল্লিক আটটি ডাকটিকিটের ডিজাইন করে মুজিবনগর সরকারের কাছে পাঠান। ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই ছােট্ট আট টুকরাে রঙিন কাগজ পৃথিবীর, প্রায় অধিকাংশ অংশকে কাঁপিয়ে দেয়। এইসব ডাকটিকিটের বিষয় ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সাড়ে সাত কোটি মানুষ, মুক্তির পতাকা, শেকল ভাঙা, ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশকে সমর্থন। স্টোন হাউস আরও তিনটি ডাকটিকিট নিয়ে আসেন যার ওপর ছছাট্ট করে লেখা ছিল বাংলাদেশ মুক্ত। এই এগারােটি ডাকটিকিট ঢাকা জিপিও থেকে ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বিক্রয় শুরু হয়। ১৯৭১ এর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডাকবিভাগের তিরিশ বছরের ইতিহাসে অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মােট ৭৮৪টি ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে। ডাকটিকিট একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জানার অনন্য মাধ্যম বলেই অনেকেই সখ করে ডাকটিকিট সংগ্রহ করে থাকেন।