বই পড়ার আনন্দ

বই অতীত আর বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে। বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা যেমন অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত, জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্বন্ধে অবগত হতে পারি, তেমনি বই পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে একটি জাতি তার ভাগ্য পরিবর্তনের রসদ সংগ্রহ করতে পারে। আবার কিছু কিছু বই মানুষের অধঃপতনও ডেকে আনে। তবে বই পড়ার মূল লক্ষ্য হলাে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ। লেখক কিংবা বিখ্যাত ব্যক্তির লেখা তখনই সার্থক হয় যখন তাঁর বই আনন্দের সঙ্গে পড়া যায়। হােক তা মুক্তিযুদ্ধের গল্প, কিংবা ট্রয় নগরী ধ্বংসের গল্প অথবা ট্রাজিক কোনাে বিষয়। পাঠকের চিত্ত আকৃষ্ট করতে হলে অবশ্যই লেখককে তাঁর লেখায় আনন্দ সঞ্চারের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্যই হয়ত প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, গ্রন্থাগার তথা লাইব্রেরি হাসপাতালের চেয়ে কোনাে অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু গভীর পর্যবেক্ষণে লক্ষ করা যায় আমাদের জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু জ্ঞানীজন আছেন যারা ইচ্ছাকৃতভাবে লেখার মধ্য থেকে আনন্দকে সরিয়ে রেখে কেবল গুরুগম্ভীর বিষয়ের অবতারণা করেন যা পাঠক কিংবা লেখক কারাে জন্যই হিতকর নয়। দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলে আমরা দেখি প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের চেয়ে বাংলা সাহিত্যে আরও ভালাে মানের উপন্যাস ও গল্প রচিত হওয়া সত্ত্বেও পাঠকনন্দিত হয়েছেন তিনি। বই পড়ার মধ্য দিয়ে যে আনন্দের সঞ্চার হয় তার ধারা পরবর্তীতে আরও পড়তে উৎসাহ সৃষ্টি করে। 

এজন্যই হয়ত মার্ক টুয়েন উল্লেখ করেছেন যে- একদিন রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালাে, কালাে চোখটিও ফ্যাকাসে হয়ে যাবে, কিন্তু বই পড়ার যে আনন্দ তা শেষ হবার নয়। আজকাল প্রযুক্তির বিকাশে ই-বুকের যে প্রচলন হয়েছে তা থেকেও আমরা আনন্দ লাভের পসরা খুঁজে পেতে পারি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে হয়তাে এ আনন্দেও ঘাটতি ঘটতে পারে। বই পড়ার আনন্দকে পাথেয় করে বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’ যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়ােজন। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে এ আনন্দ ভাগাভাগি হলে তবে এর সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে। পাঠক, এবং লেখকের মধ্যে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেন প্রকাশক। সুতরাং বই পড়ার আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে প্রকাশকদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে এবং প্রকাশককে অবশ্যই আধুনিক মেজাজের ও সৃজনশীল হতে হবে। বই পড়ার আনন্দকে গণমানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রকাশক কর্তৃক নিত্য-নতুন ভাবনাসমৃদ্ধ বইয়ের প্রকাশনা যেমন জরুরি তেমনি এতদসংক্রান্ত বিষয়ে সরকারকে মুক্ত মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই চিন্তার জগতে বই যেমন জ্ঞানলাভের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে তেমনি বই পড়ে পাওয়া যাবে অপার আনন্দ।