অনুচ্ছেদ রচনা : একটি রেল ভ্রমণ 

অনুচ্ছেদ রচনা : একটি রেল ভ্রমণ 

অদেখাকে দেখার ও অজানাকে জানার কৌতূহল মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। এরূপ কৌতূহল মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় টেনে নিয়ে যায়। অর্থাৎ ভ্রমণই মানুষের জ্ঞান-পিপাসার অনেকটা নিবৃত্তি ঘটায়। তাই এখন ভ্রমণকে আর নিছক ঘুরে বেড়ানাে হিসাবে দেখা হয় না। ভ্রমণ শিক্ষার একটি অনবদ্য উৎসও বটে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আমাদের দেশে সর্বাধিক নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম। এমন কোনাে ব্যক্তি নেই যিনি রেলে ভ্রমণ করতে নারাজ। আমরাও রেল ভ্রমণে নির্মল আনন্দ উপভােগ করেছিলাম । শীতের তীব্রতা অনেকটাই কমেছে। বন্ধুরা মিলে প্রস্তাব করলাম লালমনিরহাট থেকে ঢাকায় যাব ট্রেনে চড়ে। উদ্দেশ্য একটাই, প্রাণভরে রেলগাড়ি ভ্রমণে উপভােগ করব বাংলা মায়ের অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । আমরা প্রথমত কোন ট্রেনে ঢাকায়। যাব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হলাে। কেউ বলছিল রংপুর আন্তঃনগর ট্রেনে, কেউ আবার লালমনি আন্তঃনগর ট্রেনে । অবশেষে একটি পরিষ্কার ধারণা পেলাম যেহেতু রংপুর আন্তঃনগর ট্রেনটি রাতে রংপুর থেকে ছাড়ে তাই আমাদের সেই সৌন্দর্যের কিছুই উপভােগ করা সম্ভব হবে না। অবশেষে লালমনি আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা পৌছব বলে তারিখ ঠিক করা হলাে। ৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ১০টায় আমরা লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ৫টি টিকিট সংগ্রহ করলাম। আমাদের জন্য ‘গ’ বগির চেয়ার কোচে আসন দেওয়া হলাে । টিকিট হাতে পাওয়ার পর লাল শার্ট পরিহিত একজন যুবক এসে বলল, ‘স্যার মােক ব্যাগগুলাে দেন, মুই টেনে তুলি দেইম’। কিছুক্ষণের মধ্যে বীরদর্পে ট্রেনটি এসে হাজির হলাে, আমরা আমাদের আসন গ্রহণ করলাম। পরিচালক বাশি দেওয়া মাত্রই ট্রেনটি ছুটে চলল । মুহূর্তেই রেললাইনের দুধারে কত গ্রাম, নদী-নালা অতিক্রম করে চলতে লাগল ট্রেনটি। কৃষকেরা সবেমাত্র রােপা ধান লাগিয়েছে। সেগুলাে সবুজ হতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে কাউনিয়া পৌঁছব বলে রেলের তরফে সেই সংকেতটি পাওয়া গেল । সবচেয়ে অবাক হয়ে দেখলাম দেড় শত বছরের পুরনাে রেলসেতুটি। এক সময় নাকি রেলগাড়িসহ পথচারীরাও এ সেতুটি ব্যবহার করত। অবশ্য এখন পথচারীদের জন্য আরেকটি সেতু এর পাশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে। কাউনিয়া প্ল্যাটফরমে কিছুটা দেরি হলাে, দেখলাম প্যাটফরমের পাশে সাপের খেলা চলছে। উঠতি বয়সী এক তরুণী ‘বেদের মেয়ে’ ছায়াছবির গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাকে। মাতিয়ে রেখেছে। সাপুড়ে যথাসাধ্য তার তাবিজ-কবজ বিক্রি করে চলেছে। এবার পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ট্রেনের পরিচালক সবজ পতাকা নাড়িয়ে ট্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। আমাদের সাথে কমলা, আপেল, কলাসহ রুটিও ছিল; আমরা কয়েকটি মখ পৰে খেতে। খেতে দেখলাম গ্রামের পর গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি; হঠাৎ গড়গড় শব্দে ঘম ভেঙে গেল । দেখলাম বঙ্গবন্ধু সেতুতে এসে পড়েছি। তখন অবশ্য অন্ধকার নেমে এসেছে; কাজেই বাইরে তাকিয়ে মাঝে মধ্যে ২৪ সদাতিক আলাের ঝলকানি ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনি। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আমরা বিমানবন্দর স্টেশন পেরিয়ে কমলাপুর পৌছলাম। আশিক বিকেল থেকেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। রাত ৯ টায় ও আমাদের পেয়ে খুবই খুশি হলাে। জীবনের ১৪ জন সময়ের রেলভ্রমণ আজও একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে।