‘অথচ’ বলার কারণ: সুভাষ মুখােপাধ্যায় তার আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্গত ‘গারাে পাহাড়ের নীচে’ রচনায় গারাে পাহাড় ও পাহাড়তলির পাহাড়ি এবং সমতলি আদিবাসীদের জীবনযাত্রার বর্ণনা করেছেন। রচনার শেষে লেখক জানিয়েছেন যে, গারাে পাহাড় এবং পাহাড়তলিতে গেলে সেখানকার আদিবাসিরা আমাদের বাঙাল’ অর্থাৎ বাঙালি বলে অভিহিত করে। আমরা বাঙালিরা এই আদিবাসীদের কখনােই আপন করে নেইনি বলেই এরা আমাদের পর ভাবে। এ প্রসঙ্গেই লেখক অথচ অব্যয়ের ব্যবহার করে জানিয়েছেন যে, এইসব আদিবাসীরা অবিভক্ত বঙ্গদেশেরই আদিবাসী।
অথচ আমরা সবাই বাংলাদেশেরই মানুষ। – ‘অথচ’ বলার কারণ কী? মন্তব্যটির মধ্যে লেখকের কোন্ জীবনদৃষ্টি ধরা পড়েছে, আলােচনা করাে।
লেখকের জীবনদৃষ্টি : আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্গত ‘গারাে পাহাড়ের নীচে’ ভ্রমণ কাহিনিটি রচনাকালে গারাে পাহাড় এবং তার সংলগ্ন সমস্ত অঞ্চল। অবিভক্ত বঙ্গদেশের অন্তর্গত ছিল। বর্তমান অবশ্য ওই অঞ্চলটি মেঘালয় রাজ্যের অন্তর্গত। তবে বাঙালিরা কিন্তু অবিভক্ত বঙ্গদেশের আদিম অধিবাসী নয়। তাই বঙ্গদেশের আদিম অধিবাসী হিসেবে বিভিন্ন পাহাড়ি এবং সমতলি আদিবাসীদের এ স্থানটির প্রতি অধিকার বেশি। অথচ আমরা বাঙালিরা সভ্য জাতি হয়েও তাদের আপন করে নিতে পারিনি; ভূমিপুত্রদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি। এই কারণে মরমি লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় বাঙালি হিসেবে অপরাধবােধে ভােগেন। প্রতিটি জাতি-উপজাতি স্বভূমে এবং অন্যত্র তাদের জাতিসত্তা এবং স্বকীয় শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে এগিয়ে যাবে—এমনটাই চান লেখক। তা ছাড়া, আদিবাসীদের প্রতি সভ্য জাতির শােষণ এবং উচ্চমন্যতাকেও তিনি কখনােই সমর্থন করেন না। লেখকের এই মানবিক জীবনদৃষ্টিই প্রতিফলিত হয়েছে মন্তব্যটির মধ্য দিয়ে।
Leave a comment