রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকের প্রথম অঙ্ক থেকে গৃহীত প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি করেছে পঞ্চক।
অচলায়তন ছিল মন্ত্রশাসিত। পুথিনির্ভর আচরণবিধিকে সেখানে অভ্রান্ত বলে মনে করা হত। কুলদত্তের ক্রিয়াসংগ্রহ, ভরদ্বাজ মিশ্রের প্রয়ােগপ্রজ্ঞপ্তি আর জ্বলনানন্তের আধিকর্মিক বর্ষায়ণের মধ্য দিয়েই মুক্তির পথ খুঁজেছিলেন মহাপক, উপাচার্য, উপাধ্যায়রা। অমিতায়ুর্ধারণী, বজ্রবিদারণ, মহাশীতবতী ইত্যাদি অসংখ্য মন্ত্র, ব্রত আর প্রায়শ্চিত্তের অনুশাসনে জীবনকে দেখতে অভ্যস্ত মহাপকরা শাস্ত্রনির্দেশের বাইরে সমস্ত কিছুকে অপরাধ বলে গণ্য করত। তাই পঞ্চকের গানকে মতিভ্রম বলে মনে হয় মহাপঞকের। অন্যদিকে, অচলায়তনে থেকেও পঞ্চক ছিল মুক্তজীবনের সন্ধানী। সে নিজে নিয়ম ভেঙে মহাময়ূরী দেবীর পুজোর দিন কাঁসার থালায় ইঁদুরের গর্তের মাটি রেখে, তার ওপর পাঁচটা শেয়ালকাঁটার পাতা ও তিনটে মাযকলাই সাজিয়ে সাপের কামড়ের অপেক্ষায় থেকেছে। গুরুকে অভ্যর্থনা জানানাের জন্য পুথিপত্রও সব ফেলে দিয়েছে। পঞ্চক চেয়েছে অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে যাক, বাইরের আলাে বাতাসের প্রবেশ ঘটুক সেখানে। তাই তার গলায় শােনা গেছে মুক্তির গান। সে গানে রয়েছে গুরুর আহ্বান। পঞ্চক চেয়েছে বদ্ধ অচলায়তনে গানের মধ্য দিয়ে প্রাণের বার্তা ছড়িয়ে দিতে। তাই সে বলেছে—“এই বােবা পাথরগুলাে থেকে সুর বেরােবে।” মন্ত্র ঘুচে গান কথাটি তাই কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতার অবসানে প্রাণের প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত বহন করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি অচলায়তনের উপাচার্য, আচার্যকে উদ্দেশ করে বলেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকে দেখা যায়, অচলায়তনে কঠোরভাবে যে শাস্ত্রীয় নিয়ম আরােপ করা হয়েছিল, উপাচার্য ছিলেন তার একনিষ্ঠ সমর্থক। তাই উপাচার্য মনে করেছিলেন যে অচলায়তনে সমস্ত নিয়ম কঠোরভাবে ‘নিঃশেষে পালন করা হয়েছে বলেই গুরু আসছেন। অন্য কোনাে আয়তনে যা সম্ভবপর হয়নি সেই বজ্রশুদ্ধিব্রত অচলায়তনে সাতাত্তর বার পালন করা হয়েছে। সব কিছু “অহােরাত্র একেবারে নিয়মে বাঁধা।” ফলে, নিয়মতন্ত্রের প্রতি অনুগত উপাচার্যের মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি সর্বদা বিরাজ করেছে। অচলায়তনের আচরণ-নির্ভর শাস্ত্রসর্বস্ব জীবনসাধনা কেবল আনুগত্যকে গুরুত্ব দেয়, প্রশ্নকে নয়। ফলে আচার্য-কথিত একধরনের ‘নিশ্চল শান্তি’ সেখানে সবার মধ্যেই বিরাজ করে। নিজেদের আচরণকে তারা অভ্রান্ত এবং চূড়ান্ত বলেই মনে করেন। এর অন্যথা ঘটলেই তাদের মধ্যে আলােড়ন দেখা দেয়। কিন্তু নিজেদের মন থেকে কোনাে জিজ্ঞাসা বা উদ্যোগ তাদের দেখা যায় না। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই উপাচার্য সূতসােম মনে করেছিলেন যে, তাদের সমস্ত লাভ সমাপ্ত, সমস্ত সঞ্চয় পর্যাপ্ত। গুরুর আগমনের হেতু উল্লেখ প্রসঙ্গে কথােপকথনের মধ্যে এই কথাটি বলা হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকে অচলায়তনের আচার্যকে উদ্দেশ করে উপাচার্যের এই মন্তব্যটি একেবারেই সমর্থনযােগ্য নয়। উপাচার্যের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা অস্বচ্ছ এবং আচ্ছন্ন। পুথিসর্বস্ব শাস্ত্রনির্ভর যে জীবনসাধনা, সেখানে জীবন বা ধর্ম হারিয়ে যায়, সংস্কার এবং আচরণই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সংযােগহীন এই জীবনচর্যার মধ্যে আত্মতৃপ্তি থাকতে পারে, কিন্তু নিজেকে মেলে ধরা নেই। সংকীর্ণ এই শাস্ত্রসর্বস্বতা জন্ম দেয় জীবনবিমুখতার। সেখানে মানুষের সকল কাজকর্মের মূল্যায়নে শাস্ত্রই হয় একমাত্র মাপকাঠি। চেতনার অন্ধত্ব গ্রাস করে প্রতিটি আচরণকে। তাই দরজা-জানলা বন্ধ রেখে ‘অটল স্তব্ধতা তৈরি করা হয়। উত্তর দিকের জানলা খােলায় সুভদ্রের কিশােরসুলভ কৌতুহলকে গুরুত্ব না দিয়ে একজটা দেবীর কাল্পনিক অভিশাপকে মেনে নিয়ে সুভদ্রকে মহাতামসে পাঠানাে হয়। শাস্ত্রীয় নির্দেশের বাধ্যবাধকতা যে কাঠিন্য এবং হৃদয়হীনতাকে নিশ্চিত করে, তা কোনােভাবেই সমর্থনযােগ্য হতে পারে না।
একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হবে প্রাণােচ্ছল। জীবনের সহজ আনন্দ নিয়েই তারা বেড়ে উঠবে, কিন্তু অচলায়তনে সেই প্রাণের ধর্ম বজায় ছিল না। তাই উপাচার্য যেটাকে লাভ বলছেন, সেটা আসলে ক্ষতি। যাকে সঞ্চয় বলছেন তা কুবেরের সঞ্চয়, লক্ষ্মীর নয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে উদ্ধৃত সংলাপের বক্তা হলেন আচার্য অদীনপুণ্য।
সুভদ্রের মর্ম নিঙড়ানাে চোখের জলের প্রসঙ্গে পঞ্চককে উদ্দেশ্য করে বক্তা একথা বলেছেন।
গুরু মুক্তিসাধনার জন্য যে আয়তনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাকে সংস্কারশাসিত অচলায়তনে পরিণত করার অন্যতম হােতা স্বয়ং আচার্য। শাস্ত্রনির্ভর জীবনবিমুখ ধর্মাদর্শের প্রতিষ্ঠা ও তার অনুবর্তনে অদীনপুণ্য ছিলেন উপাধ্যায় বা মহাপঞকের মতাে একনিষ্ঠ। অমিতায়ুধারণী মন্ত্র, বজ্রশুদ্ধিব্রত, অষ্টাঙ্গশুদ্ধি উপবাস যেমন সেখানে ছিল, তেমনি ছিল মহাতামস ব্রতের মতাে এক মৃত্যুশীতল করুণ ব্রতও। বালক সুভদ্রের আয়তনের উত্তরের জানালা খােলার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত তাকে দিয়ে মহাতামস ব্রত করানাে, কিন্তু আচার্য চান এই প্রাণঘাতী আচার থেকে তাকে নিবৃত্ত করতে। তাঁর এই চেষ্টা সুকোমল চিত্তবৃত্তির পরিচায়ক। সুভদ্রের প্রতি এই মানবিক সংবেদনশীলতা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক। কিন্তু অচলায়তনের একজন আচার্য হিসেবে দেখলে এ তাঁর নিজেকে নতুন করে চেনবার চেষ্টা। সুভদ্রের উদগত কান্নাকে বুকের মধ্যে করে তিনি আয়তন ছেড়েছেন, আশ্রয় নিয়েছেন দীনহীন দর্ভক পল্লীতে। যে মন্ত্রের শাসনকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা এক ছােট্ট শিশুর মনকে কীভাবে চেপে বসেছে তাই দেখে তিনি শিউরে উঠেছেন। মন্ত্রতন্ত্রের প্রাণরােধকারী বজ্রমুষ্টি আর অভ্যাসের নিরলস চক্রাবর্তন থেকে তিনি তাই বেরিয়ে এসেছেন উদার মানবিকতার আলােকময় পথে।
ছােটোগল্প হিসেবে ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পের সার্থকতা আলােচনা করাে।
“পড়ে থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে তারা কেমন হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল” -কারা ‘চুপচাপ’ দাঁড়িয়ে রইল? পড়ে থাকা শরীরটার’ বিবরণ তােমার নিজের ভাষায় লেখাে।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির মূল উৎস ও আঙ্গিক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির কাব্যশৈলী বিচার করাে।
শিক্ষার সার্কাস কবিতাটির মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবির যে মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখাে।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবি শিক্ষাকে কেন সার্কাস- এর সঙ্গে তুলনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতার নামকরণ কতটা সার্থক?
“যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়, আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব।” -সব শ্রেণি শেষ হয়ে পরের শ্রেণিতে যাওয়া বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
“সব শিক্ষা একটি সার্কাস”—মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা!” -‘ধোঁকা’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কবির কোন মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
শিক্ষা আর সার্কাস কতখানি তুল্যমূল্য—আলােচনা করাে।
“জ্ঞান কোথায় গেল”—জ্ঞানের অভাব কবিতায় কীভাবে ধ্বনিত হয়েছে?
‘গুরু’ নাটকের পঞ্চক চরিত্রটির মধ্যে কতখানি প্রথা বিরােধিতা ধরা পড়েছে তা আলােচনা করাে।
‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক কীভাবে যুক্তিবাদী মনােভাবের পরিচয় দিয়েছে?
গুরু নাটকে পঞ্চকের সহানুভূতিশীলতার পরিচয় দাও।
‘গুরু’ নাটকের মহাপক চরিত্রটি আলােচনা করাে।
‘গুরু’ নাটকে গুরুর যে স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখাে।
‘গুরু’ নাটকের সুভদ্র চরিত্রটি বিশ্লেষণ করাে।
‘গুরু’ নাটকে শূনকদের ভূমিকা আলােচনা করাে।
‘গুরু’ নাটকে দর্ভকদের ভূমিকা আলােচনা করা।
‘গুরু’ নাটকে মােট কটি সংগীত রয়েছে? নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলােচনা করাে।
রূপক নাটক হিসেবে ‘গুরু’-র সার্থকতা আলােচনা করাে।
গুরু নাটকে যে নাট্যদ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
গুরু নাটকে সংলাপ রচনায় নাট্যকারের সার্থকতা আলােচনা করাে
Leave a comment