প্রিয় শিক্ষার্থী, আমি তোমাদের জন্য অধ্যবসায় রচনা লিখার চেষ্টা করেছি। কারণ
বিভিন্ন পরীক্ষায় অধ্যবসায় রচনা লিখতে আসে। তাই তোমরা যারা পরীক্ষায় অধ্যবসায়
রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী আমি তোমাদের জন্য
অধ্যবসায় রচনা ২২টি পয়েন্ট দিয়ে লিখার চেষ্টা করেছি।

তবে মনে রেখো রচনা একটু বড় পড়ে রাখা ভালো কারণ পরীক্ষার হলে সব সময় ভুলে
যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যদি বড় রচনা পড়া যায় তাহলে দুই একটি পয়েন্ট ভুলে
গেলে ও বাকিটুকু লেখা সম্ভব হয়। নিচে অধ্যবসায় রচনা বিস্তারিত লিখা হলো-

পোস্ট সূচীপত্রঃ  অধ্যবসায় রচনা

  • ভূমিকা
  • অধ্যাবসায় কি
  • অধ্যাবসায়ের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব
  • অধ্যাবসায়ের স্বরূপ
  • ছাত্রজীবনে অধ্যাবসায়ের প্রয়োজনীয়তা
  • ব্যক্তি জীবনে অধ্যাবসায়ের গুরুত্ব
  • জাতীয় জীবনে অধ্যাবসায়
  • মানব জীবনে অধ্যাবসায়
  • মানব সভ্যতায় অধ্যাবসায়
  • বিজ্ঞান আবিষ্কারের অধ্যবসায়
  • অধ্যাবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি
  • অধ্যাবসায় ও উন্নত বিশ্ব
  • অধ্যবসায়ের উদাহরণ
  • অধ্যাবসায় ও সাফল্য
  • অধ্যাবসায় ও প্রতিভা
  • অধ্যাবসায়ের মূল্য
  • অধ্যাবসায় ও আত্মবিশ্বাস
  • অধ্যাবসায়ের লক্ষ্য জীবনের সাফল্য
  • অধ্যবসায় জীবনের চিরায়ত সংগ্রামী শক্তি
  • অধ্যবসায়ী বাঙালি জাতী ও আমাদের কর্তব্য
  • অধ্যাবসায়হীনতার কুফল
  • উপসংহার

 ভূমিকা

প্রতিটি মানুষেরই দু চোখ ভরা স্বপ্ন থাকে। আর সে উঠতে চায় স্বপ্নের সিঁড়ি বয়ে
সার্থকতার চরম শিখরে। আর জীবনের স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার একমাত্র
হাতিয়ার হল অধ্যাবসায়। অধ্যবসায় হল একটি মানুষের মহৎ গুণ। এই পৃথিবীতে সেই
জয়ী হয়েছে যে অধ্যাবসায়ী। কোন কাজ করতে গেলে বিফলতা আসতে পারে কিন্তু তাই বলে
সে সফলতার স্বপ্ন ভেঙে ফেলবে এটা ঠিক নয়। কারণ সফলতা লাভের জন্য ধৈর্য এবং
মনোবলের সঙ্গে থাকার নামই হলো অধ্যবসায়।

অধ্যবসায় সফলতার চাবিকাঠি। অধ্যবসায় ছাড়া মানব জীবনের উন্নতি কখনো প্রল্পনাই
করা যায় না। আর সফলতা লাভের জন্য বারবার চেষ্টা করতে হয়। তাই তো কবি বলেছেন –

“পারিব না এ কথাটি বলিও না আর

কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার

একবার না পারিলে দেখ শতবার”।

অধ্যাবসায় কি

অধ্যাবসায় শব্দের অর্থ হলো “চেষ্টা বা অবিরাম সাধনা”। মানুষ সফল হওয়ার জন্য কোন
কাজ ক্রমাগত ভাবে করার যে চেষ্টা করে তার নামই হলো অধ্যবসায়। যে সব গুণ মানব
চরিত্র কে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে অধ্যবসায় হল তার মধ্যে অন্যতম।
অধ্যাবসায় থাকলে যে কোন অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব হয়। এমন অনেক সময় আসে যখন
মানুষ একটি কাজ একবারে সফল হতে পারে না, এমনকি দ্বিতীয়বারেও সফল হতে পারে না।

আরো পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা ২০-৩০ পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে নিন

কিন্তু তাই বলে হতাশ হলে চলবে না,বারবার তাকে চেষ্টা করতে হবে। ইংরেজিতে একটি কথা
আছে – Try again and again অর্থাৎ বারবার চেষ্টা করো। মানব জীবনের এমন কোন
ক্ষেত্র নেই যেখানে অধ্যাবসায় করলে সফল হওয়া যায় না। তাই তো কবি বলেছেন –

“কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কোমল তুলিতে

দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে”।

অধ্যাবসায়ের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব

মানব জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ মানব জীবনকে যেসব গুন সুন্দর ও
সার্থক করে তুলতে পারে অধ্যবসায় হলো তার মধ্যে অন্যতম। মানব জীবনে পথ চলতে
যেকোনো সময় যেকোনো বাধা আসতেই পারে। তাইতো জন লিলি বলেছেন -” জীবনের সমস্যাকে
এড়িয়ে যাবার অর্থ হচ্ছে জীবনকে অস্বীকার করা’। রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন দিনের
বেলা সূর্যের আলো আসে, ঠিক তেমনি দুঃখের পরে ও সুখ আসে। তাইতো কবি বলেছেন-

আরো পড়ুনঃ  লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।

হারা রবির হারা হাসি, জোসনা রাতে ফিরে আসে।

অধ্যবসায়ী ব্যক্তির নিকট অসম্ভব বলে কোন কথা নেই। অধ্যাবসায় দ্বারা মানুষ
অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। আর অধ্যাবসায়ের ফলেই মানুষের ভাগ্যকাশে উদিত হয়
সাফল্যের শুকতারা। তাইতো কবি বলেছেন-

কেন প্রান্থ- ক্ষান্ত হও, হেরি দীর্ঘ পথ।

উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?

অধ্যাবসায়ের স্বরূপ

আমরা প্রকৃতির দিকে একটু গভীরভাবে তাকালেই দেখতে পাই অধ্যবসায়ের স্বরূপ আসলে কি!
মাটির বুক ভেদ করে কিভাবে একটি ফলের বীজ থেকে সারা অঙ্কুরোদগম হয় এবং তা মাটির
বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায়। এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে সে ক্রমে
ক্রমে বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়।মানুষের জীবনে ও ঠিক তাই অধ্যাবসায়ের মাধ্যমেই সে
তার স্বীয় অস্তিত্বকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। আর এজন্যই কবি
বলেছেন-

“ধৈর্য ধরো ধৈর্য ধরো বাঁধো বাঁধো বুক

শতদিকে শত বাধা আসে আসুক”।

ছাত্রজীবনে অধ্যাবসায়ের প্রয়োজনীয়তা

ছাত্র জীবন এবং অধ্যাবসায় হল একে অপরের পরিপূরক। তাই ছাত্র জীবনে অধ্যাবসায়ের
প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। যেসব ছাত্র কর্মবিমুখ এবং হতাশা গ্রস্থ তারা কখনোই
সফলতা অর্জন করতে পারে না। এমন অনেক মেধা সম্পন্ন ছাত্র রয়েছে যারা অলসতার কারণে
জীবনে কৃতকার্য হতে পারে না। আবার এমন অনেক স্বল্প মেধা সম্পন্ন ছাত্র রয়েছে
যারা অধ্যাবসায়ের কারণে জীবনের চরম শিখরে পৌছতে পারে।

আরো পড়ুনঃ  রচনা – কৃষি উদ্যোক্তা – সম্পর্কে জেনে নিন

তাই ছাত্র জীবনে অধ্যাবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এ প্রসঙ্গে ফরাসি দার্শনিক
ভলতেয়ার বলেছেন -”  প্রতিভা বলে কিছু নেই, পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও তাহলে
প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে”। ছাত্র জীবন হলো বীজ বপনের সময় আর অধ্যবসায়ী
ছাত্ররা জীবনের গৌরবময় আসনে অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। আর এ কারণেই বলা হয়ে থাকে
Practice make a man perfect অর্থাৎ গাইতে গাইতে গায়েন।

ব্যক্তি জীবনে অধ্যাবসায়ের গুরুত্ব

এই পৃথিবীতে যত মানুষ রয়েছে সবার মেধা শক্তি এবং শারীরিক শক্তি এক নয়, কিন্তু
সবাই উন্নতির চরম শিখরে পৌছতে চায়। তাই ব্যাক্তি জীবনে অধ্যাবস্যার গুরুত্ব
অপরিসীম। কারণ অধ্যাবসায় থাকলে জীবনের কোন বাধাই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে
না। পৃথিবীতে কোন মানুষই প্রতিভা দিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। অধ্যাবসায় এবং কঠিন
সাধনার মাধ্যমে এসে নিজেকে প্রতিভাবান করে গড়ে তোলে। জীবন যুদ্ধে জয়লাভ করতে
হলে প্রতিটা মানুষের প্রয়োজন সাহস এবং অধ্যাবসায়। অধ্যাবসায় মানব জীবনের সকল
আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেয়। তাই ব্যক্তি জীবনে অধ্যাবস্যার গুরুত্ব অপরিসীম।

জাতীয় জীবনে অধ্যাবসায়

জাতীয় জীবনে অধ্যাবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ আমরা এই পৃথিবীর দিকে তাকালে
দেখতে পাই যে জাতী যত বেশি অধ্যাবসায়ী সে জাতি উন্নতির চরম শিখরে তত বেশি
পৌঁছেছে। যেমন আমরা জাপানের দিকে তাকালে দেখতে পাই জাপান একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ
হয়েও পৃথিবীর একটি উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। পৃথিবীর কোন সভ্যতাই একক
কোন প্রচেষ্টায় কিংবা একদিনে গড়ে ওঠেনি। বারবার চেষ্টা এবং সাধনা দিয়েই সে
তারা সাফল্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। যে জাতি যত বেশি চেষ্টা করেছে পৃথিবীর বুকে সে
জাতি মর্যাদা পূর্ণ জাতি হিসেবে স্বগৌরবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

মানব জীবনে অধ্যাবসায়

মানব জীবনের এক মহতি শক্তি হলো অধ্যবসায়। কারণ জীবন যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে
প্রয়োজন সাহস এবং অধ্যাবসায়ের। দুর্বল চিত্রের মানুষ কখনো অধ্যাবসায় হতে পারে
না। সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মানুষ প্রতিকূলতাকে জয় করে করতে সক্ষম হয়েছে
অর্ধবসায়ের কারণে। অধ্যাবসায় হল সফলতার চরম চাবিকাঠি।

মানব সভ্যতায় অধ্যাবসায়

পৃথিবী সৃষ্টি শুরুতে মানুষ ছিল অসভ্য বর্বর। মানুষ অসভ্য বর্বর জাতি থেকে
অধ্যাবসায়ের কারণে এখন সভ্য জাতিতে পরিণত হয়েছে। কারণ মানুষ পরিশ্রম করেছে,
ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকেনি। আর অধ্যাবসায়ের ফলে সে তার চেষ্টায় সফল
হয়েছে। মানুষ গাছের ছাল পরা বাদ দিয়ে কাপড় বুনতে শুরু করেছে। তারা সফলতা অর্জন
করতে পেরেছে একমাত্র অধ্যবসায়ের কারণে। আর আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা সভ্যযুগে
জন্মগ্রহণ করেছি।

বিজ্ঞান আবিষ্কারের অধ্যবসায়

পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানের যত অগ্রগতি হয়েছে তার সবকিছুর
পেছনে রয়েছে অধ্যাবসায় অধ্যবসায়ের কারণেই মানুষ পাথর খসে আগুন সৃষ্টি করেছে
দূর করেছে অন্ধকার মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছে বিমান আবিষ্কার করেছে এবং জয়
করছে সারা বিশ্বকে মানুষ হিসাব-নিকাশের জন্য আবিষ্কার করেছে ইন্টার কম্পিউটার এবং
আবিষ্কার করেছে ইন্টারনেট 

আরো পড়ুনঃ  আমার প্রিয় খেলা – ফুটবল খেলা রচনা জানুন

মানুষ আবিষ্কার করেছে রকেট এবং মিটিয়েছে চন্দ্র বিজয়ের গৌরব আর বিজ্ঞানীদের
পরিশ্রম সাধনা এবং অধ্যবসয়ের কারণে এসব আবিষ্কার সক্ষম হয়েছে আর এজন্যই
প্রখ্যাত ভাষাবিদ ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সহমত পোষণ করে বলেছেন

কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন,

হোক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।

অধ্যাবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি

কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে। কারণ অধ্যাবসায়
হল সফলতার চাবিকাঠি। কোন কাজে একবার পরাজিত হলে সে কাজের হাল ছেড়ে দিলে চলবে না
কারণ মানুষ অবিচল পরিশ্রম দ্বারাই তার সফলতার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। আর
এজন্যই বলা হয়ে থাকে অধ্যবসাই একমাত্র মানব জীবনের স্বর্ণালী অধ্যায় সূচনা করতে
পারে।

অধ্যাবসায় ও উন্নত বিশ্ব

যেকোনো সফলতা এমনিতেই হাতে এসে ধরা দেয় না সফলতা অর্জন করতে হলে প্রয়োজন
অধ্যাবসায়। যে জাতি যত বেশি অধ্যাবসায়ী সে জাতী ততো বেশি উন্নতির চরম শিখরে
পৌঁছেছে। যেমন – জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা প্রভৃতি দেশের দিকে তাকালে আমরা
দেখতে পাই অধ্যাবসায়ের কারণে এই দেশগুলো শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। আর এজন্যই
যেকোনো জাতিকে মর্যাদা পূর্ণ জাতি হিসেবে সফলতা অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই
অধ্যবসায়ী হতে হবে।

অধ্যবসায়ের উদাহরণ

ইতিহাসের পাতার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই জগতে যত বড় সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক,
সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক, শিল্পী রয়েছেন তারা সবাই ছিলেন অধ্যাবসায়ী। যেমন
মহাকবি ফেরদৌসী দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তার মহাকাব্য শাহনামা রচনা করেছিলেন। আবার
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তার বাঙ্গালা ভাষার অভিধান এক লক্ষ ১৫ হাজার শব্দে একক
প্রচেষ্টায় রচনা করতে সক্ষম হয়েছেন। 

একমাত্র অধ্যাবসায়ের গুণে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল সহ বিভিন্ন
মনীষীগণ বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রস
এক মাকড়সার বারবার ব্যর্থ চেষ্টার পর তার সফলতা দেখে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম
অ্যাডওয়ার্ডের সাথে সপ্তম বারে যুদ্ধে জয় লাভ করেছিলেন।নেপোলিয়ন বলেছেন-Impossible is a word which is only found in the dictionary of a
fool. 

অধ্যাবসায় ও সাফল্য

অধ্যাবস্যায়ের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। আর তাই বলা হয়ে থাকে সাফল্য যেন
মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। অধ্যবসায় ছাড়া সাফল্য কখনো কল্পনায় করা যায় না। যারা
অধ্যাবসায় অব্যাহত রেখেছেন তারাই জীবনে সার্থক এবং সফল হয়েছেন। ডালটন স্পষ্টই
বলেছেন – “লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না”।
এই সমাজের প্রতিটি মানুষকে জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে
হয়।

নিজেকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর সমাজের
জন্য তাকে অধ্যাবসায়ী হতে হয়। অধ্যাবসায়ের মাধ্যমেই মানুষ নৈরাস্য ও
ব্যর্থতাকে জয় করতে পারে। আর এজন্যই বলা হয়
Failure is the pillar of success

অধ্যাবসায় ও প্রতিভা

মানুষ কেউ প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেনা অধ্যাবসায়ের মাধ্যমেই মানুষ প্রতিভাকে
বিকশিত করে আর এজন্যই ভলতেয়ার বলেছেন -” প্রতিভা বলে আসলে কিছু নেই, পরিশ্রম ও
সাধনা করে যাও তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে”। মহাবিজ্ঞানের সার আইজ্যাক
নিউটন বলেছেন -” আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও
পরিশ্রমের ফলে দুরূহ ও তত্ত্বগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি”।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী জন ডালটন বলেছেন -” লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি
পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না”। আর এজন্যই বলা হয়ে থাকে –“Industry is the mother of good luck”.

অধ্যাবসায়ের মূল্য

জীবনে শুধু অধ্যাবসায় করলেই হবে না অধ্যাবসায়ের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
ভারতীয় দর্শন মতে-” যদিও আমরা দুঃখবাদী এবং দুঃখে আমাদের জীবন গড়া, তথাপি
আমাদের মধ্যে অনেক দুঃখ দৈন্যের সাথে পাঞ্জা লড়ে”। যদিও বলা হয়ে থাকে বাঙালি
জাতি বীরের জাতি এবং তারা অধ্যাবসায়ী। আর বাঙালি জাতি অধ্যবসায় এবং অক্লান্ত
পরিশ্রমের জন্যই পৃথিবীর বুকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

অধ্যাবসায় ও আত্মবিশ্বাস

জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে অধ্যাবসায় যেমন প্রয়োজন তেমনি আত্মবিশ্বাসীও হতে
হবে। জীবনের প্রতিটি কাজ করতে হবে আত্মবিশ্বাসের সাথে। যেমন শৈশবে আইনস্টাইন কে
দেখে তার শিক্ষকেরা বলে দিয়েছিলেন তাকে দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু তিনি তার
আত্মবিশ্বাস এবং অধ্যাবসায়ের কারণে কোয়ান্টাম তত্ত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি
তথ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে আছেন। আবার আমরা হিটলারের দিকে তাকালে দেখতে
পাই তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে সৈনিক হওয়ার জন্য 

আরো পড়ুনঃ সুন্দরবন – রচনা – সম্পর্কে জেনে নিন

ভিয়েনা একাডেমিতে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তাকে ভর্তির অযোগ্য বলে ঘোষণা
করা হয়েছিল। অথচ তিনি পরবর্তী জীবনে আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর
শাসনকর্তা হয়েছিলেন। আবার বর্তমান বিশ্বের সেরা ধনী microsoft এর প্রতিষ্ঠাতা
বিল গেটস কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়েছিলেন এবং তার শিক্ষকরা ভেবেছিলেন ছেলেটা
গোল্লায় গেল। অথচ তিনি আজ পৃথিবীর অন্যতম একজন ধনী হতে পেরেছেন তার আত্মবিশ্বাস
এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য।

অধ্যাবসায়ের লক্ষ্য জীবনের সাফল্য

জীবনে শুধু অধ্যবসায়ী হলেই চলবে না তাকে জীবনের সাফল্য অর্জন করতে হলে নির্দিষ্ট
লক্ষ্য থাকতে হবে। লক্ষহীন জীবনে কেউ সার্থকতা অর্জন করতে পারে না। একজন ছাত্রকে
তার জীবনের শুরুতেই ভেবে নিতে হবে আমি কি হতে চাই এবং তাকে সেই লক্ষ্য অর্জনের
জন্য অধ্যাবসায়ী হতে হবে।

অধ্যবসায় জীবনের চিরায়ত সংগ্রামী শক্তি

একমাত্র অধ্যবসের মাধ্যমেই মানুষ সফলতা অর্জন করতে পারে। আর এই সফলতা অর্জনের
জন্য তার চিরায়ত সংগ্রামী শক্তি প্রয়োজন। কারণ জীবনের প্রতিটি কর্মে অধ্যবসায় ও
সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জনের পথরেখা মানুষকে তার জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে
যায়।

অধ্যবসায়ী বাঙালি জাতী ও আমাদের কর্তব্য

বাঙালি জাতি কতটা সাহসী এবং অধ্যাবসায়ী তা বারে বারে প্রমাণ দিয়েছে ভাষা
আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। বাঙালি প্রমাণ দিয়েছে
তারা কতটা সাহসী এবং অধ্যাবসায়ী। নিজেদের অধ্যবসয়ের কারণেই বাঙালি জাতি আজ
মহাকাশের বুকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন করতে পেরেছে। বাঙালি জাতি তৈরি করেছে
পদ্মা সেতু। বাঙালি জাতি যেন আরও এগিয়ে যেতে পারে এটাই আমাদের কামনা।

অধ্যাবসায়হীনতার কুফল

অধ্যাবসায়হীন ব্যক্তি বা শ্রম বিমুখ ব্যক্তি কেবলমাত্র দেশ ও জাতির বোঝা। আর
তারা শুধু নিজের জন্যই নয় তারা সমগ্র জাতির জন্যই ক্ষতির কারণ। অধ্যবসায় না
থাকলে ছাত্র জীবন, ব্যক্তিজীবন, জাতীয় জীবন কোন ক্ষেত্রেই জয়লাভ করা সম্ভব নয়।
যে কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে অধ্যবসায় একান্ত প্রয়োজন। প্রবাদ আছে “অলস
মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”। আর যারা শ্রম বিমুখ অর্থাৎ অধ্যবসায়ী নয় তারা
সর্বোপরি দেশ ও সমাজের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

উপসংহার

জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে অধ্যাবসায়ের কোন বিকল্প নেই। আর অধ্যাবসায় সম্পর্কে
একটি পরম সত্য প্রবাদ রয়েছে তা হলো -” মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন”। যে
অধ্যাবসায় নয় সে কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে পারে না। অধ্যবসায়ের মতো যদি গুণকে
আয়ত্ত করা যায় তাহলে পরশ পাথরের মত পাথরটিকেও ছুঁয়ে দেখা সম্ভব হয় এবং সোনার
কাঠির মত একে অর্জন করাও যায়। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে অধ্যবসায় জীবনে
সাফল্যের চাবিকাঠি।