অটিজম হলো এক ধরনের রোগ যা শিশুদের স্নায়ুবিক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে।অটিজম কি
– অটিজমের কারণ – অটিজমের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।অটিজম কি –
অটিজমের কারণ সম্পর্কে যদি না জানি তাহলে সঠিক ভাবে অটিজমের চিকিৎসা করানো সম্ভব
নয়।
২ রা এপ্রিল জাতীয় অটিজম দিবস বাংলাদেশ পালন করা হয়। অটিজমের উপসর্গ,
অটিজমের লক্ষণ, অটিজম রোগ নির্ণয়,অটিজম রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা,পারিবারিক ও
সামাজিক সচেতনতা,অটিজমের প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পর্কে নিজে আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচিপত্রঃ অটিজম কি – অটিজমের কারণ – অটিজমের চিকিৎসা
অটিজম কি
অটিজম হলো এক ধরনের রোগ যা শিশুদের স্নায়ুবিক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে।অটিজম
মূলত স্প্রেক টার্ম ডিজঅর্ডার শ্রেণীর একটি রোগ এবং এতে শিশুদের স্নায়বিক
বিকাশ ঘটতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। অটিজমী আক্রান্ত শিশুরা সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন
করতে পারেনা, তবে এই রোগের লক্ষণ জন্মের সময় সনাক্ত করা যায় না। এই লক্ষণ গুলো
ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। অটিজম বা আত্মসংবৃতি বলতে মূলত মানসিক বাধাগ্রস্থ তাকে
বোঝায়।
ইংরেজিতে একে অটিজম (Autism) বলা হয়। এই রোগ তিন ৩ বছর থেকে ৭ বছর পর্যন্ত
যেকোনো শিশুর হতে পারে। ছোটবেলাতে যেসব বাচ্চারা বেশি চঞ্চল থাকে তাদের অটিজম
হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়।অটিজম এ আক্রান্ত শিশুরা পারস্পারিক যোগাযোগের
ক্ষেত্রে কম সমৃদ্ধ হয় এবং সামাজিক আচরণেও দুর্বল হয়।
আরো পড়ুনঃ হিট স্ট্রোক কাকে বলে – হিট স্ট্রোক কেন হয় জেনে নিন
এটি মস্তিষ্কের এমন এক ধরনের রোগ যা একজন শিশু বা ব্যক্তির অন্যদের সাথে কথা বলার
ক্ষমতাকেই বেশি প্রভাবিত করে। অটিজম হলো এ এস ডি ধরনের রোগ যা শৈশবে শুরু
হয় এবং বড় হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অটিজমকে অনেকেই মানসিক রোগ বলে থাকেন,
কিন্তু এটি স্নায়বিক বিকাশ জনিত সমস্যা।
অটিজমের কারণ
অটিজম রোগের সঠিক কারণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। যদিও এটি শিশুদের স্নায়ুর
বিকাশ জনিত সমস্যা। কিছু কিছু বিষয়কে অটিজমের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
যেমন –
- গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা করা।
- পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।
- বংশের কারো অটিজমের সমস্যা থাকা।
- অতিমাত্রায় ঔষধ সেবন করা।
- গর্ভকালীন সংক্রমণ যেমন – কলেরা,মাম্পস,মিসেলস ইত্যাদি হওয়া।
- মায়ের ধূমপানের অভ্যাস থাকা।
- পিতা মাতার বয়স বেশি হওয়া।
- চরম অকালতা।
- জন্মের সময় অসুবিধা হওয়া।
- গর্ভাবস্থায় উচ্চমাত্রায় কীটনাশক ও বায়ু দূষণের মধ্যে বসবাস করা।
- গর্ভাবস্থায় মায়ের সাথে পরিবারের ঘাটতি বা ভালো সম্পর্ক না রাখা।
- গ্যাস্টো ইন্টেস্টাইনালজনিত সমস্যা।
- বিষন্নতা।
- দুশ্চিন্তা।
- মনোযোগের ঘাটতি।
- অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস অর্ডার।
- বায়োপোলার ডিস অর্ডার।
- হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিস অর্ডার।
- জন্মের সময় বাচ্চার ওজন কম থাকা।
- গর্ভাবস্থায় কোন অতিরিক্ত বায়ু দূষণে থাকা।
- মা ও শিশুর অপুষ্টি জনিত সমস্যা।
- টিকা নেয়ার সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
অটিজমের ধরন
এসপারজার সিনড্রোম
এসপারজার সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুদের হালকা উপসর্গ থাকে এদের মধ্যেও অস্বাভাবিক
আচরণ লক্ষ্য করা যায় এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও দেখা দেয়। এই রোগে আক্রান্ত
হলে শিশুদের ভাষাগত সমস্যা বা বুদ্ধি ভিত্তিক অক্ষমতা থাকে না।
পার্ভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিজ অর্ডার (ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি সংক্রান্ত রোগ
অন্যভাবে চিহ্নিত করা যায় না পি ডি এন ও এস)
এই ধরনের সমস্যা থাকলে এটি পিক্যাল অটিজম বলা হয়। যেসব শিশুদের এসপারজার
সিনড্রোম অটিস্টিক ডিজ অর্ডার কিছু উপসর্গ দেখা যায় কিন্তু সব উপসর্গ দেখা
যায় না। সাধারণত তাদের পিডিডি এন ওসি হিসাবে রোগ নির্ণয় করা হতে পারে। পিডিডি এ
আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ হালকা থাকে কিন্তু অটিস্টিক ডিজ অর্ডার গভীরভাবে লক্ষ্য
করা যায়।এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা সামাজিক ভাষা ও বিনিময় সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা
সৃষ্টি করতে পারে।
অটিস্টিক ডিজ অর্ডার
অটিজম ডিজ অর্ডার হল একটি অটিজমের সাধারণ ধরন। একে আবার ক্লাসিক অটিজম নামেও
অভিহিত করা হয়। যারা অটিস্টিক ডিজ অর্ডারে আক্রান্ত তাদের ভাষাগত সমস্যা বেশি
পরিলক্ষিত হয়। এদের মধ্যে স্বাভাবিক আচরণ থাকলেও ভাষাগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা
দেখা যায়।
অটিজমের উপসর্গ
- একজন শিশু অটিজম বা এ এস ডি তিন ৩ বছর বয়স বা তার আগেও শুরু হতে পারে এবং
স্থায়ী হয় প্রায় শেষ জীবন পর্যন্ত। - ৬ মাস বা আরো বেশি বয়সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেকোনো আবেগ প্রকাশ করতে পারেনা।
- কয়েক মাসের মধ্যেই অটিজমের সমস্যার ইঙ্গিত বুঝা যেতে পারে।
- ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা না বলা এবং সেই সাথে ইশারা বা হাত বাড়িয়ে
কিছু ধরতে না চাওয়া। - কখনো কখনো ২৪ মাস বা দুই বছর পরেও এই রোগের লক্ষণ বোঝা যেতে পারে।
- বারবার একই শব্দ বা বাক্য বলা।
- কখনো কখনো ১৪ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এরপরে তার নতুন
কোন দক্ষতা অর্জন বন্ধ করে দেয়। পূর্বে শিশু যে সকল কিছু শিখেছিল তাও হারিয়ে
ফেলে। - কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না।
- গলার স্বর শারীরিক ভাষা বা কোন কথার মানে বোঝাতে বুঝতে না পারা।
- নিজের চাহিদা বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ করতে না পারা।
- বধিরতা বা কানে শুনতে না পাওয়া।
- ভাষা শিখতে না পারা।
- কথা বলার সময় ইশারা ইঙ্গিতের সাহায্য নেওয়া।
অটিজম রোগের লক্ষণ
- অটিজম রোগে আক্রান্ত শিশুরা দেখা শোনা শব্দ গন্ধ ৭ আলো বা স্পর্শের প্রতি অনেক
সংবেদনশীল বা প্রতিক্রিয়া হীন হয় - অটিজম আক্রান্ত শিশুর প্রধান সমস্যা হলো ভাষা, তাই এই রোগে আক্রান্তদের শুরুতেই
ভাষা আয়ত্ত করতে সমস্যা হয়। যেমন এক বছর বয়সের মধ্যে মা মা বাবা বুবু চাচা,
কাকা দাদা ইত্যাদি উচ্চারণ করতে না পারা। - ১২ মাস বয়সেও তার নাম ধরে ডাকলে প্রতিক্রিয়া না করা
- দেড় বছর বা ১৮ মাস বয়সেও খেলাধুলা করতে না পারা
- অনেক শিশুর অল্প মাত্রায় হলেও বুদ্ধি ভিত্তিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়া সেই
সাথে কারো সাথে শারীরিক বৃদ্ধির ঘাটতি দেখা দেওয়া - অনেক শিশুর অল্প মাত্রায় হলেও বুদ্ধি ভিত্তিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়া সেই
সাথে কারো মাঝে শারীরিক বৃদ্ধির ঘাটতি দেখা দেওয়া - শিশু দুই বছরের মধ্যে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দ দিয়ে কথা বলতে না পারা কিছু কিছু
শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলতে জড়তা সৃষ্টি হওয়া কোন কোন শিশু কথা বলতে শুরু করলেও
পরে আস্তে আস্তে ভুলে যাওয়া - এই শিশুরা সাধারণত অন্যের চোখের দিকে সোজাসুজি তাকানো এড়িয়ে যায় এবং একা
থাকতে পছন্দ করে - এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা অন্য মানুষের অনুভূতি বুঝতে বা তাদের নিজস্ব অনুভূতি
নিয়ে কথা বলতে অসুবিধা অনুভব করে - শিশু চোখে চোখ রাখতে না পারা নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া হঠাৎ করে উত্তেজিত
হয়ে ওঠা শিশুর মানসিক অস্থিরতা বেশি থাকা সেই সাথে বিষন্নতা উদ্বিগ্নতা ও
মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেওয়া - অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা দেখাশোনা শব্দ গন্ধ সাত আলো বা স্পর্শের প্রতি অনেক
সংবেদন বা প্রতিক্রিয়া হীন হয় - এই শিশুরা দেরি করে কথা বলা এবং ভাষা ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে পারে
- শব্দ বা ছোট ছোট বাক্য বারবার বলতে থাকে
- অন্যান্য সমবয়সী শিশুর সাথে মিশতে সমস্যা হয় এবং বড়দের সাথেও মিশতে না পারা
কারো আদর নিতে বা আদর দিতে না পারে এমনকি কারো প্রতি আগ্রহ না থাকা এবং পরিবেশ
অনুযায়ী মুখ ভেঙ্গে পরিবর্তন করতে না পারা - কোন ছোটখাটো পরিবর্তন পছন্দ না করা
- কিছু বদ্ধমূল আগ্রহ থাকা
- সব সময় একা একা থাকার চেষ্টা করা
- ঘরের একটা নির্দিষ্ট স্থানে নিজের মতো থাকার চেষ্টা করা
- আক্রান্ত শিশু পছন্দের বা আনন্দের কোন কিছুকে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে না
পারা - কিছু কিছু সময় তারা তাদের দুই হাতে সাপোর্ট মারতে থাকে তাদের শরীর দোলাতে থাকে
আবার চক্রাকার ঘুরাতেও থাকে - অন্যের থেকে শোনা কথা বারবার বলতে থাকা এবং বারবার একই আচরণ করা
- কিছু শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, চেহারা বা অনুভবের সঙ্গে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া
ব্যক্ত করা - একটি নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করা রুটিনের কোন পরিবর্তন সহ্য করতে না পারা
অটিজম রোগ নির্ণয়
অটিজম বা এ এস ডি নির্ণয় করা কঠিন কারণ এখনো কোন ডাক্তার এখন ও সঠিকভাবে এই রোগ
নির্ণয় করতে পারেননি। চিকিৎসক গন শিশুদের আচরণ এবং বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে
এই রোগ নির্ণয় করে থাকেন। এই রোগ সাধারণত তিন ৩ বছর বয়স থেকে সাত ৭ বছর বা তার
চেয়ে বেশি বয়সে হতে পারে। তবে তিন ৩ বছর থেকে ৭ বছরের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
আবার অনেক সময় ১২ মাস বয়স থেকে ১৮ মাস বয়সেও এই রোগ লক্ষ্য করা যায় বা
চিহ্নিত করা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ১৮ মাস থেকে ২৪ মাস বা তার বেশি সময়
তারপরেও এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। শিশুরা তাদের স্বাভাবিক অনুভূতি হারিয়ে
ফেলে এবং পূর্বে সে যা কিছু শিখেছিল সবকিছু ভুলে যায়।
তবে তিন ৩ বছর থেকে ৭ বছর বয়সী শিশুদের একটি শ্রবণযোগ্য মূল্যায়ন এবং অটিজমের
জন্য একটি বাছাই পরীক্ষা করা যেতে পারে। শিশুদের জন্য অটিজমের চেক লিস্ট তৈরি করে
এটা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
অটিজম রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা
- শিশুদের শেখার ক্ষমতা, ভাষা, জ্ঞান, কথা বলার ক্ষমতা ইত্যাদি পরীক্ষা করা।
- ক্রোমোজোম বা জিনগত ( DNA) সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য জিনের পরীক্ষা।
- গিলিয়াম অটিজম রেটিং স্কেল।(GARS)
- পার্ভেসিভ ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার স্ক্রিনিং টেস্ট।(PDDST).
- চাইল্ডহুড অটিসম রেটিং স্কেল (CARS)
- অটিজম ডায়াগনস্টিক অবজারভেশন শিডিউল (ADOS)
- অটিজম ডায়াগনস্টিক ইন্টারভিউ রিভাইসড (ADI-R).
- নিউরো লজিক্যাল টেস্ট (Neurological Test)
অটিজমের চিকিৎসা
অটিজম একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। তবে দুঃখের বিষয় হলেও একথা চরম সত্য যে, অটিজম রোগ
পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে অটিজম রোগ সম্পর্কে মানুষের ধারণা ও
খুব কম যার কারণে শুরুতেই শিশুদের এই রোগ নির্ণয় করতে পারে না। গবেষকদের মতে,
অটিজম কোন রোগ নয়। এটি শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যা। কোন রকম ঔষধ দিয়ে
অটিজম শিশুকে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে অটজমের প্রথম চিকিৎসা হলো যত দ্রুত
সম্ভব রোগ শনাক্ত করা।
রোগ সঠিক সময়ে শনাক্ত করা সম্ভব হলে সঠিক টেস্ট, চিকিৎসা থেরাপি এবং কাউন্সিলিং
এর মাধ্যমে শিশুদের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ স্বাভাবিক জীবন বা আচরণগত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে
আনা সম্ভব। যদিও অটিজম শিশুকে সামাজিক ও যোগাযোগ সম্পর্ক তৈরি করতে বাধা সৃষ্টি
করে তবুও বর্তমানে দেশের অনেক শিশুই অটিস্টিক হওয়া সত্বেও স্বাভাবিক জীবনে
মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তবে যত কম বয়সে এই রোগ শনাক্ত করা সম্ভব, তত তাড়াতাড়ি
চিকিৎসা করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ নাক ডাকার কারণ কি এবং এর সমাধান জেনে নিন
আর যদি দ্রুত চিকিৎসা করা যায় তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে
সবার আগে অটিজম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং শিশুর চিকিৎসা শুরু করতে
হবে। এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন নিউরোজেন।
আমাদের দেশে আছে অনেক ভালো কাউন্সিলর, জেনেটিক্স এক্সপার্ট এবং থেরাপিস্ট। এদের
মাধ্যমে আপনি চিকিৎসা নিতে পারেন।
এছাড়াও অটিজমের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পরিচর্যা, প্রশিক্ষণ শিক্ষা এবং বিশেষ কিছু
ঔষধ সেবন করাতে পারেন। আমাদের দেশে শিশুদের অটিজমের যে লক্ষণ গুলো রয়েছে, যেমন –
আচরণজনিত সমস্যা, নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা, অতি চঞ্চলতা, অস্থিরতা, খিটখিটে
মেজাজ, খিচুনি ইত্যাদির। আমাদের দেশে আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সকল দেশের সীমিত আকারে
ওষুধ প্রদান করা হয়।
আর এইসব ঔষধ সেবন করলে শিশুরা উপকৃত হবে। সঠিক জ্ঞান লাভ করা সহ শিশুকে সময়
দেওয়া প্রয়োজন। যেসব শিশুরা অটিজমে আক্রান্ত তাদের বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে
হবে। আর এই শিক্ষায় পারে অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে স্বাধীনভাবে চলার উপযোগী
করে গড়ে তুলতে। সার্বিক সচেতনতাই পারে সঠিকভাবে এবং নিয়মিত সামাজিক সম্পর্ক
গড়ে তুলতে, ঠিকমতো কথা বলতে, স্বাধীনভাবে চলতে তাই অটিজমী আক্রান্ত শিশুদের
প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা
অটিজম সম্পর্কে আমাদের দেশের লোকজন খুব বেশি সচেতন নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে
সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগে অটিজম নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করা হলে
আক্রান্ত শিশুরা অবহেলিত। বিশেষ করে তাদের পরিবারের লোকজনে তাদের মেনে নিতে
পারেনা। একমাত্র সচেতনতাই পারে একজন শিশুর সমস্যা সঠিক সময়ে শনাক্ত করতে
এবং সঠিক সময়ে শনাক্ত করা সম্ভব হলে শিশুর পরিচর্যা ও সেবা নিশ্চিত করা
সম্ভব।
অটিজম নিয়ে সমাজে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা
এখনো অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের পাপের ফল বলে মনে করে থাকে। আর এই সব অবহেলার কারণে
শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ উপযুক্ত সময়ে পরিচর্যা করা সম্ভব হলে শিশুদের
ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে প্রতিটি অটিজমে
আক্রান্ত শিশুর জরিপ করা উচিত।
এবং পাঠ্য পুস্তকের আওতাভুক্ত করা উচিত যাতে করে প্রতিটি শিশুই আটিস্টিক শিশুদের
সম্পর্কে জানতে পারে এবং সচেতন হতে পারে। আক্রান্ত শিশুকে তাদের সহপাঠী হিসেবে
মেনে নিতে পারে। আমাদের দেশে এখনো এমন অনেক লোক আছে যারা আর্থিকভাবে অনেক সচ্ছল
কিন্তু অটিস্টিক আক্রান্ত শিশুদের অবহেলা করে, তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা করায় না।
তাই আমাদের উচিত সবার আগে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
অটিজমের প্রতিপাদ্য বিষয়
প্রতিবছর ২ এপ্রিল আমাদের দেশে অটিজম দিবস পালন করা হয়। ২০২২ সালে অটিজমের
মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “অটিজম; কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি”। আর ২০২৩ সালের
প্রতিপাদ্য হলো “এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত
করি”।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার
নিরালস প্রচেষ্টায় দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি
করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০০৭ সালে তিনি এই অটিজম নিয়ে দেশে কাজ শুরু করলে ও
বর্তমানে তার অবদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছেন।
অটিস্টিক শিশুর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
পারিবারিকভাবে একজন অটিস্টিক শিশুর যত্ন নেওয়া অনেক কঠিন কাজ। তাই মা-বাবা সহ
পরিবারের লোকজন অনেক হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে আর
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে ভূমিকা রাখতে পারে সে হলো শিশুর “মা”। একজন অটিস্টিক
আক্রান্ত শিশুর মাকে মনে করতে হবে “অটিজম থাকা সত্ত্বেও আমার সন্তান একটি
স্বাভাবিক সন্তান বা শিশু”।
আরো পড়ুনঃ
ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা জেনে নিন
সরকারি আইন থাকা সত্বেও এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা অটিস্টিকে
আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিতে চান না।কিন্তু মনে রাখবেন আপনার, আমার এবং আমাদের
সহযোগিতায় পারে একজন শিশুকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যময় জীবন গড়ে দিতে। আমাদের মনে
রাখতে হবে, অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা আমাদের বোঝা নয়, এরা আমাদের দেশের সম্পদ হয়ে
উঠতে সক্ষম।
অটিস্টিক শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে করণীয়
অ্যাপ্লাইড বিহেভিয়ার এনালাইসিস
এই পদ্ধতিতে শিশুকে আলাদা আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাকে নিয়মমাফিক কাজ
করা শেখানো হয়। একটা বড় কাজকে ছোট ছোট কাজে ভেঙে সময়মতো সেই কাজ করানো শেখানো
হয় ঠিকমতো কাজ করলে পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে বাচ্চাকে কাজ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়
এবং তার উন্নতির হিসেব রাখা হয়। এই পদ্ধতি বিভিন্ন রকমেরই হতে পারে। যেমন –
পিকচার এক্সে চেঞ্জ কমিউনিকেশন সিস্টেম
পিকচার এক্সে চেঞ্জ কমিউনিকেশন সিস্টেম হল একটি ছবি দেখে কথা বলা শেখানোর পদ্ধতি।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্যারেন্টাল প্রোগ্রামের সাহায্যে বাচ্চার বাবা-মাকে
এই রোগের ব্যাপারে সঠিক তথ্য প্রদান এবং বাঁচার যত্ন নেওয়া শেখানো হয়।
স্পিক থেরাপি
শিশুকে কথা বলা শিখাতে এই স্পিক থেরাপি থেরাপি সাহায্য করে থাকে।
মিউজিক থেরাপি
বাদ্যযন্ত্র শেখানো, গান গাওয়া, সংগীত রচনার মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের এই
পদ্ধতির মাধ্যমে শারীরিক উন্নতি করা হয়।
আকুপেশনাল থেরাপি
এই থেরাপি অনুসরণ করে গোসল করা, খাবার খাওয়া, পোশাক পরা প্রভৃতি কাজ শেখানো
হয়।
সেন্সর মাইগ্রেশন থেরাপি
যেসব শিশুরা বিশেষ স্পর্শে বা শব্দে ভয় পায় তারা এই সেন্সর মাইগ্রেশন থেরাপি
চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
ডেভেলপমেন্টাল ইন্ডিভিজুয়াল ডিফারেন্সস রিলেশনশিপ বেজড
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের আবেগ – অনুভূতি কম হয়। তাই আবেগ ও যুক্তির উন্নতি ঘটানো
এবং দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ ক্ষমতা এবং গন্ধ বোঝার ক্ষমতার উন্নতির উদ্দেশ্যে এই
পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়।
ডিস ক্রিট ট্রায়াল ট্রেনিং
এক্ষেত্রে অটিজমী আক্রান্ত শিশুদের একটা বড় কাজকে ছোট ছোট কাজে ভেঙে নিয়ে সময়
মতো সেই কাজ করতে উৎসাহ দিতে হবে এবং সঠিকভাবে তা শেষ করতে পারলে তাদের পুরস্কার
দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আর্লি ইন্টেন্সিভ বিহেভিওরাল ইন্টারভেশন
আর্লি ইন্টেন্সিভ বিহেভিওরাল ইন্টারভেশন নামক এই পদ্ধতিটি পাঁচ বছরের কম
বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
ট্রিটমেন্ট এন্ড এডুকেশন অফ অটিস্টিক এন্ড রিলেটেড কমিউনিকেশন হেন্ডি ক্যাবড
চিলড্রেন মেথড
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে শিশুকে স্বাবলম্বী হতে শেখানোর জন্য তাদের মধ্যে উপস্থিত
প্রতিভা ও গুণাবলী নিয়ে উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং তাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা
করানো হয়। পাশাপাশি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে শিশুকে দৈনিক জীবনযাত্রা ও পথচলা ও
শেখানো হয়।
এছাড়াও আরো অনেক থেরাপি অনুসরণ করা যেতে পারে যেগুলো শুধুমাত্র উপসর্গ
নিয়ন্ত্রণের জন্য যা শিশুর ওপর নির্ভর করে আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে চিকিৎসক
এবং অভিভাবক একসাথে স্থির করে নিতে হবে যে কোন পদ্ধতির শিশুর জন্য সবচেয়ে উপকারী
বা উপযোগী।
পিভো টাল রেসপন্স ট্রেনিং
পিভো টাল রেসপন্স ট্রেনিং এর মাধ্যমে শিশুকে নতুন জিনিস শিখতে উৎসাহ দেওয়া এবং
শিশুকে নিজে থেকে তার চলাচল কে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখানো হয়।
জাতীয় অটিজম দিবস বাংলাদেশ
প্রতিবছর ২রা এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় অটিজম দিবস পালন করে থাকে। বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার অক্লান্ত
প্রচেষ্টায় দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে
সক্ষম হয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তিনি এই অটিজম নিয়ে দেশে কাজ শুরু
করেন।
এবং বর্তমানে তার অবদানের জন্য তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ
করেছেন। জাতীয় অটিজম দিবসে বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে পালন করা
হয়। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের নিজ নিজ বক্তব্য প্রদান করে থাকেন।
শেষ কথা
অটিজম একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। দুঃখের বিষয় হলেও একথা চরম সত্য যে অটিজম রোগ
পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে গবেষকদের মতে অটিজম কোন রোগ নয়। এটি
শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত সমস্যা এবং কোনরকম ঔষধ দিয়ে এই সমস্যা সারিয়ে
তোলা সম্ভব নয়। অটিজম থেকে রক্ষা পেতে হলে সচেতনতামূলক জীবন যাপন করতে হবে।
একমাত্র সচেতনতাই পারে অটিজম থেকে রক্ষা করতে।
আমি অটিজম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই
পোস্টটি আপনারা মনোযোগের সাথে পড়লে অনেক উপকৃত হবেন। আর যদি উপকৃত হয়ে থাকেন
তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্টস করবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
Leave a comment