প্রশ্নঃ অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ কী?
অথবা, অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ কাকে বলে?
ভূমিকাঃ মানবজীবনের বিবর্তনের ইতিহাসের মতোই মানব মনে ঈশ্বর ধারণার বিবর্তন দেখা যায়। তাই ঈশ্বর সমস্যা দর্শনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের ধারণা সম্পর্কে আমরা চারটি মতবাদ পরিলক্ষিত করি। যথা- (১) অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ (২) সর্বেশ্বরবাদ(৩) ঈশ্বরবাদ(৪) সর্বধরেশ্বরবাদ। নিম্নে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
অতিবর্তী ঈশ্বরবাদঃ এই মতবাদ অনুযায়ী ঈশ্বর জগতের সম্পূর্ণ অতিবর্তী অর্থাৎ ঈশ্বর এই জগৎকে সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করে আছেন। বিশ্বজগৎ সৃষ্টির আগে ঈশ্বর অস্তিত্বশীল ছিলেন, এক বিশেষ মুহূর্তে তিনি জগৎ সৃষ্টির প্রেরণা পেলেন। তার ইচ্ছাতেই জগৎ সৃষ্টি হয়ে গেল। জগৎ সৃষ্টি করে তিনি কতিপয় জাগতিক ও প্রাকৃতিক নিয়ম বেঁধে দিলেন। যাতে করে জগৎ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হতে পারে। ঈশ্বর জগতের বাইরে চলে গেলেন। উক্ত নিয়মের অধীনে জগৎ ঠিকমত চলতে পারলে ঈশ্বরকে আর কিছু করতে হয় না। কিন্তু জগতে কোন কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তাকে আবার জগতের পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে হয়। ঈশ্বর জগতের বাইরে অবস্থান করেন, তবে প্রয়োজন অনুসারে জগতে প্রত্যাবর্তন করে প্রয়োজনীয় কার্যাবলি শেষ করে আবার বাইরে চলে যান।
অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ অনুসারে জগৎ সৃষ্টি করে ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে জগতের বাইরে অবস্থান করেন। পক্ষান্তরে সর্বেশ্বরবাদ জগতের সাথে ঈশ্বরের সম্পর্কের কথা বলে। এই মতবাদ অনুসারে ঈশ্বর ও জগৎ এক ও অভিন্ন। কাজেই জগতের সাথে ঈশ্বরের অন্তরসম্পর্ক রয়েছে। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ অনুসারে এক বিশেষ মুহূর্তে ঈশ্বর নিজের ইচ্ছায় নিছক শূন্য থেকে জগৎ সৃষ্টি করেন। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ অনুসারে ঈশ্বর প্রথমে জগৎ সৃষ্টি করেন এবং জগৎকে চালিত করার জন্য কর্তগুলো শক্তি সৃষ্টি করেন। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ মানুষের তথা জীবের ইচ্ছার স্বাধীনতা স্বীকার করে। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ অনুসারে, জগৎ সৃষ্টির আগেও ঈশ্বর আত্মসচেতন চিন্তাশীল সত্তা হিসেবে বিরাজমান ছিলেন। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ অনুসারে জগৎ ও ঈশ্বর দুটি স্বতন্ত্র সত্তা। জগৎ সৃষ্টি করে ঈশ্বর জগতের বাইরে অবস্থান করেন এবং প্রয়োজনবোধে জগতে শৃঙ্খলা আনার জন্য মাঝে মাঝে হস্তক্ষেপ করে থাকেন। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে জগতের অতিবর্তী বলে ঘোষণা করে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ঈশ্বরের ধারণা সম্পর্কিত মতবাদ হিসেবে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ সন্তোষ জনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তারপরও বলা যায়, এ মতবাদ দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে।
Leave a comment