বয়স্ক ভাতা
জন্মের পর একটি শিশুকে আদর-যত্নে বড়াে করা হয়। সেই শিশুই যখন বৃদ্ধ হয় তখন পায় অনাদর-অবহেলা। শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম দ্বারা যে একদিন অর্থ উপার্জন করে অন্যদের প্রতিপালন করত একসময় বয়সের কারণে সে অর্থ উপার্জনে অক্ষম হয়ে পড়ে। তখন তারই আর্থিক সহায়তার প্রয়ােজন হয়। আমাদের দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে বয়ােবৃদ্ধরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হয়। দারিদ্র্যপীড়িত এসব বয়স্ক মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার ১৯৯৭ – ‘৯৮ অর্থবছর থেকে একটি কল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে। রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অসহায় ও পরনির্ভরশীল বয়ােবৃদ্ধদের মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদানের এই কার্যক্রমই হলাে বয়স্কভাতা। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ৪৬১টি উপজেলার ৪,৪৭৯টি ইউনিয়ন ও ১৩৫টি ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত পৌরসভার চার লক্ষাধিক দরিদ্র নারী-পুরুষকে বয়স্কভাতার আওতায় আনা হয়। সরকার ৫০ কোটি টাকার বাজেট অনুমােদন করে বয়স্কভাতার জন্য। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে বয়স্কভাতার , জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৪৪০,০০ কোটি টাকা। ৫৭ বছরের কম বয়সীরা এই ভাতার যােগ্য নয়। যারা বয়স্কভাতা পাবে তাদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, নিঃস্ব, তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, বয়স্ক ও অসহায় মুক্তিযােদ্ধাগণ বয়স্কভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। ১৯৯৮ সালের ৩১ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নগদ ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের কর্মসূচি শুরু হয়। বর্তমানে ভাতার পরিমাণ ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। উপকারভােগীর সংখ্যাও বেড়েছে। বাজারমূল্যের তুলনায় এ অর্থ খুবই সামান্য, তবে অসহায়, দরিদ্র এবং বয়স্ক মানুষদের কাছে এই টাকাটাও অনেক মূল্যবান। দেশের মােট জনসংখ্যার একটা বড়াে অংশ বয়স্ক, তারা একসময় শ্রম দিয়ে জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণ করেছে। তাই তাদের অবদানের কথা মনে করে ভাতার পরিমাণ বাড়ানাে হলে তারা আরও বেশি উপকৃত হবেন ।
Leave a comment