প্রশ্নঃ অধিকারের রক্ষাকবচগুলাে কী কী সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, অধিকারের রক্ষাকবচসমূহ সংক্ষেপে আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ অধিকার কথাটি মানবসমাজের সামাজিক চেতনাবােধ থেকে উদ্ভূত। অধিকারের শাব্দিক অর্থ দাবি। মানুষ যেহেতু সমাজবদ্ধ জীব সেহেতু সমাজের নিকট তার অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে। আর এ চাওয়া পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই অধিকারের জন্ম। বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবিধানের মাধ্যমে লিখিতভাবে নাগরিকদের অধিকার স্বীকার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

অধিকারের রক্ষাকবচঃ গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য কতকগুলাে শর্ত পালন অপরিহার্য। এই শর্তগুলােকে অধিকারের রক্ষাকবচ বলা হয়। নিম্নে অধিকারের রক্ষাকবচগুলাে আলােচনা করা হলাে-

(১) আইনঃ অধিকারের প্রধান রক্ষাকবচ হলাে আইন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ আইন যথাযথভাবে প্রয়ােগের ফলে অধিকার নিশ্চিত হয়। তাই আইন হচ্ছে অধিকারের আবশ্যকীয় শর্ত বা রক্ষাকবচ। কেননা যেখানে আইন নাই, সেখানে অধিকার নাই। জেম্স স্মিথ বলেন, সভ্য সমাজে স্বাধীনতার জন্ম হয় আইন থেকে।

(২) গণতন্ত্রঃ অধিকারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হলাে গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তাই শাসনব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে পারে।

(৩) সংবিধানে মৌলিক অধিকারের বিধানঃ নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলাে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হলে তা সাংবিধানিক আইনের মর্যাদা লাভ করে। ফলে সরকার নাগরিকদের এসব অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ফলে নাগরিকরা এসব অধিকার ভােগ করতে কোনােপ্রকার সরকারি বাধার সম্মুখীন হয় না।

(৪) আইনের শাসনঃ আইনের পাশাপাশি নাগরিক অধিকার নিশ্চিত ও রক্ষা করার জন্য যথাযথ আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনের অনুশাসন অর্থ আইনের চোখে ধনী, দরিদ্র, ধর্ম, বর্ণ, গােত্র নির্বিশেষে সকলেই সমান। আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সরকারও স্বেচ্ছাচার হতে পারে না।

(৫) দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থাঃ দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা অধিকারের অন্যতম রক্ষাকবচ। প্রত্যেক নাগরিককে নিজের অধিকার সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন হলে কোনাে শাক্ত নাগারক আধকারের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অধিকার অত্যাবশ্যক। অধিকার ছাড়া নাগরিক জীবনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসে না। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক অধিকার ব্যতিত কোন ব্যক্তি সুসভ্য জীবনযাপন করতে পারে না। তাই এসব অধিকার রক্ষার জন্য উপযুক্ত শর্তগুলাে পালন করা অত্যাবশ্যক।