প্রশ্নঃ অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর৷
অথবা, অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ অধিকার ও কর্তব্যের বিষয়টি পরস্পর পরস্পরের সাথে জড়িত। একটি আরেকটির সাথে সম্পৃক্ত। মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব তাকে সমাজে বসবাস করতে হয়। সমাজে বসবাস করতে হলে তাকে কিছু অধিকার দিতে হবে। তাকে অধিকার দিলে সে অধিকার পেলে তাকে কিছু কর্তব্যও পালন করতে হয়। শুধু সে অধিকার লাভ করবে কোনো কৰ্তব্য পালন করবে না তা হয় না। তাকে অধিকারও নিতে হবে সমাজের ও রাষ্ট্রের প্রতি কিছু কর্তব্যও পালন করতে হবে।

অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্যঃ আমরা আগেই বলেছি অধিকার ও কর্তব্য বিষয় দুটি একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কীত, তারপরও দুইয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

১. বিষয়গত পার্থক্যঃ অধিকার ও কর্তব্য দুটি দুই বিষয়, অধিকার এক বিষয় আর কর্তব্য অন্য বিষয়। অধিকার ও কর্তব্যর মধ্যে প্রথমেই বিষয়গত অমিল রয়েছে।

২. আলোচনাগত পার্থক্যঃ মানুষ অধিকার ভোগ করে কর্তব্য পালন করে। তাহলে তাদের মধ্যে যে আলোচনার বিষয় তাও অভিন্ন। অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে আলোচনাগত অমিলও দেখা যায়।

৩. সংজ্ঞাগত পার্থক্যঃ অধিকার বিষয়টি হলো যুক্তিগতভাবে লাভ করা। এটা আমরা লাভ করা আইনগতভাবে বৈধ, এটা লাভ করা আমার উচিত এমনটিই হলো অধিকার। আর কর্তব্য হলো এমন কতগুলো বিষয় যা কাজ যা আমি করতে বাধ্য সে কাজগুলো আমাকে করতে হবে যদি কিনা আমি সমাজে বাস করি।

৪. দার্শনিকদের দৃষ্টিতে পার্থক্যঃ উইলিয়াম লিলি অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়ে বলেন— আইনসম্মত বা নৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে কোনো কিছু পাওয়ার বা কোনো নির্দিষ্ট পন্থায় কাজ করা যুক্তিসম্মত দাবিকে অধিকার বলে। আবার অন্যদিকে জনকল্যাণের স্বার্থে কোনো সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়ের বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিকে কোনো ব্যক্তির কাছে যা দাবি করে সেই দাবি মিটাবার বাধ্যতা বোধই হলো কর্তব্য।

উপসংহারঃ আলোচনার শেষ প্রান্তে একটা কথাই বলা যায় যে, অধিকার ও কর্তব্য শব্দ দুটি আমাদের বর্তমান সমাজের সাথে আদা-আদিভাবে জড়িত। এদের মধ্যে মিল থাকলেও অমিলও রয়েছে। তাদের মধ্যে পাথক্যও অনেক, যা এদেরকে স্বতন্ত্র প্রকৃতি প্রদান করে।