[1] শুধুমাত্র সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে ব্যক্তি অধিকার ভােগ করতে পারে। মানবসমাজের বাইরে অধিকারের কোনাে অস্তিত্ব নেই।
[2] অধিকারের একটি আইনগত দিক আছে। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।
[3] সমাজের সমস্ত মানুষের ব্যক্তিত্ববিকাশের জন্য অধিকার অপরিহার্য।
[4] সমাজকল্যাণের সঙ্গে অধিকারের ধারণা জড়িত থাকে। বস্তুত, অধিকার সামাজিক স্বার্থের বিরােধী হওয়া উচিত নয়।
[5] সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সঙ্গে অধিকারের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়।
[6] অধিকারের সঙ্গে কর্তব্য সম্পাদনের বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কর্তব্য পালন না করলে অধিকার ভােগ করা যায় না।
আবার প্রকৃতিগতভাবে অধিকারকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একটি হল নৈতিক অধিকার এবং অন্যটি হল আইনগত অধিকার।
[1] নৈতিক অধিকার: যেসব অধিকার সামাজিক ন্যায়নীতিবােধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তাদের নৈতিক অধিকার বলা হয়। প্রসঙ্গত বলা যায়, নৈতিক অধিকার ভঙ্গ করলে রাষ্ট্র কোনাে শাস্তি দিতে পারে না। নৈতিক অধিকার রাষ্ট্রের দ্বারা স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত নয়।
[2] আইনগত অধিকার: যেসব অধিকার আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত হয়, তাদের আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকার লঙ্ঘিত হলে রাষ্ট্র শাস্তি দিতে পারে। যেমন ভােটদান করার অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে। আইনগত অধিকারকে প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। সেগুলি হল一
-
(i) পৌর অধিকার,
-
(ii) রাজনৈতিক অধিকার,
-
(iii) অর্থনৈতিক অধিকার এবং
-
(iv) সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার।
অধিকার সম্পর্কে মার্কসীয় ধারণা
মার্কসীয় মতবাদ অনুযায়ী, অধিকার সমাজচরিত্রের অর্থনৈতিক বিন্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে ওঠে। মানুষের অধিকারের প্রকৃতি উৎপাদন পদ্ধতির সঙ্গে তার সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। বৈষম্যমূলক সমাজে অধিকার হল উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী মালিকশ্রেণির অধিকার। একমাত্র শােষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার রক্ষা সম্ভব হয়।
অধিকারের রূপভেদ
প্রকৃতিগতভাবে অধিকারকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একটি হল নৈতিক অধিকার এবং অন্যটি হল আইনগত অধিকার।
[1] নৈতিক অধিকার: যেসব অধিকার সামাজিক ন্যায়নীতিবােধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তাদের নৈতিক অধিকার বলা হয়। প্রসঙ্গত বলা যায়, নৈতিক অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বারা স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত নয়।
[2] আইনগত অধিকার: যেসব অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত, সেগুলিকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকারকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল一
-
(i) পৌর অধিকার,
-
(ii) রাজনৈতিক অধিকার,
-
(iii) অর্থনৈতিক অধিকার এবং
-
(iv) সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার।
অর্থনৈতিক অধিকার
অর্থনৈতিক অধিকার বলতে আমরা সেইসব অধিকারকে বুঝি যেগুলি। মানুষকে দারিদ্র্য এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে দৈনন্দিন জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নিরাপদ করে গড়ে তােলে| অধ্যাপক ল্যাম্কির মতে, প্রতিদিনের অন্নসংস্থানের ক্ষেত্রে মানুষের ন্যায়সংগত মজুরি পাওয়ার নিরাপত্তা ও সুযােগকে অর্থনৈতিক অধিকার বলা যায়। অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল一
[1] কর্মের অধিকার: অর্থনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল কর্মের অধিকার। কর্মের অধিকার অনুসারে প্রত্যেক ব্যক্তি তার যােগ্যতা অনুযায়ী যে-কোনাে কাজ পাওয়ার অধিকারী। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক যাতে তার যোগ্যতা অনুসারে উপযুক্ত কাজ পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সমাজতান্ত্রিক গণসাধারণতন্ত্রী রাষ্ট্র চিনে কর্মের অধিকার মৌলিক অধিকাররূপে স্বীকৃত।
[2] উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার: উপযুক্ত কাজের জন্য উপযুক্ত মজুরি পাওয়ার অধিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার জীবনধারণের জন্য প্রতিটি কর্মরত ব্যক্তির পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পাওয়া একান্ত অপরিহার্য। অর্থনৈতিক অধিকারে কাজের গুণগত ও পরিমাণগত মান যাচাই করে উপযুক্ত মানদণ্ডে পারিশ্রমিক নির্ধারণের কথা বলা হয় এ ছাড়া একই কাজে নারীপুরুষনির্বিশেষে সকলের সমান পারিশ্রমিক পাওয়ার বিষয়টিও অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে স্বীকৃত।
[3] বিশ্রামের অধিকার: কাজের অধিকারের পাশাপাশি বিশ্রামের অধিকারও অত্যন্ত জরুরি। নিরবচ্ছিন্ন কাজের পরে অবসরযাপনের অবকাশ না থাকলে মানুষের পক্ষে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়। অ্যারিস্টটলের মতে, সুন্দর জীবনের জন্য অবকাশ একান্তভাবে আবশ্যক।
[4] বার্ধক্যে ও অক্ষমতায় প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার: বৃদ্ধ ও অক্ষম অবস্থায় রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার। এ ছাড়াও কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত পঙ্গুত্ব বা অক্ষমতার দরুন আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া শ্রমিকদের অধিকার।
সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বিকাশের জন্য যেসব সুযােগসুবিধা একান্তভাবে অপরিহার্য, তাদের সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার বলা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকারগুলি হল一
[1] সামাজিক সাম্যের অধিকার: স্ত্রী-পুরুষ-ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকের সামাজিক দিক থেকে সাম্যের অধিকার সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। আসলে সামাজিক বৈষম্য বজায় থাকলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সঠিকভাবে রূপায়িত হতে পারে না।
[2] সুস্থ জীবনযাপনের অধিকার: সুস্থ সামাজিক পরিবেশে জীবনযাপনের অধিকার নাগরিকদের একটি সামাজিক অধিকার কারণ সমাজজীবনে অসুস্থ পরিবেশ থাকলে ব্যক্তির অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সুস্থ সামাজিক পরিবেশে সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা নাগরিক জীবনের সুপ্ত গুণাবলির বিকাশের পক্ষে একান্ত উপযােগী।
[3] স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকার: প্রতিটি রাষ্ট্রে নাগরিকরা যাতে সুস্থ দেহের অধিকারী হতে পারে তার সুব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের একান্ত কর্তব্য। রুগণ এবং দুর্বল মানবসম্পদ কোনাে রাষ্ট্রের উন্নয়নের পক্ষে অনুকূল নয়। তাই স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কর্তব্য।
[4] শোষণ মুক্তির অধিকার: মানব সমাজের ইতিহাস শোষণ এক অভিশাপ শােষণের নানান রূপ আছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ-সহ উন্নত বিশ্বে আজও শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়নি। শিশুরা বিভিন্ন কাজে বিভিন্নভাবে শােষিত হয়। কোথাও আবার বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নেওয়ার রীতি অর্থাৎ বেগার শ্রম চালু রয়েছে। রাষ্ট্রের কর্তব্য প্রতিটি ব্যক্তির শােষণমুক্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া।
[5] ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার: প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার সর্বজনস্বীকৃত। তাই রাষ্ট্রের কর্তব্য হল জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে প্রতিটি সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিকশিত হওয়ার সুযােগ দেওয়া।
Leave a comment